ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

ডিজিটাল ডিটক্স!

ডিজিটাল ডিটক্স!

দিন নেই, রাত নেই– যেন শুধুই ডিজিটাল জগতে বুদ হয়ে থাকা

সাব্বিন হাসান

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:৪৬ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ২০:৪৭

সারাবিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বেড়াচ্ছে হাজারো ডিজিটাল হাতছানি, যার ঘোরে একবার প্রবেশ করলে পরিত্রাণের সুযোগ নেই। দিন নেই, রাত নেই– যেন শুধুই বুদ হয়ে থাকা। যার কারণে নিজের অজান্তেই ঘটছে শারীরিক বিপত্তি। বাড়ছে ব্যথা আর অস্বস্তি। নষ্ট হচ্ছে ঘুম। বাড়ছে বিরক্তি। নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে মেজাজ। কিন্তু কেন এমন ঘটছে! তা নিয়ে লিখেছেন সাব্বিন হাসান

স্মার্টফোনের ব্যবহার দিন দিন অপ্রতিরোধ্য রূপ ধারণ করেছে। বহুজাতিক কয়েকটি গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, স্মার্টফোন দৃষ্টিশক্তির ওপর উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। শারীরিক ব্যথার বিশেষ কারণ এখন স্মার্ট ডিভাইসের যথেচ্ছ ব্যবহার।

স্মার্টফোনের কারণে শিশুর বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি ব্রেইনেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে স্মার্টফোন। গবেষণা বলছে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর বয়সের ভার বাড়াতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। সারা শরীরে ব্যথার খোরাক জোগাচ্ছে। কখনও  কখনও ব্যথা তীব্র হয়ে উঠছে।

জানা গেছে, গবেষণায় কয়েকশ শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। স্মার্টফোনে আসক্ত এমন শিক্ষার্থীকে গবেষণার জন্য নির্বাচিত করা হয়। সবাই ঘাড়, কনুই, কাঁধ ও হাতে ব্যথা অনুভূত হওয়ার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এমন ব্যথার নাম মাস্কুলোস্কেলিটাল পেইন। সহজ ভাষায়, অস্থি ও পেশির তীব্র ও অসহনীয় যন্ত্রণা। গবেষকরা বলছেন, নিয়ম না মেনে বা যথেচ্ছ মোবাইল ধরে দীর্ঘ সময়ে ব্যবহার করার ফলেই এমন ব্যথার উদ্ভব হয়। গবেষণা রিপোর্ট বলছে, ৪৩.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ঘাড়ের সমস্যায় ভুগছেন। কাঁধে ব্যথা অনুভব করছেন ৪২.৯ শতাংশ। কনুই নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন ২৭.৯ শতাংশ। সমীক্ষা বলছে, ৬৯.২ শতাংশ শিক্ষার্থী মৃদু থেকে অধিকাংশ সময়ে স্মার্টফোনে আসক্ত।

ব্যথার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয় বেকায়দায় ভুলভাবে মোবাইল ধরা। মূলত এমন কারণেই শরীরের কয়েকটি স্থানে ব্যথা অনুভূত হয়। স্মার্টফোনে আসক্ত ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি ব্যথা ধরা পড়ে মাথা ও মেরুদণ্ডে। দুই হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিন স্ক্রলিং ব্যথার প্রধান কারণ। দ্রুত এ বদভ্যাস না ছাড়লে ব্যথা দিন দিন সারাশরীরে ছড়িয়ে পড়বে। সুতরাং যারা স্মার্টফোনে দিন-রাত আসক্ত, তাদের জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতে কাজ করছেন গবেষকরা।

উল্লিখিত সব ধরনের ব্যথা থেকে রেহাই পেতে যথাযথভাবে মোবাইল ধরার ওপর জোর দিচ্ছেন গবেষকরা। পরামর্শে বলছেন, হ্যান্ড ডিভাইস সব সময় চোখের বরাবর ধরতে হবে। মাথা থাকবে সোজা। সোজা রাখতে হবে মেরুদণ্ড। উল্লিখিত নিয়মে হ্যান্ড ডিভাইস ধরতে পারলে ব্যথা অনেকাংশে কমে আসবে। ৩০ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বে ডিভাইসে টাইপ করলে কমবে পিঠ ও কাঁধের যন্ত্রণা।

আবার কাজের সঙ্গে এমন ব্যথার যোগসূত্র আছে। কাজের সূত্রে যদি লম্বা লম্বা কল নিতে হয়, তাদের উদ্দেশ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, মুখ ও কানকে যতটা সম্ভব ফোন থেকে দূরত্বে রাখা। দীর্ঘ সময়ের কল নিয়ে কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন। সম্ভব হলে অবশ্যই হেডফোন ব্যবহার করতে হবে।

টাইপের প্রয়োজনে দুই হাতের বুড়ো আঙুল কাজে লাগাতে হবে। এক হাতে টাইপ অনেক রকমের ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্ক্রিন থেকে প্রতি ২০ মিনিট অন্তর চোখ সরাতে হবে। ঠিক ২০ ফুট দূরের কোনো জিনিসকে ২০ সেকেন্ড ভালো তাকিয়ে থাকতে হবে। তার পর আবার স্ক্রিনে চোখ ফিরিয়ে আনতে হবে। পরামর্শ মানলে চোখের ব্যথা অনেকাংশে কমে আসবে। কমবে অন্যসব ব্যথা। যুক্তরাষ্ট্রের একাডেমি অব অফথামোলজির সমীক্ষা বলছে, ২০ সেকেন্ড চোখকে বিরতি (রিসেট) করলে চোখ সত্যিকার অর্থেই আবারও কাজের জন্য সতেজ হয়।

গবেষণা ও পরামর্শ থেকে দৃশ্যমান হয়, ডিজিটাল ডিভাইসকেন্দ্রিক যে কোনো সমস্যা থেকে পরিত্রাণের সহজ উপায় আছে নিজের কাছেই। তাই ডিভাইস ব্যবহারে বদভ্যাসকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন, তার সমাধান নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে।

আরও পড়ুন

×