- প্রযুক্তি
- বিধি বাম
বিধি বাম
প্রবাদ-প্রবচনে ‘বিধি বাম’ শব্দগুচ্ছ যেই অর্থেই ব্যবহৃত হউক না কেন, পিএসসি তথা সরকারি কর্ম কমিশনের আওতায় নন-ক্যাডার পদে নিয়োগপ্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে বিধি যেন সত্যিই অদৃষ্টের ফের হইয়া দাঁড়াইয়াছে। শনিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে, শুধু বিধিমালা সংশোধন চূড়ান্ত হইবার অভাবে সাড়ে চার সহস্রাধিক নিয়োগ আটকাইয়া রহিয়াছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র উদ্ধৃত করিয়া প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ২০১০ সালের বিধিমতে বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করিবার বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে। কিন্তু সেই ২৮তম বিসিএস হইতেই বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যা উল্লেখ করা সম্ভব হয় নাই। এই জন্য ২০১৪ সালে বিধি সংশোধন করিয়া ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দেওয়া হইয়াছিল। একইভাবে উহার পরবর্তী বিসিএস পরীক্ষাসমূহেও নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা দিবার প্রশ্ন যখন আসিয়াছে, তখন দীর্ঘসূত্রতা হইয়া উঠিয়াছে সর্ববৃহৎ প্রতিবন্ধক। ৩৯তম বিসিএস পরীক্ষায় উভয় প্রকার পদসমূহে নিয়োগ সম্ভব হইলেও ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার নিয়োগপ্রত্যাশীগণ আক্ষরিক অর্থেই ঝুলিয়া রহিয়াছে। সমকালে প্রকাশিত আলোচ্য প্রতিবেদনে তাঁহাদের যেই হতাশাজনক চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে, উহা মানবেতর বলিলে অত্যুক্তি হইবে না।
আমাদের প্রশ্ন হইতেছে, আলোচ্য বিধিটি যে সংশোধন করিতে হইবে, সংশ্লিষ্টরা উহা কি জানিতেন না? আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা আমাদের দেশে নূতন নহে; কিন্তু তাহা বলিয়া একটি বিধি সংশোধন করিতে অষ্ট বর্ষ লাগিয়া যাইবে? স্বীকার করিতে হইবে, বিলম্বে হইলেও ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি হইতে ক্যাডারভুক্ত শূন্য পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারভুক্ত শূন্য পদের বিবরণ ও সংখ্যাও উল্লেখ করা হইয়াছে। ইহার ফলে পূর্বেকার জটিলতা কাটাইয়া উঠা সম্ভব হইবে। ঐদিকে ৩৯তম বিসিএস পর্যন্ত যাহারা নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পাইয়াছে, তাহাদেরও বিধি সংশোধন লইয়া অপেক্ষা ভিন্ন উদ্বিগ্ন হইবার কারণ নাই। কিন্তু ৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত যাহারা নন-ক্যাডারে নিয়োগপ্রত্যাশাী তাহাদের কী হইবে?
পরিস্থিতি দেখিয়া শুনিয়া মনে হইতেছে, এই সকল প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের নিদ্রাভঙ্গের কারণ হইতেছে না। আমরা মনে করি, অবিলম্বে বিধিমালা সংশোধন করা উচিত। উহারও পূর্বে ৪৫তম বিসিএসের পূর্বেকার পর্বগুলিতে নন-ক্যাডার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করিয়া ফেলা কর্তব্য। বিশেষত ৪০তম বিসিএসের নিয়োগপ্রত্যাশীদের কথা ভাবিতে হইবে। তাহাদের অনেকের সরকারি চাকুরির বয়স কেবল ফুরাইয়া যাইতেছে না, বিবাহের ন্যায় নেহাত বক্তিগত বিষয়াবলিও বিঘ্নিত হইতেছে। এই চিত্র মানিয়া লওয়া যায় না। কর্ম কমিশনের পক্ষ হইতে যদিও একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী বিধিমালা প্রণয়নের আশ্বাস দেওয়া হইয়াছে, উহা কাহারও কাহারও ক্ষেত্রে রাধিকার নৃত্য দেখিবার জন্য অর্ধমণ ঘি সংগ্রহের অপেক্ষার ন্যায় অনুভূত হইবে।
একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে ভাবিয়া দেখিতে হইবে যে, কর্মসংস্থানের বৈচিত্র্য ও বহুমুখীকরণ কীভাবে সম্ভব হইতে পারে। সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে যদিও বেকারের হার আগের জরিপের তুলনায় কম দেখা গিয়াছে, বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে আবেদনের হিড়িকে উহার সংখ্যাগত তাৎপর্য স্পষ্ট। তরুণরা যদিও নেতৃত্ব, উদ্যোগ, উদ্ভাবনীর দিক হইতে দেশকে আগাইয়া লাইয়া যাইতেছে; শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ উৎপাদনমূলক কাজের বদলে চাকুরির পেছনেই ছুটিয়া থাকেন। নূতন উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও দেখা যায়, সামান্য সরকারি কাজে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরও ভিড় লাগিয়া যায়। বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগপ্রত্যাশীর সংখ্যা ও হতাশাও এই চিত্র হইতে বিচ্ছিন্ন নহে।
আমরা মনে করি, কর্ম কমিশনসহ সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলি দ্রুত সম্পন্ন করিবার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের পরিবেশ সৃষ্টতেও নজর দিতে হইবে। যদিও জনমিতির দিক হইতে আমরা ভাগ্যবান যে, নাগরিকদের অধিকাংশই তরুণ; এই তারুণ্য যখন নিজের চেষ্টায় কিছু করিতে চাহে, তখন প্রয়োজনীয় উপকরণ, ঋণ, অনুমোদন পাইতে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়।
আমরা বিশ্বাস করি, সমতা ও সুযোগ পাইলে আমাদের তারুণ্য বেকারত্বের জাল স্বহস্তেই দীর্ণ করিয়া ফেলিবে। চাকুরির ক্ষেত্রেও ভিড় ও হতাশা কমিবে। বিধি বাম বলিয়া কপাল চাপড়াইতেও হইবে না।
মন্তব্য করুন