ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

অযাচিত হস্তক্ষেপে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে

অযাচিত হস্তক্ষেপে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে

শনিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ডিএসই ব্রােকার্স অ্যাসােসিয়েশন আয়োজিত শেয়ারবাজার বিষয়ক আলােচনা সভায় বক্তারা ফটাে রিলিজ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩৬

ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজির জন্য অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, বরং মালিকরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে চেয়েছেন। ভুয়া সম্পদের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্বে অবহেলা এবং অযাচিত পদক্ষেপ ও হস্তক্ষেপে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি ‌আরও খারাপ হয়েছে। সামগ্রিক নয়, ব্যক্তিস্বার্থে সবাই কাজ করেছে। 
গতকাল শনিবার ঢাকা ক্লাবে ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার– বর্তমান প্রেক্ষিত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শীর্ষক’ একটি আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় শেয়ারবাজার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক তাদের পেশাগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ আয়োজিত আলোচনায় অংশ নেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম। 
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি, বিচারহীনতা, অদক্ষতা এবং ভুল পদক্ষেপের সামগ্রিক ফল হিসেবে শেয়ারবাজারের আজকের এ দশা। অনেকে এক রাতে বড়লোক হয়ে যাবেন ভেবে শেয়ারবাজারে আসে। বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও ওই প্রতিযোগিতায় ঢুকেছে। এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেও ঢুকেছে। মমিনুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে দুষ্টের পালন আর সৃষ্টের দমন করা হয়েছে। ডিএসইকে করা হয়েছে পোস্ট অফিস। এ বাজারে ডিএসইর ভূমিকা হওয়ার কথা রেফারির, আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি থাকবে ফিফার ভূমিকায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, গত ১৫ বছরে রেফারি ও ফিফার ভূমিকা পালন করেছে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। 
ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজার বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে এ স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, সবাই মিলে খারাপ কোম্পানি বাজারে আসার বিষয়ে প্রতিরোধ গড়তে পারলে আগামীতে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কোনো কোম্পানি প্রতারণা করতে পারবে না।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার আহসান হাবীব বলেন, বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ নয়, মূলধনি মুনাফার জন্য বিনিয়োগ করেন। সূচক কমে গেলে চিন্তা থাকে সরকারের পক্ষ থেকে কী সহায়তা মিলবে। প্রথম আলোর বাণিজ্য সম্পাদক সুজয় মহাজন বলেন, তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য যত দ্রুত প্রকাশ করা যাবে, কারসাজির আশঙ্কা তত কম হবে। অর্থসূচকের সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, দেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি এমন– ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দিবো কোথা’। যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মনির হোসেন বলেন, শেয়ারবাজার সংস্কারে সদিচ্ছা, জ্ঞানভিত্তিক ও নেতৃত্বগুণ, চাপমুক্ত বাজার এবং প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা– এই চার বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে।  
সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার আনোয়ার ইব্রাহীম বলেন, ব্যাংক-বীমা কোম্পানির মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিশাল পরিচালনা খরচ তুলতে কর্মীদের সাব-ব্রোকার বানিয়েছে। এর মানে যত শেয়ার কেনাবেচা, তত আয়। এভাবে মন্দ আইপিও এসেছে, বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিনিধি দৌলত আক্তার মালা বলেন, শেয়ারবাজারে দ্বৈত কর তুলে নেওয়ার কথা বলেও তুলে নেওয়া হয়নি। উল্টো ‘সারপ্রাইজ’ হিসেবে মূলধনি মুনাফায় কর বসানো হয়েছে। একাত্তর টিভির চিফ বিজনেস এডিটর সুশান্ত সিনহা বলেন, শেয়ারবাজার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও তা নিয়ে সাধারণ গবেষণা হয় না। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বিশেষ প্রতিনিধি জেবুননেসা আলো বলেন, সোনালী পেপার নামে কোম্পানি কীভাবে আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি করে বাজারে এসেছে, তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×