- শেয়ারবাজার
- ফ্লোর প্রাইস ফিরছে ১৬৮ শেয়ারে
ফ্লোর প্রাইস ফিরছে ১৬৮ শেয়ারে

তালিকাভুক্ত সব শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দরসীমা ফিরিয়ে আনছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গত ২১ ডিসেম্বর যে ১৬৯ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়েছিল, সেগুলোর ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত ফের কার্যকর করার ব্যবস্থা নিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল বুধবার নেওয়া এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার থেকে।
নতুন করে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণে নতুন সূত্রও দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, নতুন ফ্লোর প্রাইস হবে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ক্লোজ প্রাইসের গড় এবং পূর্বের ফ্লোর প্রাইসের মধ্যে যে দরটি কম, সেই দরটি। আর গতকাল পর্যন্ত যেসব শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস কার্যকর ছিল সেগুলোর ওই ফ্লোর প্রাইসই কার্যকর থাকবে।
প্রসঙ্গত, অব্যাহত দরপতনের মুখে দ্বিতীয় দফায় সব শেয়ারের দরে পূর্বের ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল গত বছরের ২৮ জুলাই। সমালোচনা ও লেনদেন ব্যাপকভাবে কমার প্রেক্ষাপটে গত ২১ ডিসেম্বর ১৬৯ শেয়ার থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করেছিল বিএসইসি। গতকাল ওই আদেশটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ তালিকার এনএলআই মিউচুয়াল ফান্ডটি ইতোমধ্যে বেমেয়াদিতে রূপান্তরিত হয়ে তালিকাচ্যুত হয়েছে। ফলে তালিকায় প্রকৃত শেয়ার ও ফান্ড ১৬৮টি। এর মধ্যে আবার বেক্সিমকো সিনথেটিক্স নামের কোম্পানিটি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের থেকে সব শেয়ার কিনে স্বেচ্ছায় তালিকাচ্যুতির প্রক্রিয়ায় আছে। ফলে এ শেয়ারটির পুনরায় লেনদেনের কোনো সম্ভাবনা নেই। এসব শেয়ার ও ফান্ডের মধ্যে গত ৪৮ কার্যদিবসে ১০০টির দর কমেছে ১ থেকে ৩৬ শতাংশ।
নতুন আদেশ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নতুন করে ফ্লোর প্রাইস আরোপ হওয়া ১৬৮ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে গতকালের ক্লোজিং প্রাইসের তুলনায় ৪২টির দর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে। বিপরীতে ৭৬টির কমবে। ৫০টির দর অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ সর্বশেষ চার কার্যদিবসে যেসব শেয়ারের দর কমেছে, সেগুলোর দর বাড়ছে। আর যেসব শেয়ারের দর ক্রমাগত বাড়ছিল, সেগুলোর দর কমবে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম সমকালকে বলেন, কিছু শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস থাকা, আর কিছু শেয়ারে না থাকায় বাজারে সবার জন্য ‘ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই মর্মে শেয়ারবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তাছাড়া যেসব শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছিল সেগুলোর ক্রমাগত দরপতনে অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। তাঁদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতেই এ সিদ্ধান্ত।
তবে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ করতে শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারই ছিল উপযুক্ত ও বাস্তবসম্মত চিন্তা। কিন্তু বিএসইসি বাস্তবতা বা অর্থনীতির সূত্র কোনোটাই মানে না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছে– কমিশনের এমন দাবির সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ দাবি মোটেও ঠিক নয়। শেয়ারদর ও সূচক কমে গেলে যে সমালোচনার তীর ছুটে আসবে, সে আঘাত সহ্য করতে পারবেন না বলেই এ আজগুবি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কমিশনের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশ হচ্ছে মনে করেন আবু আহমেদ। তিনি বলেন, আগে সক্রিয় বিনিয়োগকারী ছিলেন আড়াই লাখ, এখন এক লাখের নিচে। মার্জিন ঋণে যাঁরা শেয়ার কিনেছিলেন, তাঁরা শেয়ার কেনাবেচা করতে পারছেন না। কারণ ক্রেতা নেই। চোখের সামনে সুদের কারণে মূলধন হারাচ্ছেন। এর কবে অবসান হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না।
শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইস ফিরিয়ে আনার দাবি করেছে বলে শুনিনি। তবে সম্প্রতি পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ নামের একটি সংগঠনের কয়েকজন এমন দাবি করেছেন বলে শুনেছি, যাঁদের এ বাজারে বিনিয়োগ নেই।
মন্তব্য করুন