ইআরএফের সেমিনারে বিএসইসির চেয়ারম্যান
ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফ্লোর প্রাইস দিয়েছি

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩:১৬
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রধান আবারও স্বীকার করলেন, ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে দরপতন ঠেকাতে তিনি তালিকাভুক্ত সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছেন। তবে এটি খুবই সাময়িক, কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয় বলে মন্তব্য করে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এখনই ফ্লোর প্রাইস উঠছে না। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলে মার্জিন ঋণে যাঁরা শেয়ার কিনেছেন, ফোর্স সেলের কারণে তাঁরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন।
গতকাল সোমবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত 'বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ' বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সাংবাদিক মুহাম্মদ মোফাজ্জল। সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, 'অন্যান্য দেশের মতো যদি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও মোট বিনিয়োগের ৮০-৯০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের থেকে আসত, তাহলে শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার কথা চিন্তাও করতাম না। আইওএসসির একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হয়েও খুবই বেকায়দায় পড়ে এটি করতে হচ্ছে। আমি নিজেও এটি (ফ্লোর প্রাইস) চাই না।'
নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান করোনাকালীন সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ এবং বাজার ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে নানা বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, 'বর্তমান কমিশনের মেয়াদের আড়াই বছর পার হয়ে গেছে। আর দেড় বছর সময় আছে। দায়িত্ব গ্রহণের সময় লকডাউনে বাজার বন্ধ ছিল। প্রথম কিছুদিন চলে গেছে বাজার চালু করতে। এর মধ্যে কৌশলগত ইস্যুতে বাজারকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে কাজ করেছি। কিছু কাজ করতে গিয়ে সমালোচিতও হচ্ছি।' তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে নিজে ভুল বিনিয়োগ করে অন্যকে দোষারোপ করেন অনেকে। এটি যাতে না হয়, তার জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনা অতিমারির মতো এত বড় ঘটনা পৃথিবীতে ঘটে গেছে, যা কোনো রকমের বিচার-বিশ্নেষণ, ক্ষমতার বাইরে। ওই সময় পুরো বিশ্বের শেয়ারবাজারের সূচকের ওঠানামা যদি দেখেন, তা কিন্তু বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ছিল না। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকট সব দেশের শেয়ারবাজারে পড়েছে। কারণ এ অবস্থায় সবাই সতর্ক হয়। সবার বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের ধরন বদলে যায়। তবে সংকট ক্রমে কেটে যাচ্ছে এমন ভরসা দিয়ে অধ্যাপক শিবলী বলেন, যে ধাক্কা আমাদের লাগার কথা ছিল, তার থেকে কম লেগেছে।
শেয়ারবাজার 'ডে-ট্রেডিং' এর বাজার নয় মন্তব্য করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, 'কেউ কেউ এসএমএস করে বলেন, স্যার বাজার করতে পারছি না, বাজারটা ঠিক করেন। এমন মানুষকে কী বলব? বাজার করার টাকা কী শেয়ারবাজার দেবে? এটি সে বাজার না। শেয়ারে বিনিয়োগ ধৈর্যের খেলা। যেদিন কমবে, সেদিন কিনবেন। বাড়লে বিক্রি করবেন। প্যানিকড হয়ে তাড়াতাড়ি বিক্রি করে সাইড লাইনে গিয়ে টাকা সরিয়ে বসে থাকলে কমিশন কী করতে পারে? অনেকে বলেন, আস্থা নেই। এমন কী করলে আস্থা আসবে?' তিনি বলেন, বিএসইসি শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যক্তিগত কোনো এজেন্ডা নেই। বাজারটিকে ভালো করাই তাদের কাজ। সত্য ও বস্তুনিষ্ট হয়ে সমালোচনা করবেন, মিথ্য তথ্য দিয়ে বা ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করবেন না।
মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের এমডি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, 'শেয়ারবাজারের খারাপ হলেই ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ কিছু পকেট বিনিয়োগকারীদের বলে-কয়ে শেয়ার কিনিয়ে ডিমান্ড সাইড তৈরি করা হয়। বাজার বাড়লে ওই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেন। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ নেই। এটিই এ বাজারের সংস্কৃতি। এমন জোয়ার-ভাটার বাজার থেকে মুক্তি চাই।'
ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম। সবাই অন্যের কথা শুনে বিনিয়োগ করেন। এটি আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নেই। বিএসইসি অনুমোদন দিলে শিগগিরই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করব।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমজেএলের এমডি আজম জে চৌধুরী বলেন, ভারতের রিলায়েন্সের মতো বিশাল কোম্পানি তার মূলধনের প্রয়োজনে শেয়ারবাজারের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে এ সংস্কৃতি তৈরি হয়নি।
বাজার সংক্ষেপ :গতকাল সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে ফ্লোর প্রাইসে নামা শেয়ার বেড়ে ৩১৩টিতে উন্নীত হয়েছে। এ বাজারে তালিকাভুক্ত ৩৯০ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৯৯টির কেনাবেচা হয়েছে, যার মাত্র ২৩টির দর বেড়েছে, কমেছে ৫৫টির এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ২২১টির দর। এতে ডিএসইএক্স সূচক ১২ পয়েন্ট হারিয়ে ৬২১২ পয়েন্টে নেমেছে। কেনাবেচা হয়েছে ৩৪৫ কোটি টাকারও কম মূল্যের শেয়ার।
- বিষয় :
- বিএসইসি
- শেয়ারবাজার
- শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম