ব্যাংক বাঁচাতে শেয়ারবাজার লাগবে
ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪৮
লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাত যে সংকটের মধ্যে পড়েছে, তাকে বাঁচাতে শেয়ারবাজারকে টেনে তুলতে হবে। বেসরকারি খাত তো বটেই, সরকারও বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজার উপেক্ষিত। সহজেই ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া এবং ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতিও শেয়ারবাজার বিকাশে বাধা। গত সোমবার রাতে ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, অর্থনীতিকে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করতে শেয়ারবাজারকে সামনে রেখে পুরো দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএ আয়োজিত এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। সভাপতিত্ব করেন বিএমবিএর সভাপতি মাজেদা খাতুন।
ব্যাংক খাত এখন যে অবস্থায়, তাকে বাঁচাতে শেয়ারবাজারের বিকল্প নেই মন্তব্য করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, টাকা নিয়ে ফেরত না দিলেও খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো না। তারপরও ব্যাংক নতুন করে টাকা দিয়েছে। অর্থনীতির স্বার্থে পুঁজিবাজারকে নিয়ে কীভাবে সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থা গড়া যায়, সে লক্ষ্যে সংস্কার পরিকল্পনা হচ্ছে। দেশে এমনও বড় শিল্প গ্রুপ আছে, যার কোম্পানি ২০ থেকে ২৫টি, অথচ শেয়ারহোল্ডার মাত্র সাতজন। তারা কোম্পানিকে ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে রাখছেন। এখন তারা বুঝছেন। অবশ্য শেয়ারের ভালো দাম না পেলে ভালো তারা শেয়ারবাজারে আসতে চায় না। তাদের জন্য আকর্ষণীয় কর প্রণোদনা দরকার। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারমুখী করতে কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, সংস্কারের জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের সুপারিশের পর পুরো পুঁজিবাজারকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। অপ্রয়োজনীয় আইন বাতিল, নতুন আইন প্রণয়ন বা বিদ্যমান প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন হবে। কোনো ভুল থাকলেও তার আগ পর্যন্ত বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে শেয়ারবাজার চলবে। ভালো শেয়ারবাজার পেতে সকলকে আরও কিছু দিন ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান বিএসইসির চেয়ারম্যান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক বলেন, অর্থের প্রয়োজনে সরকারসহ সবাই ব্যাংকনির্ভর ছিল। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন হলে সরকারও এখান থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে। সরকারি, বহুজাতিক ও বড় কোম্পানিকে শেয়ারবাজারমুখী করতে উৎসাহমূলক কর ছাড় দেওয়ার বিষয়ে এনবিআর বিবেচনা করতে পারে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, এখানে অনেক আইন করা হয়, প্রয়োগ হয় কম। জিডিপির তুলনায় সরকারের রাজস্ব আয় কম বলে সরকারের হাতে সম্পদ তৈরি হচ্ছে না। এটাই মূল সমস্যা, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারে।
বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অর্থনীতিকে ঠিক করতে হলে শেয়ারবাজারকে ঠিক করতেই হবে। শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানিকে আগ্রহী করতে করছাড় প্রয়োজন। কর কমালে সরকারের রাজস্ব কমে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, চাহিদা থাকলে জোগান আসবেই। বিদ্যমান ব্যবস্থা ভালো কোম্পানির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান বলেন, বর্তমান শেয়ারবাজারে ভালো বিনিয়োগকারীও ২০ শতাংশ লোকসানে, কারও লোকসান ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। আর্থিক প্রতিবেদনে ৬০ শতাংশে বিশ্বাস নেই।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু ইউসুফ বলেন, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক এফআইসি এখনও ঠিকমতো কাজ শুরু করতে পারেনি। বারবার চেয়ারম্যান নিয়োগ হয়েছেন, কর্মী নেই। ডিবিএস নামক ব্যবস্থা শুধু এটি ধারণা দেয় যে, একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম নিরীক্ষা করেছে, তবে তথ্যের সঠিকতার নিশ্চয়তা দেয় না।
ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বাজারে কোম্পানির থেকে মধ্যস্থতাকারীর সংখ্যা বেশি। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের দৈনিক লেনদেন একটি ব্রোকারেজ হাউসের থেকেও কম। বিএমবিএর সদস্য মিনহাজ জিয়া বলেন, পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান নেই। কোনো সরকারের অর্থমন্ত্রীর কাছে এ বাজার গুরুত্ব পায়নি।
- বিষয় :
- শেয়ারবাজার