গত সপ্তাহের প্রথম তিন দিনের বড় দরপতনের পর গত বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অনেক শেয়ারের দর বেড়েছিল। এতে লেনদেনও বাড়ে। কিন্তু বুধবার আবার দরপতন হয়েছে। লেনদেনও কমেছে।

বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে ৩২ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১২৭টির পতন হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার ৫৫ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১০৭টির দরপতন হয়েছিল। এ ছাড়া আগের দিন যেখানে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩ পয়েন্ট হারায়; সেখানে বুধবার হারিয়েছে ১৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ দরপতনের মাত্রা বেড়েছে।

দরপতন বাড়তেই ফের সার্বিক শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। ডিএসইতে বুধবার ৪৩৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা মঙ্গলবারের তুলনায় সাড়ে ৬৯ কোটি টাকা কম। আগের দিন ডিএসইতে ৫০৩ কোটি টাকার বেশি শেয়ার লেনদেন হয়।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, সামষ্টিক অর্থনীতির পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নানা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এ উৎকণ্ঠা পুঁজি করে কিছু পক্ষ অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দরপতনের নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা দোটানার মধ্যে রয়েছেন।

তবে শেয়ারবাজারের সার্বিক লেনদেনের নেতিবাচক প্রবণতার বড় কারণ তারল্য সংকট বলে মনে করেন শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের এমডি। তিনি বলেন, যারা নিয়মিত বিনিয়োগ করেন, তাদের হাতে বিনিয়োগ করার মতো নগদ অর্থ নেই। যাদের কাছে অর্থ আছে, তারা দরপতনের ভয়ে বিনিয়োগ করার সাহস করছেন না।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, আগে কেনা শেয়ারের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। মাসের পর মাস এসব শেয়ারের বিক্রেতা আছে, ক্রেতা নেই। যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছিলেন, প্রতিদিনই ঋণের সুদ তাদের পুঁজি খেয়ে ফেলছে। এ অবস্থায় ‘জোরপূর্বক বিক্রি’ ঠেকাতে কেউ কেউ অতিরিক্ত টাকা জমা দিয়ে এসব শেয়ার বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

দরপতন বিষয়ে সম্প্রতি একটি অনলাইন পোর্টাল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের মতামত প্রকাশ করে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি মন্তব্য করেছেন, ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে শেয়ারবাজারে এ অবস্থা।

বুধবার ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৩২ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১২৭টির দর কমেছে এবং ১৭৫টির দর অপরিবর্তিত বা ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। ক্রেতার অভাবে ৫৮ শেয়ারের কোনো লেনদেনই হয়নি।

খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সিমেন্ট এবং পাট খাত ছাড়া বাকি সব খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে। সার্বিক হিসাবে সর্বাধিক পৌনে ৩ শতাংশ দরপতন হয়েছে কাগজ ও ছাপাখানা খাতের। বড় খাতের মধ্যে সর্বাধিক দরপতন হয়েছে বীমায়। এ খাতের লেনদেন হওয়া ৫৫ শেয়ারের মধ্যে তিনটির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৪১টির দরপতন হয়েছে।