বাঁধভাঙা দর পতন শেয়ারবাজারে
ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪ | ০০:১২
বাধাহীন দর পতন চলছে শেয়ারবাজারে। গত ১২ আগস্ট থেকে যে দর পতন শুরু হয়েছে, তা থামার নাম নেই। যারা ধৈর্য ধরে শেয়ার ধরে রাখছিলেন, এখন তারাও শেয়ার বিক্রি করছেন। ফলে মাত্রা ছাড়াচ্ছে দরপতনের হার। তার পরও সংশ্লিষ্ট সবাই নির্বিকার, যেন কারও কিছু করার নেই।
গতকাল রোববারও ব্যাপক দর পতন হয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র ২৫টির দর বেড়েছে। বিপরীতে ৩৪৩টি বা মোট শেয়ারের সাড়ে ৮৬ শতাংশ দর হারিয়েছে। দর অপরিবর্তিত ছিল ২৬টির।
অব্যাহত দর পতন সত্ত্বেও এ নিয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দুই সংগঠন ডিবিএ ও বিএমবিএ নেতারা কিছু বলছেন না। এ অবস্থায় গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পতিত সরকারের সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা এবং কারসাজির মাধ্যমে বহু শেয়ারের দর অযৌক্তিক পর্যায়ে তোলা হয়েছিল। যাতে দর পতন না হয়, তার জন্য ফ্লোর প্রাইস, সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম আটকে কৃত্রিম ব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছিল। এখন কৃত্রিম ব্যবস্থা না থাকায় এবং প্রকৃত অবস্থা বের হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা ওইসব শেয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ কারণে দর পতন হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অতীতের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তাছাড়া অতীতের দুরবস্থা ও শেয়ার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সরকার তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে সুবিধা দেবে।
সূচকে বড় পতন
গতকালের দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯৭ পয়েন্ট হারিয়ে গত ১৩ জুনের পর সর্বনিম্ন অবস্থান ৫১৬০ পয়েন্টে নেমেছে। যদিও টানা তিন দিনের দর পতনের পর গতকাল সকাল ১০টায় দিনের লেনদেন শুরুতে সিংহভাগ কোম্পানির দর বাড়ে। লেনদেনের প্রথম ১০ মিনিটেই সূচক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে ৫২৯৮ পয়েন্ট ছাড়ায়। এর পর দর পতন শুরু হলে দুপুর ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত স্বাভাবিক লেনদেন শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলেছে। দর পতনের চিত্র শুধু গতকালের নয়। মাঝে কয়েকটি দিন বাদ দিলে প্রায় প্রতিদিনের চিত্র ছিল একই রকম। গত ১২ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচক হারিয়েছে ৮৫৫ পয়েন্ট বা ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ। শুধু চলতি অক্টোবরে ১২ কার্যদিবসেই হারিয়েছে ৪৬৩ পয়েন্ট।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ১২ আগস্ট থেকে দরপতনে তালিকাভুক্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৭৫টিই দর হারিয়েছে। কমপক্ষে ২৫ শতাংশ দর হারিয়েছে ২১১ কোম্পানির শেয়ার। দর অর্ধেকে নেমেছে এমন শেয়ার আছে আরও অন্তত ১১টি। ডিএসইর নতুন চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম সমকালকে জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে আজ ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ এবং শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ডিএসইর পর্ষদ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মতো শেয়ারবাজারেও অবাধ লুটতরাজ হয়েছে। এ সময়ে অসংখ্য দুর্বল ও প্রায় অস্তিত্বহীন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমেই এসব কোম্পানির আসল চেহারা প্রকাশ পাচ্ছে। লাগামহীন কারসাজির মাধ্যমে দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর পর ফ্লোর প্রাইস আরোপ, সার্কিট ব্রেকারের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমায় নানা কৃত্রিম ব্যবস্থায় বাজারের রুগ্ণদশা ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন ওই কৃত্রিম চেষ্টা না থাকায় ধারাবাহিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং কারসাজির অনিবার্য পরিণতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা বলেছে, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিগত সময়ের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করছে বিএসইসি। সরকারি লাভজনক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয় আশা করছে, এর মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে।
- বিষয় :
- শেয়ারবাজার