২০১৯ সালে গ্রাহকের অধিকাংশ অভিযোগের সমাধান দেয়নি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও টেলিটক। তবে বাংলালিংক গ্রাহকের ৫০ শতাংশের বেশি অভিযোগের সমাধান দিয়েছে। অন্যদিকে গ্রাহককে কোনো সমাধান না দিয়ে সমস্যা সবচেয়ে বেশি ঝুলিয়ে রেখেছে গ্রামীণফোন। বিটিআরসির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কল সেন্টার থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে সদ্য বিদায়ী ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে চার অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের গ্রাহকদের অভিযোগ ও সেসবের সমাধান সংখ্যার হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। কতটি অভিযোগ ঝুলিয়ে রাখা হয় তারও উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, গত বছরের শেষ পাঁচ মাসে গ্রামীণফোন ও রবির গ্রাহকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে গ্রাহকের অভিযোগ সংখ্যা ছিল তিন হাজার ১১১টি। এর মধ্যে গ্রামীণফোন সমাধান দিয়েছে ৮৪৯টির। সমাধান দেয়নি ৩৭৩টির। এ ছাড়া কোনো সমাধান না দিয়ে গ্রাহককে ঝুলিয়ে রেখেছে এক হাজার ৮৮৯টি অভিযোগের ক্ষেত্রে। দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটর রবির মোট অভিযোগ সংখ্যা ছিল চার হাজার ৮০৭টি। এর মধ্যে দুই হাজার ২২৫টি অভিযোগের সমাধান পেয়েছেন গ্রাহকরা, সমাধান দেওয়া হয়নি দুই হাজার ৫৮২ জন গ্রাহককে। কোনো সমাধান না দিয়ে গ্রাহককে ঝুলিয়ে রাখা হয় ছয়টি অভিযোগের ক্ষেত্রে।

তৃতীয় শীর্ষ অপারেটর বাংলালিংকে গত বছর গ্রাহক অভিযোগের সংখ্যা ছিল এক হাজার ২৭৪টি। এর মধ্যে ৬৮৪টি অভিযোগের সমাধান দিয়েছে বাংলালিংক; সমাধান দেয়নি ৫৯০ জন গ্রাহকের। কোনো সমাধান না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে ৪৯ জন গ্রাহককে। টেলিটকের গ্রাহক অভিযোগের সংখ্যা ছিল এক হাজার ১০২টি। এর মধ্যে টেলিটক মাত্র ১২৮ জন গ্রাহকের সমস্যার সমাধান দিয়েছে, সমাধান দেয়নি ৯৭৪ জন গ্রাহকের। কোনো সমাধান না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে ছয়জন গ্রাহককে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রামীণফোন ও রবির ক্ষেত্রে এপ্রিল মাসের পর থেকে গ্রাহক অভিযোগের সমাধান দেওয়ার সংখ্যা কমেছে। অন্যদিকে বাংলালিংক ও টেলিটকের ক্ষেত্রে প্রায় একই হারে বছরজুড়ে অভিযোগ এসেছে।

এ প্রতিবেদনের ব্যাপারে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ হাসান সমকালকে বলেন, গ্রামীণফোন গ্রাহকদের কাছ থেকে আসা অভিযোগের ৯৯ শতাংশই সমাধা করেছে। বিটিআরসির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনেই এ চিত্র উঠে এসেছে। গ্রাহকসেবায় গ্রামীণফোন একটি দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ টিম গড়ে তুলেছে এবং গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, এই প্রতিবেদন অনুযায়ী রবির প্রায় চার কোটি গ্রাহকের মধ্যে মোট অভিযোগের সংখ্যা মাত্র চার হাজার ৮০৭টি বা মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। অর্থাৎ, মোট গ্রাহকসংখ্যার বিচারে অভিযোগের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য, যেটা অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে অনেক বেশি। তিনি বলেন, গ্রাহক যদি ইন্টারনেট চালু, কোনো নতুন প্যাকেজ কিংবা রবি অ্যাপ সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে সেটার সমাধান করা যায় না কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই সমাধান দেওয়া যায় না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, গ্রাহকসংখ্যার অনুপাতে নেটওয়ার্ক সক্ষমতা যতটা বাড়ানো দরকার, সেটা না হওয়া। বিটিআরসির এনওসি বন্ধের কারণে নেটওয়ার্কের কারিগরি উন্নয়ন ও ত্রুটি দূর করার মতো কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। যেখানে নতুন বিটিএস প্রয়োজন সেখানে তা স্থাপন করাও সম্ভব হচ্ছে না। আবার এমএনপি (নম্বর না বদলে অপারেটর বদলের সেবা) সেবার ক্ষেত্রে অন্য অপারেটর থেকে কোনো গ্রাহক রবিতে আসতে চাইলে সংশ্নিষ্ট অপারেটর অভিযোগ দিচ্ছে এবং তার সমাধান না করে দীর্ঘ সময় ঝুলিয়ে রাখছে। এক্ষেত্রেও গ্রাহক কার্যত সমাধান পাচ্ছেন না।

এদিকে বিটিআরসির পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত চারটি অপারেটরের মোট গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে ৩০ লাখ ছয় হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে সাত লাখ ৮৫ হাজার, রবির বেড়েছে আট লাখ তিন হাজার। অর্থাৎ অডিট নির্ধারিত পাওনা আদায়ের কারণে প্রায় ছয় মাস ধরে বিটিআরসির এনওসি বন্ধের শাস্তির আওতায় থাকা গ্রামীণফোন ও রবির মোট গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার, যা মোট গ্রাহক বৃদ্ধির তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি।