- সম্পাদকীয়
- নজরদারি চাই নিরাপত্তার স্বার্থে
সম্পাদকীয়
বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণা
নজরদারি চাই নিরাপত্তার স্বার্থে
অনলাইনে বন্ধুত্ব পাতিয়ে উপহারের নামে প্রতারণা শুধু নয়; আফ্রিকান কয়েকটি দেশের নাগরিক মাদক, হুন্ডি, জাল টাকা তৈরি, মানব পাচার, অস্ত্র, যৌন ব্যবসার মতো আইন ও সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকেও বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। আমাদের মনে আছে, ২০১৯ সালের মে মাসে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কয়েকটি এটিএম বুথে পূর্ব ইউরোপের কয়েকজন নাগরিকের জালিয়াতি ধরা পড়েছিল। ব্যাংকের সার্ভারে কোনো নোটিশ ছাড়াই পূর্ব ইউরোপের নাগরিক ওই জালিয়াতরা মর্জিমাফিক টাকা উত্তোলন করতে সক্ষম হয়েছিল। বেআইনি এসব কর্মকাণ্ডে স্বাভাবিকভাবেই জড়িত থাকে আরও কিছু বেআইনি অনুষঙ্গ। তার জের ধরে রক্তারক্তির অঘটনও আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি। আরও শঙ্কার বিষয়, উদ্দেশ্য আড়াল করে আসা বিদেশি নাগরিকদের কেউ কেউ জঙ্গিবাদেও জড়িত থাকে। নব্য জেএমবির সদস্যরা আটক হওয়ার পর জঙ্গিবাদী এ সংগঠনের নেপথ্যে কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের নামও পেয়েছি। বাংলাদেশে এসে বিদেশি নাগরিকদের এই নৈরাজ্য চালানো বন্ধ হতেই হবে। এ ক্ষেত্রে যে কোনো ভিসা নিয়েই প্রবেশ করুক না কেন; তাদের ওপর নিয়মিত নজরদারি রাখতে হবে। বাংলাদেশে বসে মাদক, অর্থ, অস্ত্র বা মানব পাচারের সুযোগ শুধু অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নেই ক্ষতিকর নয়; আন্তর্জাতিকভাবেও 'উৎস' দেশ হিসেবে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। এ খাতে নজরদারি নিরাপত্তার স্বার্থেই জরুরি।
আমরা মনে করি, বিদেশিদের নজরদারির পাশাপাশি ভিসা ব্যবস্থাপনায়ও নজর দেওয়া জরুরি। বছর দুয়েক আগে সমকালেই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আমরা দেখেছিলাম, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ১৫ সহস্রাধিক বিদেশি নাগরিক বছরের পর বছর বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এই আশঙ্কা অমূলক হতে পারে না যে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। বাংলাদেশ 'অতিথিপরায়ণ' সন্দেহ নেই। বিদেশি ভ্রমণকারীরা আমাদের দেশে যেভাবে আদৃত হয়, অনেক দেশেই বাংলাদেশিরা ততটা পায় না। আমাদের ভিসা ব্যবস্থাও যথেষ্ট উদার। কিন্তু বিদেশি নাগরিক অনেকে যেভাবে এই ঔদার্যের সুযোগ নিয়ে থাকে, তা আর কোনো দেশে পাওয়া কঠিন। তাদের কেউ কেউ আরও কী করে থাকে, মঙ্গলবারের অভিযানে আটক বিদেশিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের মধ্য দিয়ে তার খণ্ডচিত্র প্রকাশ হয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত ও ভ্রমণরত বিদেশি নাগরিকবিষয়ক শৃঙ্খলা ও নজরদারি নিছক আইনশৃঙ্খলার বিষয়ও নয়। পর্যটক ভিসায় এসে অর্থকরী কর্মে যুক্ত হওয়া বিদেশিদের আইনের আওতায় আনা গেলে আমাদের রাজস্ব যেমন বাড়ত, তেমনি বহির্বিশ্বে বাড়ত ভাবমূর্তি। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা শুধু 'জনশক্তি রপ্তানিকারক' দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও বাস্তবে যে আমরা জনশক্তির 'আমদানিকার' বটে- সে বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করা সহজ হতো। এ ছাড়া কর্মকাঠামোর কোন পর্যায়ে বিদেশি জনবল প্রয়োজন, তারও প্রকৃত চিত্র পাওয়া যেত। তার ভিত্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে নজর দিয়ে উপকৃত হতে পারত উদ্বৃত্ত জনশক্তির এই দেশ।
মন্তব্য করুন