চামড়া সংগ্রহে ধান-চালের মতো সরকারি পদক্ষেপ দরকার
সা ক্ষা ৎ কা র : আবু ইউসুফ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালকও তিনি। চামড়া শিল্প নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে গবেষণা করছেন। ঈদের সময় চামড়া সংগ্রহে বিপর্যয় এবং এ খাতের সার্বিক দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার বিভিন্ন দিক নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিরাজ শামস।
সমকাল :চামড়া খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই।
আবু ইউসুফ :এ খাত এখন দুরবস্থায় পড়লেও এ পরিস্থিতি অনেক আগেই সৃষ্টি হয়েছে। হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকেই ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেমন অপ্রস্তুত ছিলেন, তেমনি সরকারেরও পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছিল না। ট্যানারি স্থানান্তরের পর পরিবেশবান্ধব আন্তর্জাতিক সনদ না পাওয়ায় ভালো ক্রেতা হারাতে হয়েছে। এখন তো করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে মন্দা চলছে। পোশাকের চেয়েও চামড়ার পণ্যের ব্যবহারে এর প্রভাব বেশি পড়েছে। এ কারণে চামড়া খাত সংকটে পড়েছে।
সমকাল :এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দরে বিপর্যয়ের কারণ কী বলে
মনে করেন?
আবু ইউসুফ :চামড়া খাতের উন্নয়নে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বেশ কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। শিল্পনগরী হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথ হয়নি। বর্ষপণ্য ঘোষণা হলেও এর সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি। এবার ঈদের আগে চামড়া সংরক্ষণে উদ্যোগ নিলেও ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। এ সময় অনেক চামড়া একসঙ্গে এলেও অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীর ওপর সংগ্রহের বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগে নিজেদের ইচ্ছেমতো দরে চামড়া কিনেছেন তারা। লবণযুক্ত চামড়ার দর নির্ধারণ করা হলেও লবণ ছাড়া দর কত হবে, তা বলা হয়নি। ধানের মৌসুমে সরকার উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত তদারকি করে সংগ্রহ করে। চামড়া সংগ্রহে শুধু কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এ দিয়ে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ধান-চালের মতো চামড়া সংগ্রহে সরকারের সরাসরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
সমকাল :চামড়া নষ্টের পেছনে দায় কার বলে আপনি মনে করেন?
আবু ইউসুফ :এককভাবে কাউকে দোষারোপ করে লাভ নেই। জাতীয় সম্পদ নষ্ট হয়েছে এটা সত্য। এটি রক্ষায় সবারই দায়িত্ব নেওয়া উচিত। পর্যাপ্ত ঋণ না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের পাওনা পরিশোধ করতে পারেন না। ঈদের মৌসুমে তা প্রকট হয়। আড়তদাররা ট্যানারি মালিকদের ওপর দায় চাপিয়ে মাঠ পর্যায়ে দর কমিয়ে দেন। এ ছাড়া ঈদের কিছুদিন আগে তোড়জোড় শুরু হয়। তা না করে দীর্ঘমেয়াদি সম্মিলিত প্রয়াস নিতে হবে। চামড়া খাতের সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সবাই সমাধানের চেষ্টা করছেন। ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররাও ঘুরে দাঁড়াতে চান। এ জন্য
সঠিক পরিকল্পনা করে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সমকাল :কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত?
আবু ইউসুফ :হঠাৎ রপ্তানির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে এ সমস্যার সমাধান হবে না। চীন ও ভারতে কিছু কাঁচা চামড়া রপ্তানি হতে
পারে। তবে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করাই বেশি ভালো।
সমকাল : চামড়া শিল্পের ঘুরে দাঁড়াতে আপনার পরামর্শ কী?
আবু ইউসুফ :কোরবানির পশুর চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণে চালকলের মতো বড় ট্যানারির সঙ্গে চুক্তি করতে পারে সরকার। সরকারিভাবে চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারির মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত শেষে রপ্তানি করবে। এ পদ্ধতিটা সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে। এ জন্য নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিতে হবে। চামড়া নষ্ট ঠেকাতে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে হিমাগারে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এতে সরকারের খুব বেশি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। দরকার সঠিক পদক্ষেপ। বিদ্যমান পদ্ধতিতে হবে না। এটির পর্যালোচনা দরকার। বিশেষ করে চামড়ার বাজার জরিপ করতে হবে। বিসিক এসএমই খাতের জন্য কাজ করছে। তাদের পক্ষে চামড়ার মতো বড় খাতের ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা যেতে পারে। তথ্যভিত্তিক একটি নীতিমালাও তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া আর্থিক সংকট কাটাতে করোনার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ সুবিধা দিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
একই সঙ্গে রপ্তানি বাজার বাড়াতে এ খাতের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপন করতে হবে। সম্ভাবনাময় বাজারগুলোতে পণ্য প্রদর্শনী বাড়াতে হবে।
সমকাল :চামড়া খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই।
আবু ইউসুফ :এ খাত এখন দুরবস্থায় পড়লেও এ পরিস্থিতি অনেক আগেই সৃষ্টি হয়েছে। হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকেই ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেমন অপ্রস্তুত ছিলেন, তেমনি সরকারেরও পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছিল না। ট্যানারি স্থানান্তরের পর পরিবেশবান্ধব আন্তর্জাতিক সনদ না পাওয়ায় ভালো ক্রেতা হারাতে হয়েছে। এখন তো করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে মন্দা চলছে। পোশাকের চেয়েও চামড়ার পণ্যের ব্যবহারে এর প্রভাব বেশি পড়েছে। এ কারণে চামড়া খাত সংকটে পড়েছে।
সমকাল :এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দরে বিপর্যয়ের কারণ কী বলে
মনে করেন?
আবু ইউসুফ :চামড়া খাতের উন্নয়নে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বেশ কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। শিল্পনগরী হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথ হয়নি। বর্ষপণ্য ঘোষণা হলেও এর সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি। এবার ঈদের আগে চামড়া সংরক্ষণে উদ্যোগ নিলেও ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। এ সময় অনেক চামড়া একসঙ্গে এলেও অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীর ওপর সংগ্রহের বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগে নিজেদের ইচ্ছেমতো দরে চামড়া কিনেছেন তারা। লবণযুক্ত চামড়ার দর নির্ধারণ করা হলেও লবণ ছাড়া দর কত হবে, তা বলা হয়নি। ধানের মৌসুমে সরকার উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত তদারকি করে সংগ্রহ করে। চামড়া সংগ্রহে শুধু কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এ দিয়ে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ধান-চালের মতো চামড়া সংগ্রহে সরকারের সরাসরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
সমকাল :চামড়া নষ্টের পেছনে দায় কার বলে আপনি মনে করেন?
আবু ইউসুফ :এককভাবে কাউকে দোষারোপ করে লাভ নেই। জাতীয় সম্পদ নষ্ট হয়েছে এটা সত্য। এটি রক্ষায় সবারই দায়িত্ব নেওয়া উচিত। পর্যাপ্ত ঋণ না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের পাওনা পরিশোধ করতে পারেন না। ঈদের মৌসুমে তা প্রকট হয়। আড়তদাররা ট্যানারি মালিকদের ওপর দায় চাপিয়ে মাঠ পর্যায়ে দর কমিয়ে দেন। এ ছাড়া ঈদের কিছুদিন আগে তোড়জোড় শুরু হয়। তা না করে দীর্ঘমেয়াদি সম্মিলিত প্রয়াস নিতে হবে। চামড়া খাতের সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সবাই সমাধানের চেষ্টা করছেন। ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররাও ঘুরে দাঁড়াতে চান। এ জন্য
সঠিক পরিকল্পনা করে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সমকাল :কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত?
আবু ইউসুফ :হঠাৎ রপ্তানির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে এ সমস্যার সমাধান হবে না। চীন ও ভারতে কিছু কাঁচা চামড়া রপ্তানি হতে
পারে। তবে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করাই বেশি ভালো।
সমকাল : চামড়া শিল্পের ঘুরে দাঁড়াতে আপনার পরামর্শ কী?
আবু ইউসুফ :কোরবানির পশুর চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণে চালকলের মতো বড় ট্যানারির সঙ্গে চুক্তি করতে পারে সরকার। সরকারিভাবে চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারির মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত শেষে রপ্তানি করবে। এ পদ্ধতিটা সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে। এ জন্য নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিতে হবে। চামড়া নষ্ট ঠেকাতে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে হিমাগারে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এতে সরকারের খুব বেশি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। দরকার সঠিক পদক্ষেপ। বিদ্যমান পদ্ধতিতে হবে না। এটির পর্যালোচনা দরকার। বিশেষ করে চামড়ার বাজার জরিপ করতে হবে। বিসিক এসএমই খাতের জন্য কাজ করছে। তাদের পক্ষে চামড়ার মতো বড় খাতের ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা যেতে পারে। তথ্যভিত্তিক একটি নীতিমালাও তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া আর্থিক সংকট কাটাতে করোনার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ সুবিধা দিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
একই সঙ্গে রপ্তানি বাজার বাড়াতে এ খাতের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপন করতে হবে। সম্ভাবনাময় বাজারগুলোতে পণ্য প্রদর্শনী বাড়াতে হবে।