ঢাকা সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

ফাইনালের ‘নবাব’ সিরাজ

ফাইনালের ‘নবাব’ সিরাজ

Advertisement
Advertisement

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

লঙ্কান দলনেতা শানাকাকে আউট করেই সিইউ উদযাপন। মুহূর্তে সেই উদযাপনের দৃশ্য নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এতদিন হয়তো অনেকেই জানতেন না মোহাম্মদ সিরাজ সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ভক্ত। ইউরোপ মাতিয়ে সৌদিতে গিয়েও সেই আইকনিক উদযাপন ঠিক রেখেছেন সিআর সেভেন। রোববার কলম্বোর প্রেমাদাসায় রোনালদোভক্তদের খানিকটা চমকেই দেন সিরাজ।

রোনালদোর সঙ্গে তাঁর আরেকটা জায়গায় এদিন কিছুটা মিলে যায়। পেনাল্টি শুটআউটে পর্তুগালের তারকা যেমন একের পর এক গোল করেন, সিরাজও এদিন উইকেটকে গোলের মতো করে উদযাপন করেছেন। এক ওভারে চারটি, এরপর আরও দুটি; সব মিলিয়ে ২১ রানে ৬টি উইকেট। ভাবা যায়! এভাবে এক হাতে পুরো লঙ্কান ব্যাটিংলাইন ধসিয়ে দেবেন।

এ কেমন ফাইনাল। এভাবে শ্রীলঙ্কার আত্মসমর্পণ কেউ কি ভেবেছিলেন। তবে আগের ম্যাচগুলোতে বৃষ্টি অভিশাপ হলেও এদিন বোলারদের জন্য আশীর্বাদই হয়েছে। অন্তত সিরাজের জন্য। তাঁর নবাব হওয়ার পেছনে কিছুটা হলেও বৃষ্টির প্রভাব ছিল। মূলত বল সুইং করা, ব্যাটারদের পরীক্ষায় পড়া– এসব। তিনি নিজেও কল্পনা করেননি, এতটা সুইং করবে বল।

যেমনটা ম্যাচের পর বলেছিলেন সিরাজ, ‘আমি খানিকটা সময় ভালো বোলিংই করেছি। তবে একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করলাম, গত দুই ম্যাচেই ব্যাটাররা সুবিধা করতে পারছেন না। আমিও সুযোগটা পেয়ে যাই। আমার চেষ্টা ছিল নির্দিষ্ট জায়গায় বলটা ফেলা। শেষ দুই ম্যাচে উইকেটের আচরণ আমি পড়তে পেরেছিলাম, উইকেটে কিছুটা সুইং ছিল। আজ তো আরও বেশি সুইং করেছে। তাই আমিও নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করি। একটা পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাই, শেষ পর্যন্ত সফলতাও মেলে। আমার কাছে পিচটা অনেক ভালো মনে হয়েছে। দ্রুতই এখানে কার্যকর সুইং দেখতে পেলাম। দেখুন, যখন আরেকটা পাশ থেকেও চাপ তৈরি করা যায়, তাহলে দলের জন্য সেটা ইতিবাচক হয়ে যায়। আমার পাশাপাশি যে কাজটা করেছেন পান্ডিয়া ও বুমরাহ। অবশ্যই এটাই আমার সেরা বোলিং। আমি পুরস্কারটা গ্রাউন্সম্যানদের দিতে চাই। তারাই এটার যোগ্য। তাদের অবদান ছাড়া টুর্নামেন্টটি কখনো সফলতা দেখত না।’

ফাইনালের ম্যাচসেরার পুরস্কারটা গ্রাউন্সম্যানদের উপহারস্বরূপ দিয়েছেন সিরাজ। তাঁর কাছে অর্থই সব নয়। ক্যারিয়ারে এমন প্রাপ্তি যে কম ক্রিকেটারেরই আছে। সেটাই সিরাজ বড় করে দেখছেন। বহু তারকা, মহাতারকাও এভাবে প্রতিপক্ষকে গুটিয়ে দিতে পারেননি কিংবা লজ্জায় ফেলতে পারেননি। সিরাজ সেটা এশিয়া কাপের মঞ্চে করে দেখালেন। নিজের ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং তো বটেই, ওয়ানডেতে ভারতের বোলারদের মধ্যে সেরা তালিকায় নাম লেখালেন। গড়লেন আরও কত রেকর্ড।

দিনটি চাইলেও ভুলতে পারবেন না সিরাজ। জীবন-সংগ্রামে বহু কঠিন পথ অতিক্রম করতে হয়েছে তাঁকে। হায়দরাবাদে জন্ম নেওয়া সিরাজের বাবা ছিলেন ট্যাক্সি ড্রাইভার। টানাটানির সংসারের অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে পার করা শৈশব হয়তো তাঁকে আজও কাঁদাবে। কিন্তু সেই দিন গত হয়েছে।

ক্রিকেটের দুনিয়ায় রঙিন পথচলা যেদিন থেকে শুরু করেছেন সিরাজ, সেদিন থেকেই যত সামনে যাচ্ছেন কেবল আলো আর আলো। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল এই পেসারের। এরপর ওয়ানডে ও টেস্ট ক্যাপ পেতেও দেরি করতে হয়নি। এখন পর্যন্ত ভারতের হয়ে খেলেছেন ২৯ ওয়ানডে। যেখানে তাঁর উইকেট সংখ্যা ২৩টি। কলম্বো মাতিয়ে এবার ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ রাঙানোর পালা সিরাজের। হয়তো সেই মহামঞ্চেও মহাসেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হবেন ২৯ বছর বয়সী এই পেসার।

আরও পড়ুন