
কী ভয়ঙ্কর ও ভয়াবহ কৌশল! নিরীহ প্রাণীটি জানে না কী বিপজ্জনক বোমা বয়ে বেড়াচ্ছে। পাচারকারীরা ভেবেছে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বুঝি বোমা দেখে ভয় পেয়ে গরু ছেড়ে দেবে। ছাড়া পেয়ে ওপারের গরু এপারের চোরাকারবারিদের হাতে আপসে চলে আসবে। যদিও তা হয়নি। বিএসএফ সতর্কতার সঙ্গেই কয়েকটি গরু আটক করেছে। পাচারকারীরা কীভাবে এ কাজ করছে! এটি তো তাদের জন্যও বিপদের কারণ হতে পারে। একে তো গরু পাচার বেআইনি, তার ওপর এ বোমা বাঁধার সময় যেমন নিজের হতাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনি যে কোনো কারণে বোমা ফাটলে খোদ গরুরও বিপদ হতে পারে। কিংবা এপারে যারা গরু গ্রহণ করবে, তাদের বিপদের বিষয়টিও বাদ দেওয়া যায় না।
২০১৫ সালে বাংলাদেশে গরু পাচার রোধ করতে ভারত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও গরু আসা একেবারে বন্ধ হয়নি। কোরবানির সময় গরুর চাহিদা বাড়ে বলে ভারত সরকার এ সময় সীমান্তে অধিক সতর্ক হয়। এর মধ্যেও পাচারকারীদের কৌশল থেমে নেই। এবার যেমন দেখা গেল 'বোমা' কৌশল। এর আগে ২০১৬ সালে এ রকম এক অমানবিক ইউটিউব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, কাঁটাতারের ওপার থেকে ক্রেনে যেমন ভারী যান তোলে, ঠিক সেভাবে গরুর গলায় পেঁচানো রশি ধরে তুলে পাচারকারীরা এপারে দিচ্ছে। এপারের পাচারকারীরা গরু খুলে রাখছে। এভাবেই একটার পর একটা গরু পাচার হচ্ছে।
গরু পাচার করতে এ রকম নির্দয়, নির্মম, অমানবিক কৌশল বন্ধ হোক। নিরীহ প্রাণীটিকে যেভাবে ব্যবসায়ের পণ্য বানিয়ে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে, তা সত্যিই বেদনার। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো, কোরবানির মতো পবিত্র ও আত্মত্যাগের মহিমান্বিত ঐতিহাসিক উপলক্ষকে কেন্দ্র করেই এসব হচ্ছে। অথচ সরকার বলে আসছে, দেশি গরুতেই আমাদের কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে। অন্যদিকে ভারতের গরুর কারণেই আমাদের খামারিরা বাজারে ভালো মূল্য পান না। ফলে পাচার রোধে ভারতের মতো আমাদেরও কঠোর হওয়া উচিত। দেশি ব্যবসায়ীদের সরকার কর্তৃক যথাযথ সুবিধা বাড়ানো দরকার। এ খাতে আরও বিনিয়োগ করলে গরু বাণিজ্যিকীকরণ বাড়তে পারে। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া দরকার। না হলে অমানবিক উপায়ে গরু পাচার বন্ধ হবে না।
mahfuz.manik@gmail.com
মন্তব্য করুন