- প্রযুক্তি
- ডিবি পরিচয়ে ছিনতাইয়ের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা
ডিবি পরিচয়ে ছিনতাইয়ের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা

প্রতীকী ছবি।
ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ছিনতাই করতেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তপু চন্দ্র ঘোষ। সঙ্গে থাকত তাঁর ছিনতাইকারী গ্রুপ। সৌদি আরব ফেরত এক ব্যক্তির ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত ১৩ মে তপুকে (২৯) তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামিরা ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, বন্দর উপজেলার বন্দর ইউনিয়নের হাজী সাহেবের মোড় এলাকায় গত ৪ এপ্রিল দিনে ছিনতাইয়ের শিকার হন প্রবাসফেরত উজ্জ্বল হোসেন। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আসামিরা তাঁর কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা ও মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেয়। দু’দিন পর বন্দর থানায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন উজ্জ্বল।
বন্দর থানার বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রেজাউল করিম মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনি জানান, তদন্তে তপুসহ তাঁর সহযোগীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। গত শনিবার রাতে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী চক্রের হোতা তপু ও তাঁর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার চারজন আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে, ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা সৌদিপ্রবাসীর টাকা ও মোবাইল ফোনসেট লুট করে।
তপুর বাড়ি সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের অর্জুনদি গ্রামে। গ্রেপ্তার অন্য তিন আসামি হলো– সোনারগাঁ উপজেলার ছোট অর্জুনদি গ্রামের রোহান (২১), বড়নগর এলাকার কৃষ্ণচন্দ্র রাজবংশী (৩২) ও বগুড়া জেলার শেরপুরের খাজা আশ্রমপাড়া এলাকার এরশাদ (২৪)। রোহান সোনারগাঁ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত বলে জানান স্থানীয়রা।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, তপুর নেতৃত্বে ডিবি পরিচয়ে এর আগেও আসামিরা ছিনতাই করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। নেতৃত্ব দেওয়ায় তপু টাকার ভাগ বেশি নিতেন বলে অপর আসামিরা জানিয়েছে।
সোনারগাঁয়ের স্থানীয় লোকজন ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তপু সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। পরে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোহাগ রনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন। এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তপু ঘোষ গ্রেপ্তার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে তপুর কাঁধে অয়নকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অয়নের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ২০১৯ সালের জুলাইতে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে ছাত্রলীগের সহসভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে যান তপু।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, তপুর শক্ত কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এমপির ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেন তিনি। পদ দেওয়ার সময় ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে নিলে সংগঠনটিকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, তপুর গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি শুনেছেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদে
আছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে সংগঠন সিদ্ধান্ত নেবে।
মন্তব্য করুন