বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা

ফাইল ছবি
সাব্বিন হাসান
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৪৪ | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৪৫
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী মাত্রই সবার ইচ্ছা থাকে বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মের নতুন প্রযুক্তি কোথায় পৌঁছেছে, তা জানা এবং কাছ থেকে তার স্বরূপ অভিজ্ঞতা নেওয়া। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ পান। অভূতপূর্ব প্রযুক্তি দেখা ও শেখা ছাড়াও সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগীদের সঙ্গে অংশ নেওয়া, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, কারিকুলাম ও শিক্ষার বিষয়ে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবছর হুয়াওয়ে আইসিটি প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নেয়। বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার এ আয়োজন করে উদ্যোক্তারা। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এশিয়া প্যাসিফিক (এপিএসি) পর্বে তৃতীয় স্থান অর্জন করে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীর দল।
প্রতিযোগিতায় নেটওয়ার্কিং বিভাগে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী হলেন রুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শুভম আগরওয়ালা, রাকেশ কর ও মো. মাজহারুল ইসলাম।
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এশিয়া প্যাসিফিক পর্বে অংশ নেওয়ার পর গত মে মাসের শেষে চীনের শেনজেনে গ্লোবাল রাউন্ডে অংশ নেয় দলটি। জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন বিজয়ী দলের শুভম আগরওয়ালা।
সব শেষ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারের বেশি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
প্রতিযোগিতায় নেটওয়ার্ক ট্র্যাক, ক্লাউড ট্র্যাক, কম্পিউটিং ট্র্যাক ও ইনোভেশন ট্র্যাক– চারটি গ্রুপে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল। প্রতিটি ট্র্যাকে ১০ জন শিক্ষার্থীকে তাদের অধ্যয়ন ও পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ পর্বে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। নেটওয়ার্ক ট্র্যাকে অংশ নিয়ে এশিয়া প্যাসিফিকে তৃতীয় স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ দল। পরে চীনে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল রাউন্ডে অংশ নেয় তারা।
শূন্য থেকে যাত্রা
বিশ্বব্যাপী আইসিটি প্রতিযোগিতার আটবারের উদ্যোক্তা হুয়াওয়ে। বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। করোনার কারণে আগেরবারের প্রতিযোগিতা অনলাইনে করা হয়। তাই সব শেষ প্রতিযোগিতার বিষয়টি ছিল অভিনব।
সিডস ফর দ্য ফিউচারের মতো এটার বিষয়ে তেমন কিছুই জানা ছিল না। ফলে শিক্ষকদের কাছ থেকে আইসিটি প্রতিযোগিতার বিষয়ে বিশদ জানতে সেমিনারে অংশ নেওয়া। প্রতিযোগিতার জন্য পথপ্রদর্শনীর অংশ হিসেবে সেমিনারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিযোগিতার সবকটি ধাপ ও বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত একবার বৈশ্বিক কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রুয়েট ও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার তীব্র ইচ্ছা কাজ করে। ফলে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নিবন্ধিত হই। সিএসইতে নেটওয়ার্ক বিষয়ে একটা প্রশিক্ষণ ছিল। আবার পছন্দের বিষয় ছিল নেটওয়ার্ক। সংগত কারণেই জানাশোনা ট্র্যাকে অংশ নিই।
যখন প্রতিযোগিতা
নেটওয়ার্ক ট্র্যাকের মধ্যে ডব্লিউ-ল্যান, ডেটাকম ও ওয়েবসিকিউরিটি– তিনটি বিষয়ের ওপর প্রধান কাজ ছিল। তখন থেকেই প্রতিদিনই একটু একটু করে সবকটি লার্নিং টুলস নিয়ে জানার চেষ্টা করি। কিছুদিন পরই হয় মূল্যায়ন পরীক্ষা। শুরু হয় প্রতিযোগিতার প্রথম পর্ব। সারাদেশের প্রতিযোগীদের নিয়ে অনলাইনে পর্ব শুরু হয়। অনলাইনে এভাবে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব, এটা ভাবিনি। পুরো পরীক্ষার সময়ে থাকতে হয়েছে অনলাইনে। কিছুদিন পরই নিজেকে শীর্ষ তালিকায় দেখতে পাই। ওই তালিকা থেকে আরও দু’জনকে নিয়ে নেটওয়ার্ক ট্র্যাকের জন্য তিনজনের দল গঠিত হয়। দলের অন্য দু’জন রাকেশ কর ও মো. মাজহারুল ইসলাম। জাতীয় পর্বের পর শুরু হয় আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা। সবাই একটা করে ক্যাটেগরি ভাগ করে ওই ক্যাটেগরির বিষয়ে বিশদভাবে জানার চেষ্টা করি। সবকটি বিষয়ে ধারণা থাকলে কোনো কারণে পরীক্ষার সময় একজন আটকে গেলে যেন অন্য কেউ সহযোগিতা করতে পারেন। ডেটাকমের বেসিক, সুইচ ও রাউটিং প্রযুক্তি, ইনফরমেশন সিকিউরিটি, ভিপিএন টেকনোলজি, ক্লাউড টেকনোলজি, সিকিউরিটি অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স, নেটওয়ার্কিং প্ল্যান, হুয়াওয়ের ক্লাউড ক্যাম্পাস সল্যুশন্স ক্যাটেগরির কয়েকটি বিষয়ে ধারণা থাকা জরুরি।
আঞ্চলিক পর্বে লিখিত ও ল্যাব– দুই ধাপে পরীক্ষা হয়। সকাল-বিকেল মিলিয়ে ৯০ মিনিট লিখিত ও চার ঘণ্টা ল্যাব পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। প্রতিযোগিতার প্রথম ল্যাব পরীক্ষায় তিনজন ছিলাম তিন জেলায়।
পরীক্ষায় মোট চারটি টাস্ক ছিল। তিনজন রাতেই কে কীভাবে কোন কাজ করব– তা আলোচনা করে ঠিক করি। কারণ এটা নিয়ম ছিল, একজন পরীক্ষা দেবেন আর বাকি দু’জন তাঁকে ডকুমেন্ট দিয়ে সহায়তা করবেন।
পরীক্ষার তিন সপ্তাহ পরে হুট করে হুয়াওয়ে থেকে ফোন দিয়ে জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়া প্যাসিফিকে অংশ নিতে আমরা নির্বাচিত হয়েছি। মনে হলো, স্বপ্নটা শেষমেশ সত্য হতে চলেছে।
এপিএসি পর্বে ১৪টি দেশের ৬ হাজার ৪০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাই ভয় ছিল ফিরে যাওয়ার। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার দিন মঞ্চে যখন বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয়, তখন সবাই যেন আনন্দে আত্মহারা। বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে সম্মানিত করেছি, দারুণ অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে ওড়াতে মঞ্চে উঠলাম গর্ব নিয়ে।
সারাবিশ্ব থেকে আসা মিডিয়া, আইসিটি অ্যানালিস্টস, আন্তর্জাতিক সংগঠনের কর্মকর্তা ও অন্যদের সামনে বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে! সামনে অসংখ্য ক্যামেরার ফ্ল্যাশ আর হলভরা দর্শনার্থীর করতালি। অনুভূতি যেন ভাষাহীন। বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে সম্মানিত করার অনবদ্য সুযোগ হুয়াওয়ে করে দিয়েছে। এমন প্রতিযোগিতা যে শুধু বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান সমৃদ্ধ করে, তা কিন্তু নয়। প্রতিযোগীর জন্য এমন আয়োজন সারাবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, দেশভিত্তিক ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ সামনে আসে। শিক্ষার্থীকে প্রতিযোগিতা তার কর্মজীবনে এগিয়ে রাখতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। আরও একবার প্রতিযোগিতার বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
- বিষয় :
- শিক্ষার্থীরা