- প্রযুক্তি
- দুবাই যাওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার, সড়কে গেল প্রাণ
দুবাই যাওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার, সড়কে গেল প্রাণ

নিহত আবদুর রশিদ
ট্রলিচালক আবদুর রশিদ (৩৬)। নিজের বলতে কিছু নেই। সংসারে স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে রয়েছে। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিদেশ যাওয়া পরিকল্পনা করেন রশিদ। এরই মধ্যে কাজের উদ্দেশ্যে দুবাই যেতে পাসপোর্ট-ভিসার কাজও সম্পূর্ণ করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার কথা ছিল তার। সে জন্য নতুন জামা-কাপড় কেনা থেকে শুরু করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছিলেন। কিন্তু বিধিবাম! তার আর দুবাই যাওয়া হলো না। এর তিনদিন আগেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল রশিদের। আবদুর রশিদ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার তন্তর গ্রামের বাসিন্দা।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নালিতাবাড়ী পৌর শহরের নয়ানিকান্দা এলাকায় এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আবদুর রশিদ নিহত হন। এসময় সাইফুল ইসলাম নামের আরও একজন নিহত হয়েছেন।
রশিদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০ এপ্রিল রশিদের বিমানের টিকিট কাটা ছিল। এর মধ্যে সোমবার রশিদ তার বন্ধু শহিদুল ইসলামের সঙ্গে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে নকলা উপজেলা থেকে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে ওঠেন রশিদ ও তাঁর বন্ধু শহিদুল। পথে শহরের নয়ানিকান্দা এলাকায় পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। এসময় মোটরসাইকেলটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লাগলে চালকসহ দুই বন্ধু সড়কের পাশের ডোবায় পড়ে যান।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রশিদ ও মোটরসাইকেল চালক সাইফুলকে মৃত ঘোষণা করেন। আর গুরুতর আহত শহিদুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রশিদের ভাগনে মো. খোরশেদ বলেন, ‘মামাসহ আমরা চারজন দুবাইয়ে যাওয়ার ভিসা করেছিলাম। এতে প্রত্যেকের সাড়ে তিন লাখ টাকা করে খরচ হয়েছে। মামার ফ্লাইট ছিল ২০ এপ্রিল। আমাদের ফ্লাইট ৭ মে। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে বিদেশে যেতে চেয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।’
রশিদের স্ত্রী হাফেজা বেগম বলেন, ‘বিভিন্ন সমিতি থাইকা সাড়ে তিন লাখ টাকা ধার করছে। দুবাই যাওয়ার লাইগা পাসপোর্ট ভিসা করছে। বিমানের টিকিটও করা হইয়া গেছে। নিজের লাইগা আট হাজার টাকা দিয়া কাপড়-জুতা কিনছে। বাড়ি থাইকা ভালা মানুষ বাইর অইছে। কিন্তু অহন লাশ অইয়া গেছে। বিদেশে যাওয়ার সবকিছু শেষ অইয়া গেছে— বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাফেজা বেগম।
রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, আবদুর রশিদের নিজের বলে কিছুই নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে ধার-দেনা করে বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল। রশিদের স্ত্রী ও সন্তান অসহায় হয়ে পড়ল। আমি বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছি। তাদের সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন