- সম্পাদকীয় ও মন্তব্য
- ডেল্টা পরিকল্পনায় বাংলাদেশের পাশে নেদারল্যান্ডস
সম্পাদকীয় ও মন্তব্য
ডেল্টা পরিকল্পনায় বাংলাদেশের পাশে নেদারল্যান্ডস
সাক্ষাৎকার
লিওনি কুয়েলিনায়ের |
লিওনি কুয়েলিনায়ের
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ১৮ । ০০:০০
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ১৮ । ০০:০০
লিওনি কুয়েলিনায়ের :হ্যাঁ, অনেক দিনের। শুরুটা হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। ১৯৫৩ সালে যখন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) বন্যা হয়, তখন দু'দেশের প্রকৌশলীরা একত্রে কাজ করেন। সেটাই ছিল শুরু। এখনও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রকৌশলী নেদারল্যান্ডসের ডেলফটে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর ওয়াটার এডুকেশন-আইএইচইতে কাজ করছেন। ২০১৪ সালেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসকে পুনরায় দুর্যোগে সহায়তা করার অনুরোধ জানান। এবারের কাজ বন্যা মোকাবেলা ও নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থাপনা তথা ডেল্টা প্ল্যান।
বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যানকে ডাচ্ ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ডাচ্ ডেল্টা প্ল্যান ২০০৮ সালে ভিরম্যান কমিশন প্রণয়ন করেছিল। বলা চলে, উভয় ডেল্টা প্ল্যানের উদ্দেশ্য একই রকম :নিরাপদ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ব-দ্বীপ গড়ে তোলা। যদিও দু'দেশের বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেক। প্রতি বছর দেশটিতে ২০ লাখ মানুষ বাড়ছে। যা হোক ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত দিক থেকে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যান বা এই ব-দ্বীপের পরিকল্পনা খুব জরুরি। কারণ আমরা দেখি, উপকূলীয় এলাকার অনেক গ্রাম প্রায়ই বন্যার পানিতে ভেসে যায়। লবণাক্ততা ও পানি জমে থাকার কারণে সেখানকার কৃষিজমি অনুর্বর
হয়ে পড়ে।
নেক্সট ব্লু :বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের ডেল্টা প্ল্যানে কী কী পার্থক্য রয়েছে?
লিওনি কুয়েলিনায়ের :বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস উভয় দেশের ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। নেদারল্যান্ডসে পানি বোর্ড অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে কাজ করে এ পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। আর বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় পর্যায়ে নানা গ্রুপের সঙ্গে কাজ করছে। ডাচ্ সংগঠন যেগুলো বাংলাদেশের পানি খাতের সঙ্গে কাজ করছে, তারা আজ বলছে, শুধু জ্ঞান অর্জনের জন্যই বাংলাদেশে আসেনি। একই সঙ্গে ভিন্ন বাস্তবতায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও কর্তৃপক্ষ তা কীভাবে বাস্তবায়ন করছে, সে অভিজ্ঞতাও নিচ্ছে।
বাংলাদেশ অনেক ইতিবাচক কাজ করছে। তবে একটা বিষয়ে সমালোচনা রয়েছে। যেটা অনেক পানি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশের সংস্থা ও স্থানীয় সংগঠনগুলো অতিমাত্রায় ডোনারশিপ তথা দানের ওপর নির্ভরশীল। ফলে পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংস্থা-সংগঠন শক্তিশালী হতে পারছে না। খোদ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কথাই বলা যায়। এখানেও আমাদের সঙ্গে পার্থক্য অনেক। তবে বাংলাদেশেও পরিবর্তন হবে। তা হয়তো রাতারাতি হবে না। কারণ আমরা দেখেছি, নেদারল্যান্ডসে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ পর্যায়ে পৌঁছতে শত বছর সময় নিয়েছে। সংস্কৃতি ও ভাষার পার্থক্যটাও আমাদের দেখতে হবে।
আমরা তো মনে করি, দু'দেশের ডেল্টা পরিকল্পনায় শুরুর দিক থেকেই দুই দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রয়োজন যখন ডেল্টা প্ল্যান বা ব-দ্বীপীয় পরিকল্পনার খসড়া করা হয়, তখন উভয় দেশের বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত কাজ। তাতে ভালো ফল দেবে এ কারণে যে, আমরা কয়েক দশক ধরেই একত্রে কাজ করে আসছি। আইএইচইতে-ডেলফটে কাজের মাধ্যমেই নয় বরং উভয় দেশের মধ্যে এক্সচেঞ্জ প্রকল্প ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যকার কর্মশালাগুলোও সম্পর্কের ভিত গড়েছে।
নেক্সট ব্লু :বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের এই সহযোগিতা কীভাবে এগিয়ে যাবে?
লিওনি কুয়েলিনায়ের :নেদারল্যান্ডস পানি ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে। বাংলাদেশে অবস্থিত ডাচ্ দূতাবাস ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তো বটেই, অপরাপর গুরুত্বপূর্ণ শরিকের সঙ্গেও আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাব। উভয় দেশের সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তবে কথা হলো, কোন উপায়ে আমরা পারস্পরিক কাজ করব।
বলা বাহুল্য, আমাদের ভবিষ্যৎ পানি সংক্রান্ত এজেন্ডায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্ব পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন ও পরিবেশ রক্ষায়, বিশেষ করে পরিবর্তিত ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনায় আমরা কাজ করব। বাংলাদেশের ২১০০ সালের ডেল্টা পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এগুলো উভয় দেশের সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আন্তর্জাতিক ধারা এ রকমই। যার অংশ হিসেবে গঠিত হয়েছে জাতিসংঘ সবুজ জলবায়ু তহবিল।
একই সঙ্গে সহায়তা ও বাণিজ্যের বিষয়টি থাকবে। বাণিজ্য দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হবে না। বাংলাদেশের হতদরিদ্র মানুষের নিশ্চয় সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। বাণিজ্য থেকেও হয়তো তারা সুফল পাবে। তার পরও সবকিছু তার লক্ষ্য ধরেই এগোতে হবে।
বাংলাদেশে কিন্তু ডাচ্ পানি বিশেষজ্ঞরাই জনপ্রিয়। আর সেটা সম্ভব হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই। এ সম্পর্ক আমরা উন্নয়ন ও প্রযুক্তির সহায়তার মাধ্যমে একটি নিবিড় প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গঠন করেছি।
নেক্সট ব্লুর ওয়েবসাইট থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
মন্তব্য করুন