এক দিন বৃদ্ধির পর তিন দিন পতন হচ্ছে শেয়ারবাজারে
ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৪১
শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দর পতন চলছে। প্রায় প্রতিদিনই দর হারাচ্ছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার। পুঁজি হারানোর কারণে ক্ষোভ-দুঃখ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক কোম্পানি কেউ স্বস্তিতে নেই। কারণ লাগাতার দর পতনে শেয়ার কেনাবেচা কমায় তারা ব্যবসা হারিয়েছেন। সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি মুনাফা নিতে পারছে না, উল্টো তাদের সম্পদ মূল্য কমছে।
টানা তৃতীয় দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর কমেছে। দর বেড়েছে ৫২টির, কমেছে ২৯৩টির এবং অপরিবর্তিত ৪৮টির দর। এতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৮ পয়েন্ট হারিয়ে ৫২৫৭ পয়েন্টে নেমেছে। কেনাবেচা হয়েছে মাত্র ৩০৬ কোটি টাকার শেয়ার।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি তিন দিন দর পতনের পর এক দিন সূচক বেড়েছে। এ সময়ে মোট ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ দিনে মোট ৪৪৯ পয়েন্ট কমেছে, বাকি দুই দিনে বেড়েছে ১০৭ পয়েন্ট। ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, তাদের গ্রাহকরা ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন। দর পতনে আরও লোকসান হওয়ার আগে সব শেয়ার বিক্রি করে দিতে বলছেন তারা। নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ কমেছে।
ইলেকট্রনিক শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সিডিবিএল প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বুধবার পর্যন্ত চলতি অক্টোবরে গত ৪ হাজার ১৫৫টি নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯৭টিতে এখনও শেয়ার কেনা হয়নি। অথচ একই সময়ে শেয়ারশূন্য হয়েছে ৪ হাজার ৬৬৩টি অ্যাকাউন্ট। গত দেড় মাসের হিসাবে এ সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৪৩টি।
ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম চার দিন ব্যাপক উত্থান হয়েছিল। এর পর থেকে যে পতন শুরু হয়েছে, তা থামছেই না। এ অবস্থা কতদিন চলবে– সে বিষয়ে কেউ কোনো ধারণা দিতে পারছেন না। এর কারণ ব্যাখ্যায় ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম মনে করেন, তারল্য সংকট ও ফোর্সসেল এর চলতি দর পতনের প্রধান কারণ। তিনি সমকালকে বলেন, যাদের বিনিয়োগে বাজারে তারল্য বাড়ত এবং শেয়ার চাহিদা সৃষ্টি হতো, তারা বাজারে সক্রিয় নেই। এর মধ্যে ৮ থেকে ১০টি ব্যাংক আর্থিক সংকটে। আমানতকারীদের জমা টাকাও এসব ব্যাংক অনেক ক্ষেত্রে ফেরত দিতে পারছে না। পুঁজি বাঁচাতে মার্জিন ঋণদাতা কিছু প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের শেয়ার ‘ফোর্সসেল’ করছে।
অনেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করছে, এমন চাওয়াকে কীভাবে দেখেন– এ প্রশ্নে ডিবিএর সভাপতি বলেন, গত ১৫ বছরে যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তাতে এমন চাওয়া স্বাভাবিক। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, দর পতন হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হস্তক্ষেপ করবে, এটা কখনই ঠিক নয়। বিএসইসি বা স্টক এক্সচেঞ্জের কাজ হলো শুধু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক বাজারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং নিয়মিতভাবে আইপিও প্রক্রিয়ায় ভালো শেয়ারের জোগান বাড়ানো। শেয়ারদর ওঠানামায় হস্তক্ষেপ অতীতে কখনোই ভালো ফল আনেনি। এখনও আনার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করি না।
একই ধরনের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল-আমীনের। তিনি সমকালকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে দেশ। কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরুর পর অনেকে বাজারে নিষ্ক্রিয়। দর পতন চলতে থাকায় যাদের হাতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থ আছে, তারাও ‘দেখি কী হয়’ এমন মনোভাব নিয়ে বসে আছেন। ফলে শেয়ার বিক্রি বেড়েছে এবং চাহিদা কমেছে। বিষয়টি এমন নয় যে, কেউ ইচ্ছাকৃত শেয়ার বিক্রি করে দর পতনকে উস্কে দিচ্ছে। যদিও এখন অনেক শেয়ারের দর মৌলভিত্তি বিবেচনায় অনেক কমে আছে। এমন শেয়ারে বিনিয়োগের এখন উপযুক্ত সময়।
বর্তমান অবস্থায় করণীয় কী– জানতে চাইলে ডিবিএ সভাপতি বলেন, মৌলভিত্তি বিবেচনায় না নিয়েই বাজার জুয়াড়িচক্র যেভাবে অতীতে শেয়ারদর বাড়িয়েছে, এখন তারা সটকে পড়ায় ওই সব শেয়ারের চাহিদা থাকবে না– এটাই স্বাভাবিক। তবে এর বাইরে অনেক শেয়ার আছে, যেগুলোর বাজারমূল্য মৌলভিত্তি বিবেচনায় অনেক কম। বিনিয়োগকারীরা যদি নিজের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেন, তাহলে এখন এগুলোতে বিনিয়োগের সময়। বিনিয়োগ হলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
ড. আল-আমীন বলেন, সমস্যা হচ্ছে, এ বাজার পুরোপুরি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকেন্দ্রিক। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী খুবই কম। এ অবস্থায় আইসিবির মতো প্রতিষ্ঠান যদি বড় বিনিয়োগ ফান্ড নিয়ে আসে, তাহলে হয়তো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগে ভরসা পাবে।
- বিষয় :
- শেয়ারবাজার