ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

হুটহাট ডাউনলোডে যত বিপত্তি!

হুটহাট ডাউনলোডে যত বিপত্তি!

ডাউনলোডে যত বিপত্তি

সাব্বিন হাসান

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:৩৩ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | ১৩:৪৮

স্মার্টফোনে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড। মাঝেমধ্যে এই সিস্টেমে অজান্তেই প্রবেশ করে অপ্রত্যাশিত লিঙ্ক। ছড়িয়ে যায় শঙ্কা। ডিজিটাল লেনদেনে স্মার্টফোনই অনেকের ভরসা। তাই প্রয়োজন নিশ্চিত সুরক্ষা। লিখেছেন সাব্বিন হাসান

সাইবার চক্রের নতুন শঙ্কার নাম এপিকে। ভেঙে বললে হয়, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজ বা এপিকে। নতুন ঘরানার সাইবার আক্রমণে বিশেষ এ ফাইল শনাক্ত করেছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। বহু কায়দায় ‘এপিকে’ ফাইল ডাউনলোডে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা চলে সবখানে। স্মার্টফোন বা ল্যাপটপে কোনোভাবে এ ধরনের ফাইল ডাউনলোড করলেই তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য হাসিল করবে প্রতারক চক্র; তা হোক আর্থিক বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক উদ্দেশ্য।

অনুপ্রবেশের প্রথমেই স্মার্ট ডিভাইসটি চলে যাবে সাইবার প্রতারক চক্রের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে। ঠিক তখন থেকেই শুরু হবে ব্ল্যাকমেইল। অনেক চক্র আবার সরাসরি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেহাত করে নেয়। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে ফটো বা ভিডিও গ্যালারি। সম্ভাব্য সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করবে বারবার।

বিশেষ চক্রটি আগে কোনো ব্যাংক-বীমা বা অন্য কোনো পরিষেবা দাতার সার্ভিস নাম ভাঙিয়ে এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ছড়াত। ওই সব লিঙ্কে নীরব ঘাতক হয়ে থাকত ম্যালিশিয়াস, যা ক্লিক করা মাত্রই ঘটত বিপদ। তবে সেই ছকটা এখন কিছুটা বদলেছে।

সুনির্দিষ্ট ব্যাংক বা পরিষেবার লোগো ও সিল ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে অনেক ঘটনায়। কখনও আবার অন্য সব সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে চলে প্রচেষ্টা।

বিশেষ উদ্দেশ্যে গ্রাহক কখনও রিওয়ার্ড পয়েন্ট জিতবে, কখনও অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এপিকে ফাইল ছড়ানো হয় নিত্যনৈমিত্তিক। ওই ফাইল যে কারও স্মার্ট গ্যাজেটে কোনোভাবে একবার রান করাতে পারলেই কেল্লাফতে। মিলবে প্রবেশাধিকার; ঘটবে বিপত্তি।

সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিনব এপিকে ফাইলের আকারে খুবই কম জায়গা দাবি করে, যার আকার অনেক সময় কিলোবাইট হয়। আবার অনেক সময় মেগাবাইট হয়। ফলে একবার ওই ফাইলের ফাঁদে পড়ে ক্লিক করলে খুব দ্রুত তা ইনস্টল হয়ে যাবে নিজের গ্যাজেটে। আর ঝটপট তা আক্রান্ত ডিভাইসে রান করাতে শুরু করবে।

ভুক্তভোগী অধিকাংশের ধারণা, কোনো ব্যাংকের অফিসিয়াল সাইট বা হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস অ্যাকাউন্ট থেকে ফাইলটি পাঠানো হয়েছে। তাই ডিভাইসে এটি ইনস্টল হলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। বিপত্তির শুরু ঠিক ওখানেই।

অভিযোগের বেশির ভাগ সময় দৃশ্যমান হয়, ত্রুটিযুক্ত এপিকে ফাইলটি রান করানোর পরেই আক্রান্ত গ্যাজেটটি হঠাৎ ‘ব্ল্যাঙ্ক’ বা ‘ব্ল্যাক’ হয়ে গেল। তার পর হয়তো কোনোভাবেই গ্যাজেটটি ব্যবহার করতে পারছেন না, এমনকি তাকে বন্ধও (শাটডাউন) করতে পারছেন না। ঠিক ওই সুযোগেই স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের সব ধরনের (অডিও, ভিডিও বা ভয়েস) ডেটা হাতিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করে সাইবার চক্র।

ঘটনা এমনও ঘটতে পারে, ফাইলটি ডাউনলোড ও রান করানোর পরও ডিভাইসটির দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নজরে এলো না। হয়তো ওই গ্যাজেট থেকেই ব্যাংকিং ট্রানজেকশন বা সোশ্যাল মিডিয়া সার্ফিং সব কাজই করেছেন। ঘটনার প্রতিটি ধাপে তথ্য বাগিয়ে নিতে পারে প্রতারক চক্র। আবার এমনও হতে পারে, ওই এপিকে ফাইলটি ডাউনলোড করার সময় নিজের অজান্তেই ডিভাইসের ক্যামেরা, মেসেজ, কনটাক্ট, জিপিএস– সবকিছু ব্যবহারের অনুমতি পেয়ে গেল।

ফলে প্রতারক চক্র ডিভাসটি তাৎক্ষণিক হ্যাক করে ডিভাইসটির সব ধরনের চলাফেরার ওপর নজরদারি বসিয়ে দিল। অথচ আক্রান্ত ব্যক্তি তা বুঝেই উঠতে পারলেন না। অতি গোপনে ঘাপটি মেরে অনলাইন ওয়ালেট বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাবা বসাতে পারে।

বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজনে সাইবার বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, নিজের ব্যবহৃত স্মার্ট ডিভাইসে অবশ্যই অনুমোদিত অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টিম্যালওয়্যার সক্রিয় রাখতে হবে। ফলে অনেকাংশে ক্ষতিকর এপিকে ফাইল ডাউনলোড করার আগে ডিভাইস থেকে ওয়ার্নিং মেসেজ দৃশ্যমান হবে, যা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।

স্মার্টফোন বা ল্যাপটপে দৃশ্যমান হওয়া যে কোনো সতর্কবার্তা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। তা না হলে ফাইলটি হুট করেই ডিভাইসে ডাউনলোড হয়ে যাবে। ডিজিটাল লেনদেনে জড়িত সব ব্যাংক কর্তৃপক্ষই সতর্কবার্তায় বলেন, তারা কখনোই এমন ধরনের ফাইল পাঠিয়ে গ্রাহককে ডাউনলোড করার অনুরোধ করেন না। 

তাই যে কোনোভাবে আসা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজ (এপিকে) ফাইল হুটহাট বিবেচনা না করে ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বেখেয়ালে যেন এমন ধরনের ফাইল নিজের ডিভাইসে আশ্রয় না পায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন

×