অর্ধেকেরও বেশি শেয়ার এখন ফ্লোর প্রাইসে। বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড ৩৮৭টি। বৃহস্পতিবারের ক্লোজিং প্রাইসের হিসাবে ফ্লোর প্রাইসে ছিল ১৯৭টি, যা মোটের ৫০ দশমিক ৯০ শতাংশ। প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর মোট লেনদেনে এসব শেয়ারের অংশ ছিল ৫ শতাংশেরও কম।

গতকাল ডিএসইতে ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকা ১৯৭ শেয়ারের লেনদেন ছিল মাত্র ৫৯ কোটি টাকারও কম। যদিও অন্যান্য দিনের মতো গতকালও এসব কোম্পানির বিপুল অঙ্কের শেয়ার বিক্রির আদেশ ছিল। ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় দর কমার কোনো শঙ্কা না থাকলেও নতুন করে এসব শেয়ার কিনতে চান না সিংহভাগ বিনিয়োগকারী।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ দর বেড়ে কেনাবেচা হয়েছে আরও ৮৫ শেয়ার। ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর বেড়ে কেনাবেচা হয়েছে আরও ২৯ শেয়ার। এ কারণে নিচের সার্কিট ব্রেকার পূর্ণভাবে কার্যকর হচ্ছে না আরও অন্তত ৭৪ শেয়ারের। অর্থাৎ, মোট ৩৮৭ শেয়ার ও ফান্ডের মধ্যে ২৭২টির বা ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে নিচের সার্কিট ব্রেকার পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করা যাচ্ছে না।

শুধু কম দামি বা রুগ্‌ণ কোম্পানির শেয়ারই নয়, বেশ কিছুদিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে নামিদামি কোম্পানিও। এর মধ্যে রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডেসকো, পদ্মা অয়েল, তিতাস গ্যাস, সিঙ্গার বাংলাদেশ, ওয়ালটন হাইটেক, রেনেটা, স্কয়ার ফার্মা, বিএটি বাংলাদেশ, হেইডেলবার্গ সিমেন্ট, গ্রামীণফোন, রবির মতো শেয়ার। অথচ এসব কোম্পানির তুলনায় মুনাফা, সম্পদ বা লভ্যাংশ ঘোষণার দিক থেকে অনেক খারাপ শেয়ারও ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে ওষুধ খাতের স্কয়ার ফার্মার শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১৬ টাকা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ টাকা বেশি। তার পরও এ কোম্পানির শেয়ার ২০৯ টাকা ৮০ পয়সার ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে গত দুই সপ্তাহ। অথচ ওষুধ খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশনের সর্বশেষ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসের ইপিএস মাত্র ১ টাকা ৪৩ পয়সা। এর ফ্লোর প্রাইস ১০৭ টাকা ৩০ পয়সা এবং গতকাল সর্বশেষ কেনাবেচা হয়েছে ৫৮৪ টাকায়।

মাত্র ১ টাকা ১৩ পয়সা ইপিএস নিয়ে গত দুই সপ্তাহে বিডিকম নামে কোম্পানির শেয়ার গত দুই সপ্তাহে ৮৬ শতাংশ দর বেড়েছে। গতকাল শেয়ারটি সর্বশেষ ৬১ টাকা ৩০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। এ শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস ৩০ টাকা ৩০ পয়সা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আল-আমিন সমকালকে বলেন, ফ্লোর প্রাইসে থাকা শেয়ার কিনলে দীর্ঘদিন বিনিয়োগ আটকে থাকতে পারে ভয়ে বিনিয়োগকারীরা কিনছেন না। সবার চোখ স্বল্প মূলধনি কোম্পানি বা যেসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে সেদিকে। মুনাফার লোভে গুটিকয় শেয়ারে বিনিয়োগ হওয়ায় এসব শেয়ারের দরও বহু গুণ বেড়েছে। এ ধারা দীর্ঘদিন চলবে না। কারণ, দর বৃদ্ধির একটা মাত্রা আছে। যেসব শেয়ারের দর এখন বাড়ছে, সেগুলোর পতন শুরু হলে একসময় সিংহভাগ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে নেমে যাবে। লেনদেন তলানিতে নামারও শঙ্কা আছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর থাকা ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ না করলে সামনে অশনিসংকেত অপেক্ষা করছে।

অব্যাহত দরপতনের মুখে নানা কিছু করেও পতন ঠেকাতে না পেরে গত ৩১ জুলাই থেকে সব শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস কার্যকরের আগের সপ্তাহের সব শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইসের গড় মূল্যকেই ফ্লোর প্রাইস ধরা হয়। এতে ২৮ জুলাইয়ের তুলনায় সিংহভাগ শেয়ারের দর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যায়। তাতে প্রধান মূল্যসূচকও দেড়শ পয়েন্টের বেশি বেড়ে ৬১৩৩ পয়েন্টে উঠেছিল।