
নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের উদযাপন- টুইটার
মরুর বুকে ইতিহাস গড়ল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাক্সওয়েলের রিভার্স সুইপ শট থার্ডম্যানে দাঁড়ানো ফিল্ডারকে অতিক্রম করতেই পড়িমড়ি করে মাঠে ঢুকে পড়েন স্টয়নিস-ওয়েডরা। অধরা টি২০ বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে উইকেটে থাকা দুই ব্যাটার মার্শ-ম্যাক্সওয়েলকে ঘিরে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেন তারা। নিউজিল্যান্ডের ৪ উইকেটে করা ১৭২ রান ৭ বল হাতে রেখে মাত্র ২ উইকেট খুইয়ে টপকে যায় অসিরা। ৮ উইকেটের জয়ে শিরোপার বৃত্ত পূরণ করল তারা। বুড়োদের দল বলে সমালোচনার মুখে পড়া ফিঞ্চ-ওয়ার্নাররা আরবভূমিতে রূপকথা লিখলেন।
পাঁচবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের শিরোপা জিতল। দুবাইয়ের সবুজ গালিচায় রান তাড়া করতে নেমে এক মুহূর্তের জন্যও আত্মবিশ্বাস হারায়নি অস্ট্রেলিয়া। এমনকি তৃতীয় ওভারে অধিনায়ক ফিঞ্চ ক্যাচ দেওয়ার পরও ভড়কে যায়নি তারা। বরং মিচেল মার্শ উইকেটে আসার পর রানের গতি বাড়ে। ডেভিড ওয়ার্নার মারতে শুরু করলে যে কোনো বোলারকেই অসহায় মনে হয়। সাউদি-নিশামদের অবস্থাও তেমনি হয়েছিল। ওয়ার্নার ও মার্শ মরুর বুকে রীতিমতো ঝড় তোলেন। ইশ সোধি, অ্যাডাম মিলনেদের নিয়ে ছেলেখেলা করেন তারা দু'জন। আইপিএলে যে ওয়ার্নারকে একাদশের বাইরে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল, বিশ্বকাপের শুরুতে যিনি ছন্দে ছিলেন না, সেই তিনিই ৩৮ বলে ৫৩ রান করে ফাইনালের গতিপথ ঠিক করে দিলেন। শেষ তিনটি ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টের খেতাবও জিতে নিলেন তিনি। ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন মিচেল মার্শও। ৫০ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ওয়ার্নার ও মার্শের ৫৯ বলে ৯২ রানের জুটিই ম্যাচের ফয়সালা করে দেয়। তবে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও টস জিতে আসল কাজ করে দেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ।
টস জিততে না পারা নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন। তার ৪৮ বলে ৮৫ রানের ইনিংসটিতেই টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্কোর দাঁড় করিয়েছিল কিউইরা। কিন্তু শেষ হাসি হাসতে পারেননি উইলিয়ামসন। এবারের বিশ্বকাপে প্রায় নিয়মে পরিণত হওয়া টসে জয়ী অস্ট্রেলিয়ানরাই ট্রফিও জেতে। টস হারা কিউইরা প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেটে ৫৭ রান তোলে। এর মধ্যে পাওয়ার প্লেতে তোলে মাত্র ৩২, যা এবারের বিশ্বকাপে কিউইদের সর্বনিম্ন। তবে ১০ ওভার শেষে জ্বলে ওঠেন উইলিয়ামসন। প্রথম ১৯ বলে ১৮ রান করলেও পরের ২৯ বলে ৬৭ রান করেন তিনি। টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ডও করেন তিনি। আগের রেকর্ডটি ছিল কুমার সাঙ্গাকারার, ২০১৪ সালে মিরপুরের ফাইনালে ৩৩ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। গতকাল দুবাইয়ে ৩২ বলে পঞ্চাশে পৌঁছান উইলিয়ামসন। ফাইনালে কোনো অধিনায়কের এটি সর্বোচ্চ ইনিংসও। অবশ্য রেকর্ড ইনিংসটি খেলার পথে ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন উইলিয়ামসন। ২১ রানের সময় মিচেল স্টার্কের বলে ফ্লিক করে ফাইন লেগ সীমানায় ক্যাচ দিয়েছিলেন; কিন্তু সেটি ধরে রাখতে পারেননি জস হ্যাজেলউড। তবে ক্যাচ মিস করলেও বোলিং দিয়ে পুষিয়ে দিয়েছেন এ পেসার। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে উইলিয়ামসনসহ ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। জীবন পেয়েছিলেন মার্টিন গাপটিলও। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ১১ রানের সময় ম্যাক্সওয়েলের বলে তার ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েড। শেষ পর্যন্ত ৩৫ বলে ২৮ রানে আউট হন গাপটিল।
ফাইনালেও রান তাড়া করা দল যে সুবিধা পেতে যাচ্ছে, সেটা ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা গিয়েছিল। অসি স্পিনার ম্যাক্সওয়েল ঠিকমতো বল ধরতেই পারছিলেন না। শিশিরে ভিজে চুপচুপে হয়ে যাওয়া বল বারবার তার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছিল। এমন কন্ডিশনে টসে জেতাটাই যেন শিরোপার নিশ্চয়তা। এ কারণেই টসে জেতার পর আকণ্ঠ বিস্তৃত হাসি ফুটে উঠেছিল অসি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের মুখে। এবার আসল খেলাটা খেলেছে সন্ধ্যার পর আরব আমিরাতের আকাশ ভরে বৃষ্টির মতো ধেয়ে আসা শিশির। যে কারণে মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে মুদ্রা নিক্ষেপ। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছিল, টসে যে জয়ী হবে, ম্যাচও যেন সে-ই জিতবে। ব্যাট-বলের লড়াই যেন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। পরিসংখ্যানেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়। এবারের বিশ্বকাপে ফাইনালের আগে পর্যন্ত ৪৪ ম্যাচের মধ্যে ২৯টিতে টস জয়ী দল জিতেছে। তবে ফাইনালের ভেন্যু দুবাইয়ের ক্ষেত্রে টস যেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দুবাইয়ে আয়োজিত ১২টি ম্যাচের মধ্যে ১১টিতেই টস জয়ী দল জিতেছে। যারা টসে জিতেছিলেন তারা সবাই ফিল্ডিং নিয়েছিলেন এবং জয়ী হয়েছিলেন। ফাইনালেও এর ব্যতিক্রম হলো না।
ফিঞ্চের ভাগ্যর কথাও আলাদাভাবে বলতে হবে। মহাগুরুত্বপূর্ণ টসের খেলায় তিনি সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও জয়ের মুখ দেখেছেন। শুধু তাই নয়, সেমির টিকিট পাওয়ার জন্য সুপার টুয়েলভে যে ম্যাচটি বাঁচা-মরার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল, সেই ম্যাচে উইন্ডিজের বিপক্ষে টসে জিতেছিলেন ফিঞ্চ। এ ছাড়া বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও টসে জিতেছিলেন তিনি এবং ম্যাচও জিতেছিলেন। কেবল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টসে হেরেছিলেন তিনি, একমাত্র সে ম্যাচটিই হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া।
মন্তব্য করুন