দেশেই ক্লাউড ডেটা সেন্টার

বঙ্গবন্ধু হাই- টেক সিটিতে বাংলাদেশের প্রথম ক্লাউড ডেটা সেন্টার ‘মেঘনা ক্লাউড’
সাব্বিন হাসান
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩:৩৯ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৯:৪৪
বাংলাদেশকে আর শুধু বিদেশি ডেটা স্টোরেজের ওপর নির্ভর করতে হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ ডেটা সিঙ্গাপুর সার্ভারের মাধ্যমে প্রবেশ করে, যা দুই স্তরের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই- টেক সিটিতে বাংলাদেশের প্রথম ক্লাউড ডেটা সেন্টার ‘মেঘনা ক্লাউড’ পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছে জেননেক্সট টেকনোলজিস। সার্ভার, স্টোরেজ, নেটওয়ার্কিং সরঞ্জাম ও সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার প্রযুক্তি ছাড়াও প্ল্যাটফর্মটি ক্লাউড পরিষেবা পরিকাঠামো সেবা নিশ্চিত করবে। যার মাধ্যমে দেশের তথ্য-উপাত্ত দেশের ভেতর থেকেই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
এতে ক্লাউড প্রযুক্তি ক্রয় ও ব্যবহারে বার্ষিক বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে উদ্যোক্তারা জানান। মাত্র এক বছরের মধ্যে ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর জেননেক্সট মেঘনা ক্লাউডের জন্য বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের (বিডিসিসিএল) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় জেননেক্সট মেঘনা ক্লাউড নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে বিডিসিসিএলের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি খাতে ক্লাউড সেবা বিক্রয় ও বিপণন নিশ্চিত করবে।
সরকারি-বেসরকারি খাতের উদ্যোগে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ ক্লাউড’ কৌশলগত অংশীজনের চমৎকার উদাহরণ। যার মাধ্যমে দেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারবে। অন্যদিকে ডিজিটাল তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে মেঘনা ক্লাউড ডেটা সেন্টার পরিদর্শনে গিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এসব কথা বলেন।
ক্লাউড ডেটা সেন্টারটি অন্যসব দেশ থেকে ক্লাউড প্রযুক্তি ক্রয় ও ব্যবহার ব্যয় হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে সহায়ক হবে। কারণ এখন থেকে বাংলাদেশকে আর শুধু বিদেশি ডেটা স্টোরেজের ওপর নির্ভর করতে হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ ডেটা সিঙ্গাপুর সার্ভারের মাধ্যমে প্রবেশ করে, যা দুই স্তরের চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। প্রথমত, প্রচলিত ব্যবস্থায় পুরো ডেটা অ্যাকসেস থাকে সিঙ্গাপুর সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সুতরাং কোনো সংবেদনশীল তথ্য পুনরুদ্ধার করতে বাড়তি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। দ্বিতীয়ত, ডেটা স্থানান্তরের খরচ বেশি হয়। কারণ স্থানান্তর পদ্ধতিকে সুদীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করতে হয়; যা সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে প্রায় ৬০ মিলিসেকেন্ড সময় লাগে। যদি ডেটা সেন্টারগুলো দেশের সীমানার ভেতরেই থাকে, তবে উল্লিখিত দুটো সমস্যারই সহজ সমাধান নিশ্চিত হয়।
জেননেক্সট টেকনোলজিসের ভাইস চেয়ারম্যান জাভেদ অপগেনহেপেন বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ক্লাউড প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে; সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী। ক্লাউড প্ল্যাটফর্মটি স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
জেননেক্সট টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলাভী আজফার চৌধুরী বলেন, মেঘনা ক্লাউড এমন নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের প্রত্যাশা করছে, যা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে তথ্যের সর্বোচ্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে সরকার বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে বাংলাদেশের মধ্যে বৃহত্তম ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে, যা পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড। পরিদর্শনকালে আইসিটি সচিব মো. সামসুল আরেফিনকে ক্লাউড সেন্টারের সার্বিক কার্যক্রম অবহিত করেন জেননেক্সট টেকনোলজিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী, জেননেক্সট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলাভী আজফার চৌধুরী। ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম স্থাপনে জেননেক্সট সময়োপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, যা পরিচালনে কাজ করছে নিজস্ব দক্ষ কর্মী বাহিনী।
জেননেক্সট টেকনোলজিসের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ পদক্ষেপকে মেঘনা ক্লাউড যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রও স্থাপন করছি।
গৃহীত উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে ক্লাউড প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ফলে সুদক্ষ প্রযুক্তি কর্মী তৈরি হবে বলে জানান তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী।