ই-বর্জ্য হবে সম্পদ, সুরক্ষিত হবে পরিবেশ

বিআইজেএফ উদ্যোগে ই-বর্জ্য দিবসের সভায় উপস্থিত মন্ত্রী ও বক্তারা।
সাব্বিন হাসান
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:১৪ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩ | ০৭:০২
বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ব ‘ই-বর্জ্য দিবস’ ২০২৩। দিবসের মূল প্রতিপাদ্য— রিসাইকেল এনিথিং উইথ এ প্লাগ, ব্যাটারি অ্যান্ড ক্যাবল। অর্থাৎ ই-বর্জ্য রিসাইকেল করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। যা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব। সঠিক পদ্বতিতে ই-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করতে পারলে আলোচিত বর্জ্যই রূপান্তরিত হতে পারে সম্পদে বা নতুন করে ব্যবহারযোগ্য পণ্যে। প্রতিপাদ্য নিয়ে র্যালি এবং আলোচনা সভার মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শুরু করে র্যালি শেষ হয় দোয়েল চত্বরে। র্যালি শেষে বিশ্ব ‘ই-বর্জ্য দিবস’ উপলক্ষে বিশেষ আলোচনার সভার আয়োজন করে বিআইজেএফ। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি, জেআর রিসাইকেলিং সল্যুশন লিমিটেড এবং এনএইচ এন্টারপ্রাইরেজর সহযোগিতায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশনের হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) এবং বর্তমান্ এফবিসিসিআইয়ের ইনোভেশন এবং রির্সাচ সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাণিজ্যিক মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল ডিজিটাল কমার্স সেলের উপ-পরিচালক,মোহাম্মদ সাইদ আলী, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকার, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক উপস্থিত ছিলেন। সন্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি শাহিদ-উল-মুনীর এবং বাক্কোর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের ডিন এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি) বিভাগের অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন।
বিআইজেএফ সভাপতি নাজনীন নাহারের সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে সঞ্চালনায় ছিলেন সার্ক সিসআইয়ের নির্বাহী সদস্য শাফকাত হায়দার।
প্রাথমিক স্কুল থেকেই সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সবার আগে ই-বর্জ্যের ঠিকানা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। একইসঙ্গে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে অবিলম্বে স্বতন্ত্র ই-বর্জ্যে বিন স্থাপনে তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বোরোপ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে ই-বর্জ্য কমানো ও ব্যবস্থাপনায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা দরকার। শুধু যদি ইন্টারনেট ক্যাবল শেয়ারিং চালু করা যায়; তবে এই তারের ব্যবহার শতভাগের এক ভাগে নেমে যাবে। ফলে বর্জ্যও কম তৈরি হবে। তবে সামনের দিনে ব্যাটারি সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সেজন্য মেয়াদ উত্তীর্ণ ব্যাটারি বা ল্যাপটপ, পিসি, রাউটার যত ইলেকট্রনিক্স পণ্য আছে তা কীভাবে পুনর্ব্যবহার করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের কম্পিউটার আমদানিকারক এবং বিপণনকারীরা যেন নিজেদের উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার অনুপোযোগী হলে তা গ্রাহকের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিতে প্রণোদনামূলক উদ্যোগ নেন সে বিষয়ে উদ্যোক্তাদের নিয়ে গবেষণায় মনোযোগী হতে হবে। তা ছাড়াও বিটিআরসি-যেনে আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই দেশে উৎপাদিত ফোন ই-বর্জ্য হিসেবে বিনষ্ট না করে ফিরিয়ে নেয় সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করব বলে জানান মোস্তাফা জব্বার।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজা পারভীন, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের সহ-প্রধান অধ্যাপক শেখ রাশেদ হায়দার নূরি, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং জেআর রিসাইকেলিং সল্যুশনের জেনারেল ম্যানেজার মঞ্জুর আলম।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে বিআইজেএফ সাধারণ সম্পাদক সাব্বিন হাসান বলেন, প্রযুক্তি ব্র্যান্ডের দায়বদ্ধতা, ই-পণ্যের রিটেক নীতিমালা, সংশ্লিষ্ট খাতের সমন্বয় ই-বর্জ্যেকে সম্পদে রূপান্তরে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তাই সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টদের যৌথ উদ্যোগই সমস্যার সমাধান সুনিশ্চিত করবে।
সমাবেশে দেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গণসচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই যাত্রাপথে প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান বিশেষ করে স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং ঘরোয়া ইলেট্রনিকস পণ্যের সমাহার বাড়ছে। আর এ ধরনের পণ্য থেকে বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ সঠিক পদ্বতিতে ই-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করতে পারলে অবহেলিত বর্জ্যই হতে পারে সম্পদ। যে সম্পদের বাজার আয়তন প্রায় ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার সুফল শুধু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রযুক্তিপণ্য বা ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহারে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট হওয়ার এটাই সঠিক সময়।
বাংলাদেশে প্রথমবার আয়োজিত এই দিবস পালন ‘সময়ের দাবি’ মন্তব্য করে উপস্থিত বক্তারা বলেন, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গণসচেতনতার সঙ্গে পণ্য নির্মাতাদের বা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তা ছাড়া ই-বর্জ্যের ঝুঁকি থেকে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রচলিত আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের সরকারকে অগ্রণী পূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।