কাবাডির কমিটিতে হাতে লেখা নাম
ছবি- সংগৃহীত
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১৩:৪০
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ঘোষিত অ্যাডহক কমিটির ৯ ফেডারেশনের মধ্যে ৮টিতেই সাবেক ক্রীড়াবিদ ও সফল সংগঠকরা মূল্যায়িত হয়েছেন। ব্রিজ, টেনিস, স্কোয়াশ, অ্যাথলেটিকস, বিলিয়ার্ড ও স্নুকার, বাস্কেটবল, দাবা এবং হকি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটিতে বেশির ভাগই নতুন। কিন্তু কাবাডি ফেডারেশনে এর বিপরীত চিত্র। আগের কমিটির ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে।
সব জায়গায় পরিবর্তন হলেও দেশের এক নম্বর খেলাতে খুব একটা বদল আসেনি। বরং সাধারণ সম্পাদক যাঁকে করা হয়েছে, সেই এসএম নেওয়াজ সোহাগ আগের কমিটিতে ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক। তিনি মূলত ফেডারেশনের সঙ্গে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট হিসেবে অতীতে কাজ করেছিলেন। ব্যবসায়ী, ক্রীড়া সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সোহাগকে গুরু দায়িত্ব দেওয়ায় ক্রীড়াঙ্গনে হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কমিটিতে থাকা বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মো. মোজাম্মেল হক। আগের কমিটিতেও তিনি এই পদে ছিলেন।
সবচেয়ে বড় বিষয় ৯ কমিটির সবকটি নাম-পদবি কম্পিউটার টাইপে থাকলেও কাবাডি ফেডারেশনের এই যুগ্ম সম্পাদকের নাম হাতে লেখা; যাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তির সুপারিশে তাঁর নাম যুক্ত করা হয়েছে কিনা, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমনিতেই কাবাডিতে ভালো ফল আসছে না দীর্ঘদিন, তার ওপর অ্যাডহক কমিটিতে বিতর্কিত কয়েকজন ব্যক্তিকে রাখায় এই খেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ক্রীড়া-সংশ্লিষ্টরা।
পদাধিকার বলে আগে থেকেই কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি পদের দায়িত্ব পান পুলিশের মহাপরিদর্শক। ব্যত্যয় হয়নি এবারও। সভাপতি করা হয়েছে পুলিশের বর্তমান আইজিপি মো. ময়নুল ইসলামকে। কাবাডির খেলোয়াড় না হয়েও সোহাগকে সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ২০১৭ সালে অ্যাডটাচ বিজ্ঞাপনী সংস্থা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সোহাগ। বছরে খেলা ছাড়াও ৫৩ লাখ টাকা করে ফেডারেশনের ফান্ডে দেওয়ার জন্য চুক্তিভুক্ত হয়েছিলেন তিনি। সেই হিসাবে গত সাত বছরে সাড়ে তিন কোটির এক টাকাও ফেডারেশনে দেননি তিনি। আর নানা কাণ্ডে সমালোচিত গাজী মো. মোজাম্মেল হকের নামটি হাতে লেখা হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন জেগেছে।
৯টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি নিয়োগ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে সই ছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব (যুগ্ম সচিব) মো. আমিনুল ইসলামের। কাবাডি ফেডারেশনের কমিটিতে একটি নাম হাতে লেখা। এই বিষয়ে দৃষ্টিগোচর করলে ফোনে বাজে আচরণ করেন এনএসসির সচিব, ‘আপনি আমাকে এই প্রশ্ন করতে পারেন না। আমি শুধু নোটিফিকেশন করি। আপনার প্রশ্ন করার যৌক্তিকতা আমার কাছে নেই।’ আর সার্চ কমিটির আহ্বায়ক জোবায়দুর রহমানও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি, ‘আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। আমরা কোনো হাতে লেখা কাজ করিনি। তাদের হাতে আছে কিছু পরিবর্তন-পরিবর্ধন করার। তারা মনে করেছেন করা উচিত।’
ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় গত ২৯ আগস্ট সার্চ কমিটি গঠন করে। সেই সার্চ কমিটি ৫৩ ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক করে। এর পর এই ৯টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি করার জন্য নাম সুপারিশ করে। তিন সপ্তাহ পর্যালোচনা করে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ব্রিজ, টেনিস, স্কোয়াশ, কাবাডি, অ্যাথলেটিকস, বিলিয়ার্ড ও স্নুকার, বাস্কেটবল, দাবা এবং হকি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করে। ধাপে ধাপে বাকি ফেডারেশনগুলোর অ্যাডহক কমিটিও ঘোষণা করবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
- বিষয় :
- কাবাডি