- টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
- চ্যাম্পিয়ন হতে অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট ১৭৩
চ্যাম্পিয়ন হতে অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট ১৭৩

কে হাসবে শেষ হাসি? অস্ট্রেলিয়া না নিউজিল্যান্ড
প্রথমবার শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। আগের ছয় আসরে কোনবারই শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি এই আসরের দুই ফাইনালিষ্ট। তাই প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে মরিয়া নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরুতে ব্যাট করে উইলিয়ামসনের চোখ ধাঁধানো ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ১৭২ রান। জিততে হলে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ১৭৩ রানের টার্গেট।
শিরোপার লড়াইয়ে টস হারে নিউজিল্যান্ড। টস জিতে স্বাভাবিকভাবেই ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি দলপতি অ্যারন ফিঞ্চ। তাই আগে ব্যাটিং করতে নামে নিউজিল্যান্ড। টস হেরে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওপেন করতে নামেন ড্যারিল মিচেল ও মার্টিন গাপটিল। দ্বিতীয় বলে চার মেরে রানের খাতা খুলেন গাপটিল। প্রথম ওভার থেকে আসে ৯ রান। ম্যাচের তৃতীয় ওভারে গাপটিলের ক্যাচ মিস করেন ওয়েড। পরের ওভারে ওয়েডের ক্যাচেই পতন হয় নিউজিল্যান্ডের প্রথম উইকেটের। হ্যাজলউডের বলে উইকেটের পেছনে এবার আর ক্যাচ নিতে ভুল করলেন না। ৮ বলে ১ ছক্কায় ১১ রান করে ফিরলেন মিচেল। ২৮ রানে ভাঙল নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি।
ফাইনালের মঞ্চে পাওয়ারপ্লেতে বিবর্ণ নিউজিল্যান্ড। প্রথম তিন ওভারে ২৩ রান করা কিউইরা মাত্র ৯ রান করেছে পরের ৩ ওভারে। পাওয়ারপ্লে'র ৬ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ৩২। এবারের বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লে'তে এটাই নিউজিল্যান্ডের সর্বনিম্ন রান।
অজিদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বেশ মন্থর গতিতে ঘুরছে নিউজিল্যান্ডের রান। প্রথম ১০ ওভারে কিউইদের সংগ্রহে ওঠে মাত্র ৫৭ রান। উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর উইলিয়ামসন-গাপটিলে হাল ধরেছে কিউইরা। কিন্তু দলীয় ৭৬ রানে গাপটিলকে সাজঘরে পাঠান জাম্পা। তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্টয়নিসের তালুবন্দী হন গাপটিল। ৩৫ বলে ৩ চারে ২৮ রান করেন কিউই ওপেনার।
১৩তম ওভারে ম্যাক্সওয়েলকে টানা দুই ছক্কা মেরে অর্ধশতক পূরণ করলেন কিউই অধিনায়ক। মাত্র ৩২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে একটি রেকর্ডও তৈরি করে নিয়েছেন উইলিয়ামসন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দ্রুততম অর্ধশতক এটি।
এগারোতম ওভারে স্টার্কের ওভারে জীবন পেয়ে ১৯ রান নিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। ষোলতম ওভারে স্টার্ক ফিরতেই তার ওপর চড়াও হন কিউই অধিনায়ক। বাঁহাতি পেসার খরচ করলেন ২২ রান। পরের ওভারে হ্যাজলউডের বলে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ধরা পড়েন গ্লেন ফিলিপস। ১ চার ও ১ ছক্কার সাহায্যে ১৭ বলে ১৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন ফিলিপস।
দলীয় ১৪৯ রানে শতরান হাতছাড়া করে সাজঘরে ফেরেন উইলিয়ামসন। হ্যাজলউডকে এগিয়ে এসে লং অফে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাটে-বলে ঠিকমতো হলো না তার, ধরা পড়লেন স্টিভ স্মিথের হাতে। ১০ চার ও ৩ ছক্কার সাহায্যে ৪৮ বলে ৮৫ রান করে ক্রিজ ছাড়েন কিউই দলনায়ক। হ্যাজলউড ক্যাচ ছাড়ার সময় ২১ রানে ছিলেন উইলিয়ামসন।
নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ১৭২ রান তুলেছে। শেষ পর্যন্ত ৭ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন জিমি নিশাম। ৬ বলে ৮ রান করেছেন টিম সাইফার্ট। মিচেল স্টার্ক ৪ ওভারে ৬০ রান খরচ করেও কোনও উইকেট তুলতে পারেননি। জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার ১৭৩ রান।
অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড দলে এক পরিবর্তন। চোটে পড়ায় ডেভন কনওয়ের জায়গায় দলে ঢুকেছেন টিম সাইফার্ট।
নিউজিল্যান্ড একাদশ:
মার্টিন গাপটিল, ড্যারিল মিচেল, কেইন উইলিয়ামসন, গ্লেন ফিলিপস, টিম সাইফার্ট, জিমি নিশাম, মিচেল স্যান্টনার, অ্যাডাম মিলনে, টিম সাউদি, ইশ সোধি ও ট্রেন্ট বোল্ট।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ:
ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, মিচেল মার্শ, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা ও জশ হ্যাজলউড।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড উভয় দেশই দারুণ নাটকীয়তায় সেমির বাধা পেরিয়ে এসেছে। প্রথম সেমিতে হটফেভারিট ইংল্যান্ডকে নিশাম-মিচেলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে উড়িয়ে দেয় কিউইরা। আরেক ফেভারিট পাকিস্তানকে অস্ট্রেলিয়া ছিটকে ফেলে ম্যাথু ওয়েড ঝড়ে। দুই প্রতিবেশীর শক্তি ও কৌশলও অনেকটা কাছাকাছি। তাদের খেলার ধরনও প্রায় একই রকম। তাই জমজমাট ফাইনালের প্রত্যাশা ক্রিকেটপ্রেমীদের।
আইসিসি ইভেন্টে সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া। এখন পর্যন্ত মোট ১০টি আইসিসি ফাইনালে ৭টিতে জিতেছে তারা। এর মধ্যে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে রেকর্ড পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো, টি২০ বিশ্বকাপে পুরোপুরি ব্যর্থ তারা। একবার ফাইনালে উঠলেও এখনও কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপের শিরোপার দেখা পায়নি তারা। সে আক্ষেপ ঘোচানোর তাড়না থাকবে ফিঞ্চ-ওয়ার্নারদের।
নিউজিল্যান্ড অবশ্য এই প্রথমবারের মতো টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরে আইসিসি ইভেন্টে দারুণ ধারাবাহিক কিউইরা এ বছরই প্রথম ট্রফির দেখা পেয়েছে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার যন্ত্রণা তারা লাঘব করেছে গত জুলাইয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি জিতে। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে আরও একটি শিরোপা জেতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কেন উইলিয়ামসনরা। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে ৫০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির জন্য ইতিহাস হবে।
কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে দুই দলের সামগ্রিক লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপে একমাত্র মোকাবিলায় জয় পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। তবে বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাস আবার ভিন্ন। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাত্তাই পায়নি কিউইরা।
মন্তব্য করুন