ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

সাক্ষাৎকার 

বাংলাদেশের খেলা দেখে সবাই অবাক

বাংলাদেশের খেলা দেখে সবাই অবাক

জুনিয়র এশিয়া কাপে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭ গোল করেন রাকিবুল।

সাখাওয়াত হোসেন জয়

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৪:৫০

ওমান থেকে ঢাকায় আসার ভ্রমণ ক্লান্তি থাকলেও প্রথমবারের মতো হকির জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করায় উচ্ছ্বসিত মোহাম্মদ রাকিবুল হাসান। জুনিয়র এশিয়া কাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৭ গোল করা কিশোরগঞ্জের এ খেলোয়াড় নানা বিষয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।

সমকাল : আপনাদের হাত ধরে দেশের হকির ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ। কেমন লাগছে?

রাকিবুল : অনুভূতি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। হকিতে অতীতে এমনটা হয়নি। হকির ইতিহাসে প্রথমবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে। আর সেই দলের একজন সদস্য হওয়াতে আমার ভালোলাগাটা আরও বেশি।

সমকাল : সিনিয়ররাও বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারা পারেননি। আপনারা পেরেছেন।

রাকিবুল : হকিতে বাংলাদেশের অনেক লিজেন্ড আছেন। তারা বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। আমাদের মাধ্যমে বিশ্বকাপের স্বপ্নপূরণ হয়েছে, এই জন্য আমরা গর্বিত। আমার কাছে মনে হচ্ছে, দেশের জন্য বড় কিছু একটা নিয়ে এসেছি। সবাই আমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল। আমাদের মনেও বিশ্বকাপ স্বপ্ন ছিল। আলহামদুল্লিল্লাহ, সেটা আমরা পূরণ করেছি।

সমকাল : দেশের সাফল্যের সঙ্গে আপনি দলের সর্বোচ্চ স্কোরার।

রাকিবুল : জুনিয়র এশিয়া কাপে আমি ৭ গোল করেছি; যেটা দলের মধ্যে সর্বোচ্চ। দলকে আমি কিছু দিতে পেরেছি। এ জন্য সতীর্থদেরও কৃতিত্ব দেব। তারা সাপোর্ট না দিলে আমি গোল করতে পারতাম না। বেশি গোল করতে পারায় আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক খুশি।

সমকাল : জুনিয়র বিশ্বকাপের আগে এক বছর সময় আছে। ওই আসরে টার্গেট কী?

রাকিবুল : এক বছর কিন্তু খুব বেশি সময় নয়। অন্যান্য দেশ কিন্তু বিশ্বকাপের জন্য আরও আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। এক বছর সময় অনেক মনে করলে এটা আমরা ভুল করব। কারণ আমাদের পরিকল্পনা তো সেভাবে নাই। আমাদের লেভেলটা উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। বিশ্বকাপে উঁচু মানের দল খেলবে। আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি; ওরা অনেক উঁচু মানের দল। সেই লেভেলে যেতে হলে এক বছর আমাদের জন্য কিছুই না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্যাম্প শুরু করতে হবে। এক বছর কাজে লাগাতে হবে। না লাগালে আমাদের রেজাল্ট খারাপ হবে।

সমকাল : কোনো কিছু অর্জন করলে ক্রিকেটার ও ফুটবলারদের নিয়ে মাতামাতি হয়। সেই অর্থে আপনাদের নিয়ে কিছুই হয়নি।

রাকিবুল : বাংলাদেশে হকিতে সেই আমেজটা নেই। যেটা ক্রিকেট ও ফুটবলে আছে। এটা প্রচলিত নয়, খুব একটা খেলেও না। ক্রিকেট, ফুটবল গ্রামগঞ্জে যে কোনো জায়গায় খেলা যায়, যেটা হকিতে যায় না। তো এ ক্ষেত্রে আমাদের হকির খুব একটা জনপ্রিয়তা নেই। এখন পর্যন্ত ওপর লেভেল থেকে কিছু আসেনি। আশা করছি, কিছু একটা আসবে। ক্রিকেটের পর হকি দল বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে। আপনি দেখেন, জুনিয়র কিংবা সিনিয়র কোনো পর্যায়ে ফুটবল দল বিশ্বকাপে খেলেনি। অবশ্যই সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সংবর্ধনা আশা করতেছি। আমরা আশাবাদী। যেহেতু ফুটবলে মেয়েরা সাফ জেতার পর তাদের সংবর্ধনা দিয়েছে। আমরা বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে এসেছি, তাই আমাদেরও একটা সংবর্ধনা দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমি।

সমকাল : হকিতে বড় সমস্যা নিয়মিত খেলা হয় না। এই অর্জনে স্থবিরতা দূর হবে বলে মনে করেন কি?

রাকিবুল : হকিতে কিছু আসছে। আর বিশ্বকাপ খেলাটা হয়তো বা হকির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। ক্রিকেটে টার্নিং পয়েন্ট ছিল বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা। আমরা মনে করি, এই অর্জনে হকিতেও পরিবর্তন আসবে। এখন যদি নিয়মিত খেলা হয়, তাহলে হকি পুনরুজ্জীবিত হবে।

সমকাল : ওমানে আপনাদের খেলা দেখে বিদেশিরা কী বলেছেন?

রাকিবুল : বাংলাদেশের খেলা দেখে সবাই অবাক। বিশেষ করে আমাদের দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের খেলা দেখে বাইরের দেশের সবাই মুগ্ধ হয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন কোচ আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাকিস্তানের কোচ আমাকে একটা জুতা উপহার দিয়েছেন। আর বলেছেন, তোমার খেলা ভালো লেগেছে। 

আরও পড়ুন

×