- প্রথম পাতা
- জবাবদিহিমূলক বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিকল্প নেই: প্রধানমন্ত্রী
প্রথম পাতা
জবাবদিহিমূলক বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিকল্প নেই: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন- পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিমূলক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। তিনি অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ ব্যয় না করে তা টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ব্যবহার করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে গতকাল রোববার এ আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দুই বছর ধরে করোনাভাইরাস মহামারি গোটা বিশ্বব্যবস্থাকে নতুন সংকটের মুখোমুখি করেছে। এই সংকট প্রমাণ করেছে, আমরা কেউই আলাদা নই। বক্তব্যের শুরুতেই এ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি আপনাদের শান্তি এবং সম্প্রীতির বাংলাদেশে স্বাগত জানাই।'
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর শান্তির আদর্শকে পুরোপুরি ধারণ করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সদাপ্রস্তুত। স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি শান্তির মূল্য এবং সমগ্র মানবজাতির গভীরতম আকাঙ্ক্ষাগুলো অনুধাবন করেছে।
ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য দাবির পক্ষে বাংলাদেশের অবিচল সমর্থনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় এড়াতে ঢাকা ভূমিকা রেখেছে।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, "১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি উপজাতিদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়ে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করি। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মীমাংসার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভূমিকা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, 'জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছি। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।'
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গো চোক চং এবং ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ইরিনা বেকোভা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। সশরীরে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের হাডসন ইনস্টিটিউটের সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়া বিভাগের পরিচালক হুসেইন হক্কানি।
গর্ডন ব্রাউন বলেন, বিশ্বে বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা এখনও বন্ধ হয়নি। তার ওপর চলে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অস্ত্র বা 'এআই উইপন'। এ অস্ত্রের যুদ্ধ হলে তার পরিণতি হতে পারে পুরো পৃথিবী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া। এ কারণে এখন একটি বড় আওয়াজ তুলতে হবে এআই অস্ত্রের বিরুদ্ধে- 'নো এআই উইপন'। তিনি আরও বলেন, অসাম্যের বিশ্বব্যবস্থা রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বিশ্বে শান্তিতে, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য সমতা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
গো চোক চং বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার জন্মশতবার্ষিকীতে ঢাকার আয়োজনে এ শান্তি সম্মেলন তাই খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইরিনা বেকোভা বলেন, ঢাকার বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের আয়োজন থেকে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সূচনা হতে পারে। অবশ্যই এই সম্মেলন ইতিহাসের অংশ হবে।
হুসেইন হক্কানি শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। পাকিস্তান ছিল অত্যাচারী দেশ, আর বাংলাদেশ ছিল অত্যাচারিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই অত্যাচারীর সঙ্গে অত্যাচারিতের সম্পর্কের এই অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, যা শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য পদক্ষেপ। তিনি শুধু যুদ্ধাপরাধী ছাড়া পাকিস্তান বাহিনীকে সহায়তা করা সবাইকে ক্ষমা করে দেন। এটাও শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার অসাধারণত্বের পরিচয় তুলে ধরে।
একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত দাবি করে হোসেন হাক্কানি বলেন, 'পাকিস্তানে অনেকে মনে করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ওপর বিয়োগান্ত ঘটনা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমার ধারণা, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এই ধারণাকে তিনি সমর্থন করতেন। অতীতের ক্ষত এবং অপকর্ম সারাতে সামষ্টিক ক্ষমার প্রতি যাদের বিশ্বাস রয়েছে, তাদের সবাই এটা সমর্থন করবে।' হোসেন হাক্কানির মতে, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পূর্বশর্ত। এটি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রান্ত থেকে বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের আয়োজক কমিটির সভাপতি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ঢাকা ঘোষণা :দু'দিনব্যাপী শান্তি সম্মেলন শেষে ১৬ দফা ঢাকা ঘোষণা গৃহীত হয়েছে। এতে বলা হয়, এই সম্মেলন কভিড-১৯ মহামারির সংকট উত্তরণের মাধ্যমে উন্নততর, আরও সবুজ ও শক্তিশালী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই মূল প্রতিপাদ্য 'অ্যাডভান্সিং পিস থ্রো সোশ্যাল ইনক্লুশন' নির্ধারণ করা হয়। ঘোষণায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। ঘোষণায় বিশ্বে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, সংঘাত বন্ধ করার এবং কোটি কোটি মানুষকে নতুন সংকট থেকে রক্ষার আহ্বান জানানো হয়।
মন্তব্য করুন