ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সাক্ষাৎকারে ইমরুল কায়েস

ইমরুলের সেরা তামিম-হাথুরু

ইমরুলের সেরা তামিম-হাথুরু

ছবি- সংগৃহীত

সেকান্দার আলী

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১০:৪৪ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১১:২১

ইমরুল কায়েস প্রথম শ্রেণির শেষ ম্যাচ খেলছেন মিরপুরে। এ ম্যাচ দিয়েই লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন জাতীয় দলের সাবেক এ ওপেনার। গতকাল তাঁকে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (কোয়াব) ও খুলনা বিভাগ থেকে বিদায়ী সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। সতীর্থদের কাছ থেকে পেয়েছেন গার্ড অব অনার। বাঁহাতি এ ব্যাটারের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের আদ্যোপান্ত তুলে আনার চেষ্টা করেছে সমকাল। ইমরুলের কাছ থেকে ক্যারিয়ারের বৃত্তান্ত শুনেছেন সেকান্দার আলী

সমকাল: কেমন ছিল আপনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জার্নি?
ইমরুল:
আমার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু ২০০৭ সালে। পরের বছর জাতীয় দলে সুযোগ পাই। জাতীয় দলে থাকার কারণে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট সেভাবে খেলা হয়নি। কয়েক বছর একদম খেলা হয়নি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটা নিয়মিত খেললে ১০ হাজার রান হতে পারত। ওই দিক থেকে বলব, আমার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ার আরেকটু ভালো হতে পারত। জাতীয় লিগ খেলতে গেলে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারতাম না। দেশের হয়ে অনেক টেস্ট ম্যাচ খেলেছি। হয়তোবা মনের মতো পারফর্ম করতে পারিনি। প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স হয়নি। তবে আমি চেষ্টা করে গেছি। উত্থান-পতন ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, যতটুকুই খেলেছি দেশের জন্য, আমার জন্য তা বড় অর্জন।

সমকাল: মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের সঙ্গে আপনি খেলেছেন। তাদের ভিড়ে কি আপনার তারকাখ্যাতি পাওয়া হয়নি? 
ইমরুল:
আমি তারকাখ্যাতি নিয়ে কখনও চিন্তা করিনি। আমি সব সময় চিন্তা করেছি, বাংলাদেশ দলে খেলতে হবে। যেভাবে যতটা প্রয়োজন, সেটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দলের প্রয়োজনে কিপিংও করেছি। কেউ করতে চায়নি, আমি করেছি। আমি নিজের চিন্তা করিনি, দল থেকে যে রোল দেওয়া হয়েছিল, তা পালন করার চেষ্টা করেছি। নতুন কোচ এসে রোল পরিবর্তন করে দিয়েছে, সেটাও করেছি। হাথুরুসিংহে আক্রমণাত্মক খেলার রোল দিয়েছে, সেভাবে খেলেছি। আমি চেষ্টা করেছি, দলের প্রত্যাশা পূরণ করতে। সেদিক থেকে আমি খুশি। যদি তারকার প্রশ্ন আসে তাহলে বলব, আমি তারকাখ্যাতি নিয়ে ভাবিনি।

সমকাল: ওপেনিংয়ে বেশির ভাগ সময় তামিমের সঙ্গে খেলতে হয়েছে আপনাকে। জুটির অভিজ্ঞতা জানতে চাই?
ইমরুল:
তামিমের সঙ্গে ব্যাটিংটা খুব উপভোগ করতাম। একটা সময়ে তামিম অনেক আক্রমণাত্মক খেলত। আমি তখন বুঝতাম আমাকে ভারসাম্য রেখে খেলতে হবে। এই বোঝাপড়ার কারণে আমাদের জুটি ভালো হতো। আমরা নিজেরা খুব কথা বলতাম। একটা ভালো বোঝাপড়া থাকার কারণেই ভালো করা সম্ভব হয়েছে।

সমকাল: টেস্টে আপনার ভালো ইনিংসগুলোর মধ্যে স্মরণীয় কোনটি?
ইমরুল:
টেস্টে আমি খুব বেশি বড় ইনিংস খেলিনি। ১৫০ আমার স্মরণীয় একটি ইনিংস। ইংল্যান্ডের সঙ্গে মিরপুরে একটি ইনিংস ছিল, যেটা ম্যাচ উইনিং। লর্ডস টেস্টে রান (৭৫) করেছিলাম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমার ও শামসুর রহমানের একটি ২৩২ রানের জুটি ছিল। ওই জুটির কারণে টেস্ট ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। এ ধরনের কিছু ইনিংস ছিল, যেগুলো দলকে ভালো করতে সাহায্য করেছে।

সমকাল: ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টেস্টে ছিলেন না। কিছুটা বঞ্চিত মনে হয় নিজেকে?
ইমরুল:
আমার ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা হয়তো বিসিবি নিতে পারেনি। ওই সময়ে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। সব খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন থাকে। আমার সঙ্গে একটু বেশিই করে ফেলেছিল। বিরতিটা বেশি হয়ে গিয়েছিল। আমাকে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা সেট করে দেওয়া হলে ভালো হতো। যে তোমাকে আমরা এ পরিকল্পনায় রাখতে চাচ্ছি। তেমন কিছু হলে আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ওইভাবে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। আমি কখনও কারও কাছ থেকে ‘ক্লিয়ার মেসেজ’ পাইনি। কোন সংস্করণে খেলব বা আমাকে নিয়ে বিসিবির পরিকল্পনা কী। আমি বলছি না, আমাকে সুযোগ দেয়নি, অবশ্যই সুযোগ দিয়েছে টেস্ট ক্রিকেটে। ওয়ানডেতে যেমন আমাকে একটা রোল দেওয়া হয়েছিল– স্ট্রাইকরেট বাড়াতে বলা হয়েছিল। আমি ওইভাবে ভালো খেলেছিলাম। কোচ বা ম্যানেজমেন্ট থেকে টেস্টের জন্য অনুরূপ পরিকল্পনা দিলে ক্যারিয়ারটা আরেকটু মসৃণ হতো।

সমকাল: সাবেক নির্বাচকরা বলেন আপনাকে শুধু টেস্টে মনোযোগ দিতে বলেছিলেন লিটন দাসরা জাতীয় দলে আসার পর। আসলেই কি অফিসিয়ালি বলা হয়েছিল?
ইমরুল:
অফিসিয়ালি বলা হয়নি। এটা একটা ‘রং মেসেজ’ বা ভুল বার্তা ছিল। আমাকে একজন নির্বাচক বলেছিলেন, তোমাকে আমরা টেস্টে বিবেচনা করছি। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিয়ে খেলায়নি। আবার না খেলিয়ে দেশে ফিরে দল থেকে বাদ দিয়েছিল। আমাকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল ওয়ানডেতে আর বিবেচনা করা হবে না। আমি মানসিকভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা গেল সাত মাস পর এশিয়া কাপ খেলতে নিয়ে গেল। দুবাইতে ভালোও খেললাম। ওখান থেকে আসার পর জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ভালো খেললাম। এর পর এক সিরিজে দুই ম্যাচ খারাপ খেলায় আমাকে বাদ দেওয়া হলো। তখন মনে হলো ওয়ানডে ক্রিকেটে আমাকে চিন্তা করছে না। ইডেন গার্ডেনে ভারতের বিপক্ষে খারাপ খেলায় আমাকে আর টেস্টে নেওয়া হলো না। বলা হলো ওয়ানডে ক্রিকেটে বিবেচনা করবে, কিন্তু তারা আর বিবেচনা করেনি। অথচ নির্দিষ্ট করে পরিকল্পনা জানালে ক্যারিয়ারটা আরও বেটার হতে পারত।

সমকাল: এখন তো ব্যাটাররা অনেক সুযোগ পান। সেদিক থেকে দেখলে কি আপনার ওপর অবিচার করা হয়েছে?
ইমরুল:
আমি বলব না আমাকে সুযোগ দেয়নি। হাথুরুসিংহের সময় ফতুল্লাতে একটি সেঞ্চুরি করেছিলাম। ওই সময়ই তিনি আমাকে বলেছিলেন, তুমি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে। নিউজিল্যান্ড গিয়েও তিনটি ম্যাচ খেলবে। তোমাকে বাদ দেব না। এই ছয়টি ম্যাচ আমি স্বাধীনতা নিয়ে খেলেছি। কারণ আমি জানতাম ছয়টি ম্যাচ খেলব। বাকি কোনো ম্যাচেই জানতাম না দলে থাকব কিনা বা থাকলেও খেলার সুযোগ পাব কিনা। ২০১০ থেকে টানা ওয়ানডে খেলায় অনেক রান করার সুযোগ হয়েছিল। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটিতে সর্বোচ্চ, আরেকটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলাম। এর পর গিয়ে বাদ পড়ি। আসলে পারফর্ম করার পর কারণ ছাড়া বাদ পড়ায় দুশ্চিন্তা হতো। বুঝতে পারছিলাম না, কী করলে আমার ক্যারিয়ার বেটার হবে।

সমকাল: কোচিং স্টাফের কাকে বেশি ভালো লেগেছে?
ইমরুল:
আমি অনেক কোচের সঙ্গে কাজ করেছি। সত্যি বলতে হাথুরুসিংহের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। কোচিং লাইন নিয়ে অনেক কিছু শেখার ছিল। কীভাবে খেলোয়াড়দের কোচিং করাতে হয়, টেকনিক্যালি, ট্যাকটিক্যালি দল চালাতে হয়–সেগুলো শিখেছি।

সমকাল: কোচিং করালে এগুলো কাজে লাগবে?
ইমরুল:
১০০ ভাগ কাজে লাগবে। তাঁর দেখানো কৌশলগুলো আমাকে অনেক হেল্প করেছে।

সমকাল: বাংলাদেশ দলে কোন সময়টা বেশি উপভোগ করেছেন?
ইমরুল:
সত্যি বলতে, আমি তামিম, মাশরাফি ভাই, রিয়াদ ভাই, সাকিব এবং আরও কিছু সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলেন একটা সময়ে। রাজ্জাক ভাই। ওই সময়টায় আমরা জাতীয় দলে খুব আনন্দ করেছি। ভালো একটা সময় গেছে। আমরা আনন্দ নিয়ে খেলতাম।

সমকাল: জাতীয় দলের কোন সময়টাকে স্বর্ণযুগ বলবেন?
ইমরুল:
আমার মনে হয়, বাংলাদেশের ভালো সময় গেছে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত।

সমকাল: বিপিএলে আপনি অন্যতম সফল একজন অধিনায়ক...
ইমরুল:
বিপিএল আমি সব সময় উপভোগ করেছি। বিপিএল আমার জন্য ভালো একটা জায়গা ছিল, এখনও আছে। আমি খেলছি এবারও। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে যতদিন খেলেছি, চেষ্টা করেছি ভালো খেলার। বিপিএল অনেক বড় একটা অর্জন আমার জন্য।

সমকাল: খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে আসার ইচ্ছা আছে?
ইমরুল:
আমি অস্ট্রেলিয়াতে লেভেল থ্রি করতে চাই। ওখান থেকে ভালোভাবে শিখতে পারলে দেশে কাজ করতে পারব।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×