- শেয়ারবাজার
- নগদ লভ্যাংশও বিও হিসাবে পাঠাতে চায় বিএসইসি
শেয়ারবাজার
নগদ লভ্যাংশও বিও হিসাবে পাঠাতে চায় বিএসইসি

প্রতীকী ছবি
তালিকাভুক্ত কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাংক হিসাবে না পাঠিয়ে সরাসরি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাবে পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশন কর্মকর্তাদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংস্থার কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদও তা স্বীকার করেছেন।
চলতি দরপতনে অধিকাংশ শেয়ার ফ্লোরপ্রাইসে নেমে আসার প্রেক্ষাপটে কোনোভাবেই যখন বাজারে নতুন বিনিয়োগ আনা যাচ্ছে না, তখনই এমন চিন্তাভাবনা করছে বিএসইসি। যদিও এ চিন্তার কারণ হিসেবে কমিশন বলছে, সহজে নগদ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে পৌঁছানোর পথ বের করাই তাদের লক্ষ্য। তবে কমিশন কর্মকর্তাদের কেউ কেউ জানান, সরাসরি বিও হিসাবে (শেয়ারবাজারে লেনদেনের হিসাব) নগদ লভ্যাংশ পাঠিয়ে এর বড় একটা অংশ ফের বিনিয়োগে আনার উদ্দেশ্য রয়েছে। এভাবে বাজারে নগদ অর্থপ্রবাহ বাড়বে এবং নতুন করে শেয়ার চাহিদা তৈরি হবে। এতে শেয়ারদর, সূচক ও লেনদেন বাড়তে পারে।
সাধারণত পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলো প্রতি বছর শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করে। অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নানা টানাপোড়েনের মধ্যে ব্যবসা খারাপ যাওয়ায় সর্বশেষ হিসাব বছরে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা কমেছে। তারপরও ব্যাংক, বীমা, আর্থিকসহ অন্য সব খাতের ২৬৪ কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ১২ হাজার ৭৬১ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। আগের হিসাব বছরে যার পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
কোম্পানিগুলোর ঘোষণা অনুযায়ী চলতি ২০২২ সালে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বা তার আগের হিসাব বছর মিলে মোট ১৩ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছে। এর বাইরে ৩৪ মিউচুয়াল ফান্ড বিতরণ করেছে ৩৭৬ কোটি টাকা। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব এরই মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ সমাপ্ত হিসাব বছরের নগদ লভ্যাংশ বিতরণ শেষ করেছে। অন্য সব খাতের ১৭৯ কোম্পানি গত ৩০ জুন, সমাপ্ত হিসাব বছরের ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও এখনও বিতরণ শেষ করেনি। কারণ এর অনেকগুলোরই এখন পর্যন্ত বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম হয়নি। এজিএম করে এসব কোম্পানি সাধারণত জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করে। এ লভ্যাংশের পুরোটা সাধারণ বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নয়। কারণ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট শেয়ারের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশের মালিক উদ্যোক্তা-পরিচালক বা সরকার। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের অংশ ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ এবং দেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশ ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীর অংশ ২ শতাংশ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কিছু অংশ বিনিয়োগে আসতে পারে।
বিএসইসির কর্মকর্তারা বলেন, বোনাস শেয়ারের মতো বিও অ্যাকাউন্টে নগদ লভ্যাংশ পাঠানো গেলে টাকা পাঠানোর ঝক্কি-ঝামেলা কমবে। অনেক শেয়ারহোল্ডার তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করেন বা কারও অ্যাকাউন্টের তথ্যে ভুল থাকে। এ কারণে শেয়ারহোল্ডার প্রাপ্য লভ্যাংশ সময়মতো পান না। এসব টাকা কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ফেরত যায়। কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে যার হদিস মেলে না। বিওতে নগদ লভ্যাংশ পাঠানো গেলে এ সমস্যা থাকবে না।
কর্মকর্তারা আরও জানান, যে কোনো লভ্যাংশ দেওয়ার আগে রেকর্ড ডেটের (লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য শেয়ার থাকার সর্বশেষ তারিখ) মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডার কারা, তা নির্দিষ্ট করা হয়। এ ডাটাবেজ ধরেই বোনাস লভ্যাংশ ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হচ্ছে। কাজটি নির্বিঘ্নভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে। একইভাবে নগদ লভ্যাংশও পাঠানো সম্ভব। এখনও বোনাসের সঙ্গে নগদ লভ্যাংশ কিছু শেয়ারহোল্ডারের বিওতে পাঠানো হচ্ছে। বিশেষত মার্জিন ঋণে যাঁরা শেয়ার কেনেন, তাঁদের নগদ লভ্যাংশ ব্যাংক হিসাবে নয়, ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমেই বণ্টন হয়। ফলে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ নেই। আইনগত জটিলতাও নেই বলে মনে হচ্ছে। চাইলে কমিশন একটি আদেশ জারি করে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে পারে।
বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, যে কোনো লভ্যাংশ, হোক তা নগদ বা বোনাস শেয়ার, তা নির্বিঘ্নে পাওয়ার অধিকার রয়েছে শেয়ারহোল্ডারদের। বোনাস লভ্যাংশের পুরোটা সব শেয়ারহোল্ডারের বিও অ্যাকাউন্টে পাঠানো হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। এ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। তিনি বলেন, অনেকে হয়তো তাঁর প্রাপ্য নগদ লভ্যাংশও শেয়ারে বিনিয়োগ রাখতে চান। এখন তাঁকে ব্যাংক থেকে ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকে ফের চেক বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় অর্থ হস্তান্তর করতে হয়। বিওতে নগদ লভ্যাংশ পাঠানো গেলে এ জটিলতা কমবে।
মন্তব্য করুন