মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার ওই কর্মকর্তা পরীক্ষার দিন মাউশি থেকে কয়েকটি কেন্দ্রে যাতে নির্বিঘ্নে প্রশ্ন পৌঁছে যায় তা দেখভাল করেছিলেন। 

গত শুক্রবার একযোগে ৬১টি কেন্দ্রে মাউশির অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পদের সংখ্যা হলো ৫১৩টি। পরীক্ষার্থী ছিলো ১ লাখ ৮৩ হাজার। একেকটি পড়ে গড়ে প্রতিযোগিতা করেছেন ৩৫৭ জন। 

ওইদিন পরীক্ষা শুরুর আগেই অনেকের হোয়াটস অ্যাপে উত্তরপত্র চলে যায়। গতকাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মাউশির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের ৬-৭ জনের নাম বেরিয়ে এসেছে। 

ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, তবে প্রশ্নপত্র তৈরির সময় ফাঁস হয়নি। প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কেন্দ্রে বিতরণের সময়। শুক্রবার সাড়ে ১১টার দিকে প্রশ্নপত্র সব কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শুরু হয় বিকেল ৩টায়।

বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিবের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। 

ওই বৈঠকের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ সমকালকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। এই জালিয়াতিতে কার কী ভূমিকা ছিল এটা এখন স্পষ্ট।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাউশির ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। দু- একদিনের মধ্যে এই ঘোষণা আসতে পারে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক সমকালকে বলেন, সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পরীক্ষা বাতিলের চিন্তা-ভাবনা করছি।

মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন উইং) ও নিয়োগ নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী সমকালকে বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত আমরা জানিয়ে দেব। 



গত মঙ্গলবার রাতে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নওশাদুল ইসলাম, আহসানুল হাবীব ও রাশেদুল ইসলাম রাজু। তাদের গতকাল দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। 

রাশেদুল পটুয়াখালী সরকারি কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। তিনি ৩৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। নওশাদুল হলেন মাউশির অফিস সহকারী। আর হাবীব একই প্রতিষ্ঠানের উচ্চমান সহকারী। 

ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুমন জমাদ্দার ও সাইফুল ইসলাম দু'জন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেকের নাম জানান। প্রশ্ন ফাঁস, উত্তরপত্র তৈরি ও তা অন্যদের কাছে পাঠানোর কাজে কার কী ভূমিকা ছিল তাদের তথ্য প্রকাশ করে জবানবন্দি দিয়েছেন তারা।

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় আরও ৫-৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।

জানা গেছে, সুমন জমাদ্দার পটুয়াখালী সরকারি কলেজে কম্পিউটার অপারেটর। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সূত্র ধরে তার সঙ্গে শিক্ষক রাশেদুলের পরিচয়। 

মাউশির পরীক্ষার অংশ নেওয়ার আগে চাকরির বন্দোবস্ত করতে রাশেদুলের শরণাপন্ন হন। এরপর সাইফুল নামে একজনের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। 

পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখেন। তার সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়ায় ডিবি পুলিশ রাশেদুলকে গ্রেপ্তার করে।

জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রাশেদুলের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। বরগুনার আমতলীতে তার শ্বশুর বাড়ি। 

পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. নুরুল আমীন বলেন, রাশেদুল জরুরি কাজে ঢাকা যাওয়ার কথা জানিয়ে ১৮ মে পর্যন্ত ছুটি নেয়। ১৯ মে কলেজে তার যোগদান করার কথা ছিল। পরে পত্রিকা দেখে জানতে পারি রাশেদুল ও সুমন প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। এটা দুঃখজনক ও লজ্জার।