অন্তর্কোন্দলে ভরাডুবি আবাহনীর!
ছবি: আবাহনীর ফেসবুক থেকে নেওয়া
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪ | ১৫:৩৮
ম্যানেজার নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে ফুটবলারদের মুখে কুলুপ। ট্রফিশূন্য আরেকটি মৌসুম পার করা ঢাকা আবাহনীর দুর্দশার কারণ খুঁজছেন তারা। ব্যর্থতার কারণগুলো জানলেও ওপরের নির্দেশের কারণে এই মুহূর্তে কথা বলতে চাচ্ছেন না আবাহনীর কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে খেলোয়াড়রা।
তবে ক্লাবের বিশ্বস্ত একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, অধিনায়কত্বকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অধিনায়ক হওয়ার কথা গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেলের। ক্লাব ম্যানেজমেন্ট নেতৃত্বের ভার দিয়েছে রহমত মিয়ার কাঁধে। এটা নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ আছে। যার প্রভাব পড়েছে খেলায়। শুধু তাই নয়, আবাহনীর ভরাডুবির আরেকটি কারণ হলো ভুল বিদেশি খেলোয়াড় আনা।
এই মৌসুমে আর্জেন্টাইন কোচ আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানিকে নিয়োগ দিয়ে সফল হওয়ার যে আশা করেছিলেন সমর্থকরা, তা হয়নি। উল্টো দ্বিতীয় পর্বে জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে দলে নিলেও সহকারী এক কোচের নির্দেশে তাঁকে বেশ কয়েকটি ম্যাচে মাঠে নামাতে পারেননি ক্রুসিয়ানি।
মাত্র সাত দিনের প্রস্তুতিতে মৌসুম শুরু করেছে আবাহনী, যাতে ফুটে উঠেছে পরিকল্পনার অভাব। ২০১৮ সালে দেশের ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের আবির্ভাবের পরই ঢাকা আবাহনীর দুর্দশা শুরু। গত পাঁচ মৌসুম লিগ শিরোপা জিততে পারেনি তারা। মাঠ ও মাঠের বাইরে কিংসের সঙ্গে টেক্কা দিতে ব্যর্থ ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া দূরের কথা সর্বশেষ দুই মৌসুমে ফেডারেশন ও স্বাধীনতা কাপেও ভরাডুবি তাদের। ব্যর্থতার কারণে গত মৌসুমের পর দলে অনেক পরিবর্তন আনেন ক্লাবটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ম্যানেজার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সত্যজিৎ দাস রুপুকে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিজেদের পছন্দমতো ফুটবলার কেনা।
এমনকি কোচের কথা না মেনে একাদশ সাজাতেন তিনি। আরও নানা অভিযোগের কারণে রুপুকে সরিয়ে দিয়ে এই মৌসুমে ম্যানেজার পদে বসানো হয় সাবেক ফুটবলার নজরুল ইসলামকে। বাইরে থেকে পরিবর্তন মনে হলেও ক্লাবের ভেতরে যারা আছেন, তারা রুপুরই অনুগত।
জন্মলগ্ন থেকে আবাহনীর সঙ্গে জড়িত ক্লাবটির অন্তঃপ্রাণ শেখ আশরাফ আলী দলের এমন ভরাডুবিতে কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। আবাহনীর যত ম্যাচ দেখেছেন, তাতে মন ভরেনি সাবেক এ ফুটবলারের। তাদের সময়ের আবাহনী আর বর্তমান আবাহনীর সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। ফুটবলার থেকে শুরু করে সবার মধ্যে আগের মতো সেই নিবেদন ও ভালোবাসা নেই বলে মনে হচ্ছে আশরাফের।
‘ট্রফিটা জিতবে কী করে। ট্রফি পাইতে হলে খেলতে হবে। নাকি ট্রফি এমনি এমনি ঘরে চলে আসবে? আমার টোটাল খেলাটাই ভালো লাগে না। সব প্রফেশনাল যুগ হয়ে গেছে। এখন আগের মতো ক্লাবের প্রতি ভালোবাসা নেই। সবাই টাকার পেছনে ছুটছে’– বুধবার সমকালের সঙ্গে এভাবে নিজের দুঃখের কথা প্রকাশ করেন আশরাফ।
ছয়বারের লিগ শিরোপা জেতা দলটির এবার রানার্সআপ হওয়াটাও কঠিন। ১৫ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিন নম্বরে তারা। ২৮ পয়েন্ট নিয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব আছে দুই নম্বরে। ইতোমধ্যে লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা কিংসের পয়েন্ট ৪০। দলের এ অবস্থা দেখে হতাশ আশরাফ, ‘দুই বছর, তিন বছর চ্যাম্পিয়ন হয়নি, এটা ব্যাপার না। মূল বিষয়টা হলো আমরা যখন খেলেছিলাম, নিজেদের আন্তরিকতায় ক্লাবকে একটা পজিশনে নিয়ে এসেছিলাম। এখন তো আবাহনীর দক্ষিণ এশিয়াতে পরিচিতি আছে। তার অবস্থা এ রকম হবে কেন? গলদটা কোথায়? গলদটা হচ্ছে আমার দৃষ্টিতে দেশি-বিদেশি প্লেয়ার কালেকশন। আবাহনীর জন্ম থেকে আমি আছি। শেখ কামাল ভাইয়ের সঙ্গে খেলোয়াড়দের কী সম্পর্ক ছিল, খেলোয়াড়দের সঙ্গে কামাল ভাইয়ের কী সম্পর্ক ছিল, সেটা আমি দেখেছি। আমরা ছিলাম একটা পরিবার।’
মাঠ এবং মাঠের বাইরের খেলাতেও বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে পেরে উঠছে না আবাহনী। প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ভালো মানের ফুটবলার নিয়েছে কিংস। এই জিনিসটা মানছেন না আশরাফ, ‘বড় অঙ্কের টাকা দিলেই কি ক্লাবের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়? টাকা দিয়ে কি ভালো প্লেয়ার নিয়েছে, আমি তো সব দেখতেছি। কোন মানের প্লেয়ার এরা? আমাদের দেশে লিগটা গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ বছর আবাহনীর মতো একটা টিম যদি চ্যাম্পিয়ন হতে না পারে, তাহলে বিরাট গ্যাপ। সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে।’
- বিষয় :
- আবাহনী
- বাংলাদেশ ফুটবল