এতদিন ধরে একের পর এক বোমা ফাটানোর মতো করে ফেসবুকের অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন তিনি। কিন্তু কখনো নিজের পরিচয় জানাননি। তবে এবার আড়াল ভাঙলেন। ৩৭ বছর বয়সী এই নারীর নাম ফ্রান্সেস হাউগেন। রোববার যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের সময় জানালেন তিনি কে এবং কী করেন? 

তিনি ফেসবুকের সিভিক ইন্টেগ্রিটি গ্রুপের প্রোডাক্ট ম্যানেজার ছিলেন। সাক্ষাৎকারে বলেন, ফেসবুক গোপনীয়তা বা নিরাপত্তার চেয়ে ব্যবসার দিকেই বেশি নজর রাখে। যদিও ফেসবুক বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছে, তথ্যফাঁসের বিষয়গুলে বিভ্রান্তিকর। এসব ঘটনা কোম্পানির ইতিবাচক গবেষণাগুলোকে আড়াল করেছে। খবর বিবিসির।

সিবিএসের ‘সিক্সটি মিনিট’ নামের সাক্ষাৎকারভিত্তিক ওই অনুষ্ঠানে হাউগেন জানান, তিনি চলতি বছরের প্রথম দিকে ফেসবুকের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে প্রতিষ্ঠানটি ছাড়ার আগে বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ নথিপত্রের নকল নিয়ে এসেছেন।

ওই নথিগুলো দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেন। সেসব নথির ওপর ভিত্তি করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তিন সপ্তাহ ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনগুলো ‘ফেসবুক ফাইলস’ নামে পরিচিতি পায়।

এসব প্রতিবেদনে ফেসবুকের আচরণগত বৈষম্য ফুটে ওঠেছে। সাধারণ মানুষের তুলনায় তারা বিভিন্ন সেলিব্রেটি ও রাজনীতিবিদদের বেলায় ভিন্ন ধরনের আচরণ করে। সাধারণ ব্যবহারকারীরা ফেসবুকের নানা নিয়মনীতির সূত্রে আবদ্ধ হলেও ভিআইপিদের ক্ষেত্রে তাদের অনেক বিধিনিষেধই শিথিলযোগ্য।

আরেকটি নথি থেকে জানা গেছে, ফেসবুকের বিরুদ্ধে কিছু শেয়ারহোল্ডার জটিল ধরনের একটা মামলা করার পর ফেসবুক তার মোকাবিলা না করে বরং কেলেঙ্কারির ব্যাপারটি মিটিয়ে ফেলতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনকে ৫০০ কোটি ডলার ঘুষ দেয়। এই অর্থ দেয়ার কারণ হলো প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে ব্যক্তিগত দায় থেকে মুক্তি দেওয়া।

অন্যদিকে ফেসবুকের ইনস্টাগ্রাম নিয়ে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি  যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করেছে। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ইনস্টাগ্রাম টিনএজারদের জন্য একটা ‘বিষাক্ত’ প্লাটফর্ম। কারণ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। জরিপে ৩২ শতাংশ কিশোরী বলেছে, এটি দেখে তারা নিজেদের শরীর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পেতে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষাবিষয়ক শুনানি হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট সাব কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেবেন হাউগেন।

গত সপ্তাহে ফেসবুকের একজন নির্বাহী ইউএস সিনেটরদের বলেছিলেন, তথ্য ফাঁস করা হলেও তাতে টিনএজারদের বিষয়ে ফেসবুকের ইতিবাচক দিকগুলোর কথা বলা হয়নি।

হাউগেন বলেন, সাধারণ জনগণ ও ফেসবুকের মধ্যে বরাবরই স্বার্থের সংঘাত ছিল। ফেসবুক সব সময় বেশি আয়ের দিকেই মনোযোগ দিয়েছে। তিনি ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় সহিংসতা ছড়াতে ফেসবুক সহায়তা করেছে বলেও দাবি করেন হাউজেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সময় কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা বেশি সময় রাখা হয়নি বলে জানান তিনি। ফেসবুক অবশ্য হাউজেনের এই দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছে, এটি হাস্যকর কথাবার্তা।