অর্থনীতি হবে কাগজের টাকাবিহীন

‘স্মার্ট বাংলাদেশ ও সাইবার সিকিউরিটি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা।
আইসিটি ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:১৩ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৩০
বাংলাদেশের শ্রমিকেরা এখন স্মার্ট শ্রমিক। কৃষকেরা স্মার্ট কৃষক। বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে কাগজের টাকাবিহীন। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ও সাইবার সিকিউরিটি’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন ও হপলন লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগের অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিতে চারটি বিষয় জরুরি— সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ, কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় সাধন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও চারটি বিষয় প্রয়োজন। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সোসাইটি। তা ছাড়া ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কিটেকচার থাকলে এবং তা মেনে চললে আর তথ্য চুরির ঘটনা ঘটবে না।
আইডিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং সাবেক সচিব, বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম. আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেকনোহেভেন প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ এন. করিম। সাইবার সিকিউরিটি স্মার্ট সিটিজেনদের জন্য করণীয় বিষয়ে বলেন সাবেক বেসিস সভাপতি ও এফবিসিসিআই প্যানেল উপদেষ্টা সৈয়দ সাদাত আলমাস কবির। সাইবার নিরাপত্তা ক্ষমতা বৃদ্ধি ও অ্যাকাডেমিয়ার ভূমিকা বিষয়ে বলেন বুয়েট কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর মাহমুদা নাজনীন। বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি কমপ্লায়েন্স: রেগুলেটরের ভূমিকা বিষয়ে বলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো: কামরুজ্জামান, এনডিসি। সঞ্চালনা করেন আইডিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান, স্মার্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক এবং সাবকে মূখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইডিয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য ও সাবেক সিনিয়র সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মোহাম্মদ শহিদুল হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হপলন লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসান হাবীব।
সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ক্যাশলেস ও পেপারলেস কাঠামোগত উন্নয়নে তিনটি মূল বিষয় হলো ডেটা সেন্টার, সাইবার সিকিউরিটি ও ডিজিটাল সিগনেচার। যার মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি সবচেয়ে জরুরি। যা রক্ষায় আইসিটি বিভাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি ডেটা সেন্টারের সঙ্গে বেসরকারি ডেটা সেন্টারগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। সাইবার বুলিং, অপরাধ ও পরামর্শের (৩৩৩৮) এবং (১৩২১৯) নম্বর থেকে সেবা নেওয়া যাবে।
হাবিবুল্লাহ এন. করিম বলেন, সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল দেশে। এখন যে নেই তা বলা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাদ যায়নি। সাইবার আক্রমণের পরিণতি হিসেবে আর্থিক ও সুনাম ক্ষতি, তথ্য প্রকাশ। সাইবার আক্রমণের সাধারণ প্রকার হচ্ছে ম্যালওয়্যার আক্রমণ, ফিশিং আক্রমণ, ডিনায়াল-অব-সার্ভিস এবং ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল-অব-সার্ভিস ইত্যাদি। ঝুঁকি এড়াতে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, সরকারের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা এবং বেসরকারি খাত একত্রে কাজ করতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাইবার নিরাপত্তার গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, যদি কোন সম্পদ থাকে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনার। ডিজিটাল সম্পদটি যা আমাদের ব্যক্তি জীবনসহ সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনের চালিকা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত। তার নিরাপত্তার জন্য কতটুকু দিয়েছি, কতটুকু দিতে পারি, কতটুকু দেওয়া উচিত। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। মাঝেমধ্যে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন এবং প্রয়োজনে ‘টু ফ্যাক্টর অথনেটিক’ সচল রাখতে হবে।
কাজী এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, করোনার আগে কম্পিউটার ব্যবহার কম ছিল। কিন্তু ওই সময়ে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের গঠনে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত না করলে কেউ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করবে না। সচেতনতা বৃদ্ধিতেই আইডিয়া ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে। দক্ষ ও যোগ্য জনবল নিয়োগের মাধ্যমে বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করা উচিত। ফলে অন্য সব দেশের মতো আমাদের নাগরিকদের সমস্যা না পড়তে হয়।
বিগত বছরে বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত দিক থেকে অগ্রগতি অর্জন করেছে। উদ্ভাবন এবং সংযোগের মাধ্যমে উন্নত হয়েছে দেশ। বাংলাদেশের কৃষিসেবা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সরকার এবং জনসেবা খাতে উল্লেখযোগ্য রূপান্তর দৃশ্যমান। বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে তথ্যপ্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিকভাবে তৈরি ও দিকনির্দেশনার জন্য সাইবার সিকিউরিটির ভূমিকা অত্যাবশক।
ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস (আইডিয়া) ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহযোগীদের একটি সংস্থা, স্বাধীন গবেষণা, নীতি বিশ্লেষণ, অ্যাডভোকেসি, উপদেষ্টা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।