দেশে কভিড-১৯-এর টিকার সমবণ্টন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। গতকাল রোববার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ আয়োজিত 'কভিড-১৯ টিকা বাংলাদেশে কে, কখন, কীভাবে পাবে' শিরোনামে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংলাপে আলোচকরা এ আহ্বান জানান।

আলোচনায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক মোস্তাক রাজা চৌধুরী। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন ড. বিজন কুমার শীল, ড. রওনক জাহান, অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব, ফেরদৌসী কাদরী, হামিদুল ইসলাম, অধ্যাপক রুমানা হক, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও আনিসাতুল ফাতেমা।

মূল প্রতিবেদনে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বিশ্নেষণে বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখে ১৮ হাজার ৫০৯ জনের কভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার ফল অনুযায়ী প্রতি ১০ লাখে তিন হাজার ১৯ নাগরিক কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতি ১০ লাখে মারা গেছেন ৪৪ জন। বাংলাদেশে কভিড-১৯ টিকা বিতরণ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম (এ) ধাপে টিকা পাবেন ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২, প্রথম (বি) ধাপে এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭, দ্বিতীয় ধাপে এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮, তৃতীয় ধাপে তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ এবং চতুর্থ ও শেষ ধাপে টিকা পাবেন ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জন। এ হিসাবে মোট প্রায় ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে টিকা পাবেন ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন।

মূল প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধনী দেশগুলো বিপুল পরিমাণে অগ্রিম প্রতিষেধক কিনে নিচ্ছে। অথচ করোনা থেকে মুক্তি পেতে ধনী-দরিদ্র সব দেশেই ভ্যাকসিনের সমবণ্টন নিশ্চিত করা জরুরি। সে জন্য টিকা প্রাপ্তির প্রাধিকার নির্ধারণে বৈষম্য দূর করা এবং মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতা একান্ত প্রয়োজনীয়। একই সঙ্গে কভিড টিকা কর্মসূচির জন্য বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত, সেটিও বিবেচনায় আনতে হবে। আর তাই কমিউনিটিকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, সে জন্য আমাদের এখন থেকেই চিন্তা করতে হবে।

অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব প্রতিষেধক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ নিজ কর্মীদের স্ব-উদ্যোগে টিকা বিতরণের উৎসাহ দেন। তিনি বলেন, তথ্যপ্রবাহে স্বচ্ছতা, বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে টিকাদানের ক্ষেত্রে।

সিপিডির ফেলো রওনক জাহান বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দক্ষতা ও সক্ষমতার অভাব কোথায় আছে, তা আগে থেকে  নির্ধারণ করে সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুমানা হক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আইসিডিডিআর,বির ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান ফেরদৌসী কাদরী বলেন, বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সন্দেহ-উদ্রেকের ঊর্ধ্বে ওঠে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সর্বাবস্থায় টিকা কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিতে হবে।

ড. বিজন কুমার শীল বলেন, টিকা পরীক্ষার জন্য প্রথমে উপযুক্ত গ্রহীতা নির্বাচন করতে হবে। এরপর মনিটরিং করা প্রয়োজন। ইউনিসেফের কোল্ড চেইন স্পেশালিস্ট হামিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে টিকা সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য সুষ্ঠু নীতিমালা ও তার বাস্তবায়ন আবশ্যক।

মন্তব্য করুন