উৎপাদন এবং সেবা খাতের প্রথম প্রান্তিক
দুই-তৃতীয়াংশ কোম্পানির মুনাফা কমেছে
ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৯
দেশের উৎপাদন এবং আর্থিক খাত ছাড়া সেবা খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির মুনাফা গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় কমেছে বা লোকসান করেছে। এ অবস্থার মধ্যেও জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস এবং ইউনাইটেড পাওয়ার মুনাফা বৃদ্ধির তথ্য দিয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক বছরে যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে, সেগুলোর মুনাফায়ও ভাটার টান পড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– সি পার্ল হোটেল
অ্যান্ড রিসোর্ট, বেক্সিমকো লিমিটেড, সোনালী পেপার, ই-জেনারেশন, ফরচুন সুজ, বিবিএস কেবলস ইত্যাদি।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে উৎপাদন এবং আর্থিক খাত ভিন্ন সেবা খাতের কোম্পানির সংখ্যা ২৪৩টি। এসব কোম্পানির আর্থিক বা হিসাব বছর জুলাই মাসে শুরু হয়ে শেষ হয় জুনে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তালিকাভুক্ত এমন ৯৯ কোম্পানি জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব কোম্পানির মধ্যে মুনাফায় ছিল ৬৮টি, লোকসান করেছে ৩১টি, যার ২৬টি গত বছরও লোকসানে ছিল। অবশ্য গত বছর লোকসানে থাকা ৪ কোম্পানি এ বছর লোকসান কাটিয়ে সামান্য মুনাফা করেছে।
পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে এমন কোম্পানির মাত্র ৩৬টি। বাকি ৬২ কোম্পানি হয় গত বছরের তুলনায় কম মুনাফা করেছে অথবা লোকসান করেছে। শুধু একটি কোম্পানির মুনাফা গত বছরের সমান রয়েছে। সার্বিক হিসাবে মুনাফায় থাকা ৬৮ কোম্পানির নিট ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে। মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস বা বৃদ্ধি পেলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে এর কারণ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। তবে বেশির ভাগ কোম্পানি প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে এমন কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। যেসব কোম্পানি ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাদের ভাষ্য– সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসার পরিচালন খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি বিক্রি কমায় মুনাফাও কমেছে।
মুনাফায় থাকা কোম্পানি
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যেসব কোম্পানি তাদের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে টাকার অঙ্কে সর্বাধিক ৪১৩ কোটি টাকা মুনাফার তথ্য দিয়েছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকারী কোম্পানি ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। গত বছর একই সময়ে এ কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল প্রায় ১৮১ কোটি টাকা। মুনাফা বৃদ্ধির হার ১২৮ শতাংশ। কোম্পানিটির ইপিএস ৩ টাকা ১২ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বেক্সিমকো ফার্মা, যার গত বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ১৫৫ কোটি টাকা। পরের অবস্থানে থাকা ওয়ালটন হাই-টেক ১৪৯ কোটি টাকা, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ১৩৮ কোটি টাকা এবং পদ্মা অয়েল ১২৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে এসব কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল যথাক্রমে ২০২ কোটি টাকা, ৯১ কোটি টাকা এবং ৯১ কোটি টাকা। মুনাফার শীর্ষে থাকা পাঁচ কোম্পানির তিনটি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের। উৎপাদন খাতের দুটির মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার মুনাফা ৮ শতাংশ বাড়লেও ওয়ালটনের ২৬ শতাংশ কমেছে।
ইপিএস বিবেচনায় এ ৯৯ কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে থাকা পাঁচ কোম্পানি হলো– মেঘনা পেট্রোলিয়াম, পদ্মা অয়েল, ইউনাইটেড পাওয়ার, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। শেয়ারপ্রতি সর্বাধিক ১২ টাকা ৭৩ পয়সা মুনাফা করেছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮ টাকা ৪২ পয়সা। জ্বালানি খাতের সরকারি এ কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধির হার ৫১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পদ্মা অয়েলের ইপিএস বৃদ্ধির হার ৩৭ শতাংশ। কোম্পানিটির ইপিএস ৯ টাকা ২৪ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৬৭ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। সরকারি অপর কোম্পানি ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের ইপিএসে প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণের বেশি। ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৯৭ পয়সা, যা এ বছর একই সময়ে ৬ টাকা ১৩ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। ইপিএস বেড়েছে ২১১ শতাংশ।
লোকসানি কোম্পানি
লোকসানে থাকা ৩১ কোম্পানি নিট ২৬০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এর মধ্যে আলোচিত কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১১৩ কোটি টাকা লোকসান করেছে। গত বছরও একই প্রান্তিকে লোকসানে ছিল কোম্পানিটি। ওই সময়ে মোট লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭১ কোটি টাকা। এতে এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ৭৯ পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ২৬ পয়সা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লোকসানি কোম্পানি সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি ডেসকো। গত প্রান্তিকে কোম্পানিটি নিট ৩২ কোটি টাকা লোকসান করেছে। অবশ্য গত বছর একই সময়েও লোকসানে ছিল, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ বছর প্রায় ১২০ কোটি টাকা লোকসান কমেছে। সি পার্লের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা, যেখানে গত বছর সাড়ে ১৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল।
- বিষয় :
- শেয়ারবাজার