ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

সাফল্যেও কদর নেই হকির

সাফল্যেও কদর নেই হকির

হকি দলকে সংবর্ধনা।

সাখাওয়াত হোসেন জয়

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩:০৯

নেপালে অনূর্ধ্ব-২০ সাফ শিরোপা জেতা বাংলাদেশ ফুটবল দলকে ২৯ আগস্ট দেশে ফেরার দিন সন্ধ্যায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে সংবর্ধনার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক পুরস্কার দিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ক্ষেত্রেও। ৩১ অক্টোবর বাফুফে ভবনে গিয়ে সাবিনা খাতুন-মনিকা চাকমাদের ফুল দিয়ে বরণের সঙ্গে ১ কোটি টাকার পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজ বাসভবনে মেয়েদের সংবর্ধিত করেছিলেন। অথচ দেশের হকি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পর অনূর্ধ্ব-২১ দলকে শুধু শুভেচ্ছা বার্তাতেই যেন দায়সার! ওমান থেকে দেশে ফেরা দলটিকে গতকাল বিমানবন্দরে বরণ করতে ফেডারেশনের কিছু কর্মকর্তা ছাড়া ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাউকে দেখা যায়নি। 

দুপুরে বিমানবাহিনীর ফ্যালকন হলে মেহেরাব হাসান সামিন-আমিরুজ্জামানদের সংবর্ধনা দেওয়ার সঙ্গে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে পুরো দলকে ৫ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার দেন হকি ফেডারেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান।

হকি দল
ক্যাম্পে দৈনিক ভাতা-৪০০ টাকা
মাসে পায়     ১২০০০ টাকা
জুতার দাম    ২০-২৫ হাজার
স্টিকের কাম    ২০-২২ হাজার টাকা

দলের ১৮ খেলোয়াড়, ৩ কোচ-কর্মকর্তা মিলিয়ে ২১ জনকে ভাগ করে দেওয়া হবে এই অর্থ। তাতে জনপ্রতি ২৩ হাজার ৮০৯ টাকা করে পাচ্ছেন; যে অর্থ খেলার জন্য পায়ে দেওয়া এক জোড়া জুতার মূল্যের (২৫ হাজার) চেয়েও কম! হকি ফেডারেশনের বাইরে সরকারের কোনো পর্যায় কিংবা কোনো সংস্থা থেকেও জুনিয়র হকি দলের জন্য কিছু করার উদ্যোগ নেই। তাহলে কি হকির বিশ্বকাপের মূল্য বোঝে না দেশের ক্রীড়াঙ্গন।

নিজেদের এই দুঃখের কথা বলতে গিয়ে বড় নিঃশ্বাস ফেলেছেন জুনিয়র এশিয়া কাপে ৭ গোল করা রাকিবুল হাসান, ‘ক্রিকেটের পর হকি দল বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে। আপনি দেখেন জুনিয়র কিংবা সিনিয়র কোনো পর্যায়ে ফুটবল দল বিশ্বকাপে খেলেনি। অবশ্যই সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সংবর্ধনা আশা করতেছি।’ 

রাকিবুলের এই আশার কথাটি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসানের কানে দিলে অজ্ঞাত সুরে এভাবে জবাব দেন, ‘তিনি (সভাপতি) তো বলেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টাকে এই অর্জনের কথা জানিয়েছেন। এর বাইরে এখনও কিছু বলতে পারব না। ছেলেরা ছুটি থেকে আসুক, তার পর দেখা যাবে।’

ক্রিকেটের পর হকিই বাংলাদেশের দ্বিতীয় খেলা, যারা কিনা বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে। ফুটবলের সাফল্য দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডিতেই। অথচ জুনিয়র এই হকি দল শক্তিশালী মালয়েশিয়া ও চীনের সঙ্গে সমানতালে লড়াই করে এশিয়া কাপে ১০ দলের মধ্যে হয়েছে পঞ্চম। ভারতে অনুষ্ঠেয় ২০২৫ বিশ্বকাপে ৩৪টি দেশের একটি বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে খেলা আর একটি অঞ্চলের সেরা হওয়ার মধ্যে বিস্তর তফাত। সেই পার্থক্যই হয়তো নির্ণয় করতে পারেনি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। 

পুরস্কার
হকি ফেডারেশন থেকে ৫ লাখ

ফুটবলে পুরস্কার; অনূর্ধ্ব-২১ সাফ
ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিজন ২৫ হাজার

নারী সাফজয়ীদের
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি
বিসিবি ২০ লাখ
বাফুফে ১ কোটি ৫০ লাখ
সাউথ ইস্ট ব্যাংক প্রত্যেক ফুটবলারকে ৩ লাখ করে দিয়েছে।
ওয়ালটন দিয়েছে ফ্রিজ

অথচ দক্ষিণ এশিয়ান নারী ফুটবলে সেরা হওয়ার পর ঋতুপর্ণা-তহুরা খাতুনদের নিয়ে মাতামাতির কমতি নেই। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি, বিসিবি থেকে ২০ লাখ টাকা পেয়েছে নারী ফুটবল দল। বাফুফে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। সাউথ ইস্ট ব্যাংক প্রত্যেক ফুটবলারকে দিয়েছে ৩ লাখ টাকা করে। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে সাফজয়ী দলকে ১ কোটি টাকা পুরস্কার দেবে। আয়োজনটাও ঢাকার বাইরে ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে। 

মনিকা চামকা-রুপনা চাকমারা নিজ জেলায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাধ্যমে চার লাখের ওপরে অর্থ পেয়েছেন। ওয়ালটন থেকেও দেওয়া হয়েছে ফ্রিজ। সব মিলিয়ে নারী ফুটবল দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে পাচ্ছেন। সামনেও তাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরও পুরস্কার।

শুধু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া অর্থই নয়, বাফুফে ক্যাম্পে থাকা জাতীয় দলের মেয়েরা মাসিক বেতনও পেয়ে থাকেন। ক্যাটেগরি ভিত্তিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ১০-১৫ হাজার করে পান মেয়েরা। বিপরীতে দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় খেলা হকির অবস্থা যাচ্ছেতাই। নিয়মিত লিগ হয় না বলে আয়ের পথও সেভাবে নেই। উপায় না পেয়ে অনেকে নাম লিখেছেন ব্যবসায়। 

ক্যাম্পে দৈনিক ভাতা হিসেবে পান মাত্র ৪০০ টাকা, মাসে গিয়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার টাকা। মাসিক যে টাকা পান হকি খেলোয়াড়রা, তা দিয়ে কেনা যায় না এক জোড়া জুতা। কারণ জুতার দামই যে ২৪ হাজার টাকা। তার সঙ্গে কিনতে হয় স্টিক। সেটার দাম ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা হওয়ায় অনেক খেলোয়াড়ই জীবন ধারণের কথা চিন্তা করে স্টিক কিনতে ভয় পান। কারণ একটা স্টিক কিনলে নিজে যেমন দুই মাস চলতে পারেন না, তেমনি করে পরিবারকেও সহযোগিতা করা যায় না। 

আরও পড়ুন

×