রাজপথের কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব হয়ে উঠছে বিএনপি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর সরকারের নানা ব্যর্থতা এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে জোরালো করতে ফেসবুক, টুইটার এমনকি ইনস্টাগ্রামেও প্রচারণা চালাচ্ছে দলটি। আগামীতে এ কার্যক্রম আরও জোরালো করতে নেওয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। এর মধ্যে দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি নিরাপদ করা এবং সারাদেশে দল-সমর্থিত অ্যাক্টিভিস্টদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তও রয়েছে। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

জানা গেছে, সংবাদমাধ্যম ও যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম ও পরিকল্পনা তুলে ধরতে এবং প্রচারণায় নতুন মাত্রা আনতে গত জুনে মিডিয়া সেল গঠন করে বিএনপি। ১০ সদস্যের ওই সেলে সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপনকে আহ্বায়ক এবং দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীকে সদস্য সচিব করা হয়। এ ছাড়া বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সহসম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার, দলের প্রশিক্ষণবিষয়ক সহসম্পাদক এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের একাংশের সভাপতি এবং বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহসম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দলের কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আলী মাহমুদ, আতিকুর রহমান রুমন ও শায়রুল কবির খানকে সদস্য করা হয়।

মিডিয়া সেল দেশের প্রচলিত গণমাধ্যম ছাড়াও যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের সক্রিয় অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই প্ল্যাটফর্মে দলীয় কার্যক্রম প্রচারের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার বিষয়কে তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে আগের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য জানতে পারছেন দলের নেতাকর্মীসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় কোটি কোটি মানুষ।

অন্যদিকে এই সেলের উদ্যোগে এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট 'ভেরিফায়েড' করা হয়। সম্প্রতি মিডিয়া সেলের ফেসবুকও ভেরিফায়েড স্বীকৃতি লাভ করে। মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টও একই স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ফলে এসব অ্যাকাউন্ট নিরাপদ হিসেবে কাজ করার সক্ষমতা লাভ করছে।

শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু দলের নেতাকর্মীরা নন, সাধারণ মানুষও তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদের সংগঠিত করতে নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিডিয়া সেলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় তাঁরা পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে আরও সক্রিয় করতে সারাদেশে বিএনপি-সমর্থিত অ্যাক্টিভিস্টদের এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি থানা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের অ্যাক্টিভিস্টদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বিষয়ে তথ্য যাচাই করে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মে কয়েক লাখ অ্যাক্টিভিস্ট যুক্ত হবেন বলে আশা করছেন নেতারা। তারেক রহমান নিজেই এই কার্যক্রম মনিটর করছেন বলে সূত্র জানায়।

বিএনপি নেতারা জানান, সারাদেশে বিএনপির কর্মসূচিকে এসব যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে যে কোনো স্থানের কর্মসূচি তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে পাচ্ছেন কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তাঁরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান নেতারা। তাঁরা বলছেন, ওই সময়ে বিএনপি নেতাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নানা ধরনের অপপ্রচার এবং মিথ্যা তথ্য-সংবাদ দেওয়া হতো। এতে নেতাকর্মীর মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতো।

তা ছাড়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পিছিয়েও ছিল বিএনপি। এমনকি দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রচারেও তারা ক্ষমতাসীন দলের ধারেকাছেও ছিল না। তাই এবার দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জোরালো করতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন সমকালকে বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে রাজনীতির অন্যান্য মঞ্চের চেয়েও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক বেশি শক্তিশালী। এতদিন বিএনপি বিষয়টি অনুধাবন করলেও দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা, হামলা, হত্যা, গুম, খুনের মতো ঘটনায় এসব প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করার তেমন সুযোগ হয়নি। পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় সীমিত পরিসরে তাঁরা কাজ করতে শুরু করেছেন। আশা করছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিএনপির কার্যক্রমকে তাঁরা দেশবাসীর পাশাপাশি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে পারবেন।