প্রযুক্তির বিকাশে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফোন। কিন্তু দেশে মোবাইল ফোনের সেবার মান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন আছে। বুধবার সমকালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোবাইল ফোন সেবা মানদণ্ডের অনেক নিচে। বিশ্বের তুলনায় তো বটেই, এই অঞ্চলের শ্রীলঙ্কা ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের থেকেও অনেক পিছিয়ে আছে আমাদের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো।
আমরা জানি, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সেবার মান নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগ নতুন নয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ভয়েস কল, মোবাইল ইন্টারনেট উভয় ক্ষেত্রেই নির্ধারিত দাম পরিশোধ করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বারবার কল কেটে যাওয়া, মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগগুলোও পুরোনো। আমরা এ সম্পাদকীয় স্তম্ভেই লিখেছিলাম, গ্রাহকের কাঙ্ক্ষিত গুণগত ও নিরবচ্ছিন্ন সেবাপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে তদারকি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসির আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা দরকার।
কিন্তু আমরা দেখছি, গ্রাহকের এই সেবাপ্রাপ্তির পথ তো মসৃণ হয়নি, উপরন্তু সেবার মান আরও নিম্নমুখী হয়েছে। বেড়েছে গ্রাহকের বিড়ম্বনা। মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে আগের তুলনায় বাংলাদেশের আরও অবনতি ঘটেছে- এই তথ্য উঠে এসেছে বিশ্বের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ওকলার সর্বশেষ প্রতিবেদনে। টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদদের অভিমত, অপারেটরদের পর্যাপ্ত অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ ব্যবহার না করা এবং চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বেতার তরঙ্গ বরাদ্দের কারণেই নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মনে করি, নির্ধারিত দামের বিনিময়ে গ্রাহক কেন কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না- এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায় সংশ্নিষ্ট কেউই এড়াতে পারেন না।
আমরা জানি, অপটিক্যাল ফাইবার নিয়ে দীর্ঘদিন দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে বেসরকারি অপারেটর এনটিটিএন ও মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে। এর ফলে দেশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠা সত্ত্বেও দেশের মোবাইল অপারেটরের কেউ এক বেজ টান্সিভার স্টেশন থেকে আরেক বেজ টান্সিভারে উন্নত মানদণ্ড অনুযায়ী ফাইবার অপটিক্যাল সংযোগ নিশ্চিত করেনি। বেতার তরঙ্গের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজমান। তারা গ্রাহক অনুপাতে কিংবা চাহিদার নিরিখে বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ নেয়নি। এতসব ঘাটতি রেখে কী করে কাঙ্ক্ষিত সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব- এ প্রশ্নই সঙ্গতই দাঁড়ায়। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে সেবায় যেখানে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ অবকাঠামোর প্রায় পুরো সুবিধা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটছে কেন? ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সঙ্গে ট্রান্সমিশন সেবার বিষয়ে এনটিটিএনের মধ্যে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের কারণে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার মানোন্নয়নের কথা বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনেই। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সমকালকে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেট সেবার মানের উন্নতির জন্য বিটিআরসি পদক্ষেপ নিয়েছে।
অন্যদিকে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটবের মহাসচিব সমকালকে বলেন, অপারেটরদের কাছে পর্যাপ্ত তরঙ্গ নেই এবং উন্নত সেবা দেওয়ার জন্য যত মেগাহার্টজ তরঙ্গের প্রয়োজন, সরকার সে অনুপাতে বরাদ্দ দিতে পারেনি। দেখা যাচ্ছে, গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রাপ্তির পথে সমস্যার জন্য বহুপক্ষের ব্যর্থতা রয়েছে। আমরা জানি, গত দু'বছরে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসিতে গ্রাহকদের অভিযোগের পাহাড় গড়ে উঠেছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের ভাষায়, 'শক্তিশালী' নেটওয়ার্ক রয়েছে- এমন স্থানেও গ্রাহকের বিড়ম্বনার খবর সংবাদমাধ্যমেই এর আগে উঠে এসেছে। অভিযোগ আরও আছে। ইন্টারনেট ফোরজি বলা হলেও বাস্তবে দেশের অনেক স্থানেই তা নেই। তাছাড়া ইন্টারনেট ডাটা প্যাকেজের ক্ষেত্রেও নিকট অতীতেই অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছিল। আমরা আশা করব, গ্রাহকের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো দ্রুত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবে। গ্রাহকের বিড়ম্বনা লাঘবের দায় সর্বাগ্রে তাদেরই। অর্থের বিনিময়ে গ্রাহক নিরবচ্ছিন্ন ও গুণগত সেবা থেকে বঞ্চিত থাকতে পারেন না। বিটিআরসিরও এ ব্যাপারে দায় ভুলে গেলে চলবে না।
বিষয় : মোবাইল ফোন সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন