ইস্তাম্বুলের ফাইনালের হট ফেভারিট ম্যানচেস্টার সিটি। ধারেভারে সব দিক থেকেই এগিয়ে ইংলিশ এ ক্লাবটি। তবে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলো পেপ গার্দিওলার দলকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ইতিহাস।

আজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে আরাধ্য সেই রুপালি ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরতে পারবে সিটি? পারবে কী ঐতিহাসিক ট্রেবল জিততে? নাকি ইতালিয়ান জায়ান্টরা সিটির হৃদয় ভেঙে দিয়ে উল্লাসে মাতবে!

২০০৮ সালে আবুধাবি গ্রুপ মালিকানা নেওয়ার পর থেকে এই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করছে ম্যানসিটি। এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফির জন্য গত ১৫ বছর ধরে অকাতরে অর্থ খরচ করেছে সিটি। এতদিনের বিনিয়োগের ফসল তোলার দিন আজ।

মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের আবুধাবি গ্রুপ দায়িত্ব নেওয়ার পর ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্লাবে পরিণত হয়েছে সিটি। গত ১২ বছরে ৭টি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছে তারা। এর মধ্যে এ মৌসুমে তিন রাউন্ড হাতে রেখেই হ্যাটট্রিক শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেন ব্রুইনা-হালান্ডরা।

সপ্তাহখানেক আগে ঐতিহ্যবাহী এফএ কাপও জেতেন তাঁরা। ম্যানসিটি যে কেবল শিরোপাই জিতেছে, তা কিন্তু নয়। রাজস্ব আয় করার ক্ষেত্রেও বিশ্বের অন্যতম সেরা তারা। এবার দুই শিরোপা জেতার পরই খবর আসে, মৌসুমে ৭৩১ মিলিয়ন ইউরো আয় করেছে তারা। সেই ক্লাব এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ট্রেবলের কীর্তিতে ভাগ বসাতে যাচ্ছে। ১৯৯৯ সালে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের দল এই কীর্তি গড়েছিল।

২০২১ সালেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছিল সিটি। চেলসির বিপক্ষে ওই ফাইনালেও ফেভারিট ছিল তারা। কিন্তু গার্দিওলার ভুল কৌশলের খেসারত দিতে হয়েছিল তাদের। গত বছর সেমিতে অবিশ্বাস্যভাবে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছিল। এবারও সেমিতে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল রিয়াল, কিন্তু দাঁড়াতেই পারেনি স্প্যানিশ জায়ান্টরা।

সিটির এই পরিবর্তনের মূল কারণ আর্লিং হালান্ডের যোগ দেওয়া। নরওয়ের এই স্ট্রাইকার যোগ দেওয়ার পর গার্দিওলার দল অন্য উচ্চতায় চলে গেছে। বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে যোগ দিয়ে প্রথম মৌসুমেই সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৫২ গোল করেছেন হালান্ড।

আর সিটি তুরস্কে পা রেখেছে সর্বশেষ ২৭ ম্যাচের মাত্র একটিতে পরাজিত হয়ে। ব্রেন্টফোর্ডের কাছে ১-০ গোলের ওই হার ছিল প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে, লিগ শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ওই ম্যাচের গুরুত্ব ছিল না। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এ মৌসুমে হারেনি সিটি।

শনিবারের ফাইনালেও হারবেন না বলে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন কেভিন ডি ব্রুইনা, ‘আমি এখানে আছি আট বছর। অনেক কিছু জিতলেও এই একটি শিরোপা এখনও জেতা হয়নি। আমরা ভীষণভাবে চাইছি এই শিরোপাটি জিততে। আশা করছি, শনিবার সে আশা পূরণ হবে।’

সিটি বস গার্দিওলা অবশ্য ভীষণ সতর্ক। কোচিং ক্যারিয়ারে দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা এ কোচ ইন্টারকে মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছেন না।

ইন্টারের হয়তো সিটির মতো শক্তির এত গভীরতা নেই, এত তারকা নেই, তবে ইতালির এই ক্লাবটির শিরোপা-ভাগ্য বেশ ভালো। কয়দিন আগেও কোপা ইতালিয়া জিতেছে তারা।

সিটি ডিফেন্ডার জন স্টোন্সের মতে, এই ভাগ্য গুণেই তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। তাই ইন্টারকে মোটেই হেলাফেলা করা যাবে না বলে সতীর্থদের সতর্ক দিয়েছেন স্টোন্স।

আজকের ফাইনালে ইন্টারের কিন্তু হারানোর কিছু নেই। তাই ইতালির এই ক্লাবটি ভয়ডরহীন ফুটবল খেলবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন এডেন জেকো। এই বসনিয়ান ফরোয়ার্ড আবার ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিটিতে খেলেছিলেন। ৩৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড ১৪ গোল করে চলতি মৌসুমে দারুণ ফর্মে আছেন। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাওতারো মার্টিনেজের সঙ্গে তাঁর জুটিটা দারুণ জমে উঠেছে। এই জুটি জ্বলে উঠলে হাসি ফুটে উঠবে ইন্টার শিবিরে।

শক্তির বিচারে অনেক পিছিয়ে থাকলে ইন্টারের ইতিহাস কিন্তু বেশ সমৃদ্ধ। সিটি যেখানে একবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেনি, সেখানে ইন্টার তিনবার জিতেছে এই ট্রফি। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় সিটির একমাত্র সাফল্য সেই ১৯৭০ সালে কাপ উইনার্স কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আতাতুর্ক স্টেডিয়ামে আজ নতুন ইতিহাসের সূচনা করতে পারবে সিটি?