হোক শুভসূচনা

স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে শনিবার মাসকটের আল আমেরাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটের আলোয় অনুশীলন করেন মাহমুদউল্লাহ-সাকিবরা- বিসিবি
আলী সেকান্দার, মাসকট থেকে
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২১ | ০৪:৩০
বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। করোনা মহামারির কারণে বছরের শুরুতেও আয়োজকদের আকাশ ছিল কালো মেঘে ঢাকা। অনেক ছাড় দিয়ে আলোচনার টেবিলে সব পক্ষ এক হওয়ায় উড়ে যায় অনিশ্চয়তার মেঘ। ভারত থেকে ভেন্যু সরিয়ে নেওয়া হয় আরব আমিরাত আর ওমানে। ভারতকে স্বাগতিক রেখেই নিউ নরমাল সময়ের বাস্তবতায় পাঁচ বছর পর আজ আবার মাঠে গড়াচ্ছে টি২০ বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টের সপ্তম আসরের পর্দা উঠতে বাকি মাত্রই কয়েক ঘণ্টা। মাসকটের আল আমেরাত স্টেডিয়ামের উদ্বোধনী ম্যাচে ওমানের প্রতিপক্ষ পাপুয়া নিউগিনি। আইসিসির দুই সহযোগী দেশের ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মাঠে গড়ালেও উদ্বোধনী দিনের মূল আকর্ষণ বাংলাদেশ। আল আমেরাতে রাত ৮টায় স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হবে তারা। এ ম্যাচে ক্রিকেট বিশ্বের ফোকাস থাকবে টাইগারদের ওপর। ক্রিকেটের তারার মেলায় মুখর হবে মাসকট, আবুধাবি, দুবাই ও শারজাহ। এক মাসের অভিযানে হয়তো ক্রিকেটের আকাশে উদিত হবে নতুন কোনো নক্ষত্র। যেখানে আলো ছড়াতে পারেন বাংলাদেশেরও কেউ।
মাহমুদউল্লাহদের জন্য এটি শুধুই একটি বিশ্বকাপ নয়। বিশ্বকাপ মঞ্চ থেকে দেশের ক্রিকেটকে দেওয়ার আছে অনেক কিছুই। ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি মেটাতেই গত কিছুদিন বায়োসিকিউর বাবলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া টাইগারদের। জীবনকে বায়োসিকিউর বাবলের কঠোর বিধিনিষেধে বেঁধে রেখে দিনের পর দিন ত্যাগ স্বীকার করা বিশ্বকাপ মঞ্চ মাতানোর জন্যই। মাহমুদউল্লাহ ভালো কিছুর প্রতিশ্রুতি দিতেই গতকাল আল আমেরাত স্টেডিয়ামের হাইব্রিড সংবাদ সম্মেলনে এলেন। টাইগার দলপতি জানালেন, নিকট অতীতের সব ভুলে দূর অতীতের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে সেরা ক্রিকেট খেলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা। নিয়মের বেড়াজালে আটকে পড়ায় বাছাই রাউন্ড দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে হচ্ছে বাংলাদেশের। ২০১৪ সালে টি২০ বিশ্বকাপে এই নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকেই বাছাই পর্বের দল টাইগাররা। যে রাউন্ডের পারফরম্যান্স ক্রিকেটের কুলীনকুলে খুব একটা গণ্য করা হয় না। উপস্থিত এক সাংবাদিক মাহমুদউল্লাহকে এই প্রশ্ন ছুড়ে দিলে মুচকি হেসে তিনি বললেন, 'হয়তো হয় না। তবে আমাদের কাছে সব ম্যাচই সমান। প্রথম রাউন্ডে যে তিন প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি- সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। টি২০ ছোট সংস্করণের খেলা। জিততে হলে নির্দিষ্ট দিনে ভালো করতে হয়। আমরা এবার ভালো কিছু করতে চাই। চেষ্টা থাকবে যত বেশি পারা যায় ম্যাচ জেতা। সুপার টুয়েলভে যেতে হলে প্রথম রাউন্ড পার হতে হবে আগে। সে জন্য ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে দল হিসেবে।'
বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রবেশের পর উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স। টানা তিনটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয়ের পর ওমানে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেও জিততে পারেনি অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিতে। শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের কাছে হারে আত্মবিশ্বাস কতটা নেমে গেছে, জানতে চাওয়া হলে অধিনায়ক যেন ড্রাইভ খেলে বল বাউন্ডারিতে পাঠাতে চেষ্টা করলেন, 'আত্মবিশ্বাস একটুও কমেনি। প্রস্তুতি ম্যাচের হার কোনো বিষয় নয়। যেটা গেছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে চাই না। দুটি ম্যাচেই তো আমাদের সেরা দল খেলেনি। ছেলেরা কেমন করে সেটা দেখাই ছিল অনুশীলন ম্যাচের উদ্দেশ্য। সবাই খুব ভালো টাচে আছে। আশা করি আমরা ভালো করব। দেশে জেতা সিরিজগুলো থেকে যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি, সেটাই শক্তি। ছেলেদের মধ্যে ভালো খেলার আত্মবিশ্বাস আছে। শুরুটা ভালো করা দরকার। কাল (আজ) আমরা একটা ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব। টিম পারফরম্যান্স করার চেষ্টা করব।' সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়াই হয়েছে কন্ডিশনিং ক্যাম্প। দু'জনই ছিলেন আইপিএলে। রাজস্থান রয়্যালস লিগ রাউন্ড থেকে বাদ পড়ায় মুস্তাফিজ দলের সঙ্গে একটু আগে যোগ দিতে পারলেও সাকিব টিম হোটেলে ওঠেন গতকালই। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ফাইনাল খেলা শেষ করে আমিরাত থেকে সড়ক পথে এসেছেন ওমানের রাজধানী মাসকটে। বিশ্বকাপ ম্যাচ দিয়ে এক হচ্ছে টাইগার স্কোয়াড। সে তুলনায় স্কটল্যান্ড দল অনেক আগে থেকেই একসুতোয় বাঁধা। বিশ্বকাপ ভেন্যুতে চার-পাঁচটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে সূক্ষ্ণভাবে। টাইগারদের পরাজিত করা দল আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছে স্কটিশ বাহিনী। গতকাল তাদের কোচ শেন বার্জার টাইগারদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির সঙ্গে মিলিয়ে। স্কটিশ কোচের মতে, 'আমরা জানি নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলতে পারলে সব দলকেই বিপাকে ফেলতে পারব। সংক্ষিপ্ত সংস্করণ সব দলকেই কাছাকাছি নিয়ে আসে। আমরা জানি আমাদের সামর্থ্য আছে। যদি নিজেদের সেরাটা খেলতে পারি তাহলে যে কোনো দলকে হারাতে পারব, তা বাংলাদেশ, ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি যে-ই হোক।' প্রতিপক্ষ দলের কোচের কথাকে সামনে এনে মাহমুদউল্লাহর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে সম্মান দেখিয়েই বললেন, 'তারা ভালো দল বলেই বিশ্বকাপ খেলছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে সেরাটা খেলে ম্যাচ জেতা। আমরা অন্য কোনো কিছু নিয়ে ফোকাস করতে চাই না।'
টাইগারদের ফোকাস এবার আগের সব আসরকে ছাপিয়ে সেরা পারফরম্যান্স করা। বাছাই রাউন্ডের গি পেরিয়ে সুপার টুয়েলভে একাধিক ম্যাচ জেতা। সেভাবে স্কোয়াড সমন্বয় করা হয়েছে বলে জানান দলপতি। তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ দেখে একাদশ গোছানো হয়েছে। লিটন কুমার দাস, নাঈম শেখ, সৌম্য সরকারকে ওপেনিং স্লটের বিবেচনায় রাখা হয়েছে। লিটন-নাঈম ওপেন করলে সৌম্য খেলতে পারেন তিন নম্বরে। সাকিব ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং অর্ডার চার ও পাঁচে ভাগাভাগি করা হবে। আফিফ হোসেনকে খেলানো হতে পারে সাত নম্বরে। অলরাউন্ডার বেশি নিয়ে ব্যাটিং লাইনআপ লম্বা রাখার চিন্তা টিম ম্যানেজমেন্টের। যাতে করে টি২০'র কাননে রানের ফুল ফোটাতে পারেন ব্যাটাররা। আর বোলিং লাইনআপে আনা হবে স্পিন ও পেসের ভারসাম্য। উদ্দেশ্য সমন্বিত পারফরম্যান্স করে বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ম্যাচ জেতা। স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে টুর্নামেন্টে শুভসূচনা করা।