চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, তরিতরকারি, মাছ, মাংস, ডিমসহ অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েক মাস ধরে চড়া। অন্যদিকে করোনার প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি সচল হওয়ায় খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চাহিদা হঠাৎ বেড়েছে। রডসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী, পোশাক পরিচ্ছদ, প্লাস্টিক, লৌহজাত পণ্য, আসবাবপত্র, রান্নার গ্যাসসহ এ জাতীয় দামও ঊর্ধ্বমুখী। বাজারের এই বাড়তি দামের প্রভাব এবার উঠে এসেছে সরকারের মূল্যস্ম্ফীতির হিসাবেও।\হগতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অক্টোবর মাসের মূল্যস্ম্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, গত মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ম্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্য মূল্যস্ম্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ম্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। খাদ্য, পানীয় ও তামাক, কাপড় ও জুতা, স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা, পরিবহন ও যোগাযোগসহ ৮ ক্যাটাগরির পণ্য ও সেবা বাবদ মানুষের খরচের ভিত্তিতে বিবিএস মূল্যস্ম্ফীতির হিসাব করে থাকে। শহরের ৪২২টি এবং গ্রামের ৩১৮টি পণ্য ও সেবার দাম বিবেচনায় নেয় বিবিএস।\হচলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই মূল্যস্ম্ফীতিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে গড় মূল্যস্ম্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর পরের আগস্টে তা কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে আরও বেড়ে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশে দাঁড়ায়। নভেম্বরে জ্বালানি তেল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর ফলে আগামীতে মূল্যস্ম্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্নেষকরা। কারণ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে পরিবহন খরচ বেড়েছে। মানুষের যাতায়াত খরচও বেড়েছে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের বাড়তি মূল্যের পরোক্ষ প্রভাব তো রয়েছেই।\হবেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, বিবিএস যে মূল্যস্ম্ফীতি ঘোষণা করেছে তা অনেক ধরনের পণ্য ও সেবা মূল্যের গড়। যেখানে সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ মূল্যের পণ্যের হিসাবও রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেসব পণ্য ও সেবা গ্রহণ করে, সেগুলোর মূল্যস্ম্ফীতি বিবিএসের গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। সাধারণ ভোগযোগ্য পণ্য ও সেবা মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা স্বল্প আয়, নিম্ন আয় ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহ, আন্তর্জাতিক বাজার, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাড়তি মূল্যস্ম্ফীতির কারণ। নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে মূল্যস্ম্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা সব মানুষ পায় না। ফলে মূল্যস্ম্ফীতি আরও বেড়ে গেলে স্বল্প, নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জীবনযাপনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।\হপয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ম্ফীতি বলতে আগের বছরের নির্দিষ্ট কোনো মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকের তুলনায় পরের বছর একই মাসে ওই সূচক যতটুকু বাড়ে তার শতকরা হারকে বুঝায়। অন্যদিকে ১২ মাসের পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ম্ফীতির গড় করে বার্ষিক মূল্যস্টম্ফীতির হিসাব করা হয়। বিবিএসের হিসাবে গত মাস শেষে বার্ষিক গড় মূল্যস্ম্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ম্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।\হবিবিএস দেশের ১৪০টি বাজার থেকে পণ্যমূল্যের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে, যার মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনেরে ১২টি বাজার রয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গড়ে অক্টোবর মাসে দাম বেড়েছে চাল, আটা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও হলুদের। এ ছাড়া আলু, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, পেঁপের মতো সবজির দামও বেড়েছে।\হমূল্যস্ম্ফীতির চাপ অবশ্য শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি। গ্রামীণ এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ম্ফীতি শহরের চেয়ে বেশি। বিবিএস জানিয়েছে, অক্টোবরে খাদ্যে গ্রামে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ আর শহরে ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ মূল্যস্ম্ফীতি হয়েছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ম্ফীতি গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরে বেশি। অক্টোবরে শহরে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ম্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গ্রামে তা ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত খাতে সিমেন্ট, স্টিল, জ্বালানির কাঠ, গজ কাপড়, শাড়ি, লুঙ্গি ও গেঞ্জির দাম বেড়েছে।
মন্তব্য করুন