পাকশী রেলওয়ে হাসপাতাল সংস্কারের নামে প্রস্তুতি 'পুকুরচুরি'র
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী (পাবনা)
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন পাকশী রেলওয়ে হাসপাতাল ও রেলওয়ের বিভাগীয় কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, এ হাসপাতাল সংস্কার করার জন্য ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। রেলের কয়েকজন ঠিকাদার সমকালকে বলেন, রেলের রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী এবং পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২-এর দপ্তর থেকে স্থানীয় এক ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে এ টেন্ডার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জামাল হোসেন নামে ঢাকার এক ঠিকাদার এ বিষয়ে রেলের মহাপরিচালক,
মহাব্যবস্থাপক, প্রধান প্রকৌশলী, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক, বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী-২ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এ অভিযোগের কপি হাতে পেয়েছেন বলে গতকাল জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগের এক স্থানে বলা হয়েছে, এ হাসপাতাল সংস্কারের জন্য প্রাক্কলিত মূল্য ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার যে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে তা অস্বাভাবিক। বর্ণিত সংস্কার কাজের জন্য প্রাক্কলিত এই অর্থ দিয়ে একটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করা সম্ভব। অভিযোগে তিনি রেলওয়ে প্রশাসনের অর্থ অপচয় রোধ করে তদন্ত করারও দাবি করেছেন।
হাসপাতালের সংস্কারের জন্য মোট ৬১টি খাতের মধ্যে মোটা দাগে কয়েকটি কাজের প্রাক্কলিত অর্থের পরিমাণ দেখে স্থানীয় ঠিকাদাররা বলেছেন, এটি রীতিমতো পুকুর চুরির শামিল। ঠিকাদার আলমগীর হোসেন বলেন, স্থানীয় দু'একজন ঠিকাদার আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে রেলের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন লেনদেনের মাধ্যমে এসব কাজ করে থাকেন।
সংশ্নিষ্ট সূূত্র এবং দরপত্রের কপি যাচাই করে দেখা গেছে, এ হাসপাতালের পুরনো দেয়ালের প্লাস্টার ঠিক করা বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ টাকা; অথচ সরেজমিন দেখা গেছে, পুরো হাসপাতালে এ কাজের জন্য ২ লাখ টাকার বেশি খরচ হবে না। একইভাবে রঙ করার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা, এতে ২-৩ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হবে না। ছাদ সংস্কার করার জন্য প্রায় ২৫ টন রড ধরা হয়েছে, যার বাজারমূল্য ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা হলেও ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ লাখ টাকা। একইভাবে ঢালাই বাবদ ৩৬ লাখ টাকা, টাইলস বাবদ সাড়ে ১২ লাখ টাকা, গ্রিল-জানালা সংস্কারের জন্য ২৭ লাখ টাকা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা সংস্কারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। এর বাইরে অন্যান্য ছোটখাটো খাতগুলোতে অস্বাভাবিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
হাসপাতালের সংস্কারের জন্য ২২ লাখ টাকার রড কীভাবে কাজে লাগবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আরিফুল ইসলাম বলেন, ছাদের ওপরে রড বিছিয়ে আরেকটি ছাদ দেওয়া হবে, যাতে ছাদ দিয়ে পানি না পড়ে।
অভ্যন্তরীণ রাস্তা সংস্কারের জন্য মাটি, বালু ও সিলকোট করতে ১৬ লাখ টাকার বরাদ্দও অস্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। তারা বলেন, পানি পড়া বন্ধ করতে ছাদের ওপর নতুন আরেকটি ছাদ দেওয়ার কথা আগে শোনেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী বলেন, তিনি হজ পালনের জন্য ছুটিতে ছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে এ টেন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আরিফুল ইসলাম বলেন, ২০ লাখ টাকার ওপরে কোনো টেন্ডার পাকশী কার্যালয় থেকে তিনি করতে পারেন না। পশ্চিমাঞ্চল রেলের রাজশাহী কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের অনুমোদনে এ টেন্ডারের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তবে ব্যয় নির্ধারণ করার সময় তাদের ভুলও হতে পারে বলে স্বীকার করেন তিনি।