অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণে বিধি ভেঙে দরপত্র আহ্বানের অভিযোগ উঠেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানির (বিটিসিএল) বিরুদ্ধে। সূত্র বলছে, দরপত্রে এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে, যাতে অপটিক্যাল ফাইবার সংক্রান্ত কাজের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের বাইরে কোম্পানিও কাজ পায়।

দ্রুতগতির ইন্টারনেট যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক। দেশব্যাপী এই সেবা দিয়ে থাকে ছয়টি নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠান। এদের একটি হলো বিটিসিএল। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি তার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক রক্ষাণাবেক্ষণে তৃতীয় পক্ষ নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করেছে। ৫ অক্টোবর এই দরপত্র প্রকাশ করেছে বিটিসিএল। ৭ নভেম্বর পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি হবে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৮ নভেম্বর। দরপত্রে অংশ নেওয়ার শর্তে বলা হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে ইন্টারনেট সার্ভিস দেওয়ার (আইএসপি) লাইসেন্স থাকলেই এ কাজের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

তবে খাত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, দরপত্রের এমন শর্ত বিটিআরসির বিধিবহির্ভূত। তাঁরা বলছেন, এনটিটিএন লাইসেন্স বিধিমালার অনুসারে এনটিটিএন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন, উন্নয়ন, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে না। তাই বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ আইএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান দিয়ে করা হলে আইন ভঙ্গ হবে।

২০১৪ সালেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক স্থাপনে এ ধরনের দরপত্র ডেকেছিল বিটিসিএল। সেই দরপত্রেও আইএসপি লাইসেন্সধারীদের অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি বিটিআরসির নজরে এলে তারা পত্র দিয়ে সেই দরপত্র সংশোধনের নির্দেশনা দেয় বিটিসিএলকে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন সমকালকে বলেন, দেশজুড়েই তাদের অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক আছে। কিন্তু সে পরিমাণ জনবল নেই। হঠাৎ কোথাও কেবল কেটে গেলে বা কোনো কারণে সেবা বিঘ্নিত হলে তা মেরামতে সময় লাগে। তাই তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণে এই দরপত্র ডাকা হয়েছে। নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান শুধু

মেরামতকাজে অংশ নেবে। তারা অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন, লিজ বা ব্যবহার করতে পারবে না। তাই এই দরপত্রে বিটিআরসির বিধিমালা লঙ্ঘন হয়নি।
বর্তমানে দেশে লাইসেন্সধারী ছয়টি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যগুলো হলো- পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), বাংলাদেশ রেলওয়ে, সামিট কমিউনিকেশন্স, ফাইবার অ্যাট হোম ও বাহন। সারাদেশে বিটিসিএলের ৩৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে। বেশিরভাগ জেলা, অধিকাংশ উপজেলা এবং এক হাজার দুইশর বেশি ইউনিয়ন এই নেটওয়ার্কে যুক্ত রয়েছে।