- খবর
- ৪০ হাজার দক্ষ গাড়িচালক তৈরি করছে সরকার
খবর
৪০ হাজার দক্ষ গাড়িচালক তৈরি করছে সরকার
৭ লাখ ৩০ হাজার ৮৮৯ গাড়ি লাইসেন্সবিহীন চালকের হাতে
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২১
আবু হেনা মুহিব
'যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ' নামে এই প্রকল্পটির মাধ্যমে আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের ৪০টি জেলায় ৪০ হাজার দক্ষ চালক তৈরি করা হবে। এসব জেলায় আধুনিক সুবিধা থাকা কিছু প্রশিক্ষণকেন্দ্র ইতোমধ্যে নির্বাচন করা হয়েছে। যুবদের জন্য যাতায়াত সুবিধা এবং আবাসন ব্যবস্থা থাকার বিষয়টি বিবেচনায় এসব কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। এতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১০৬ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেই অর্থের জোগান দেওয়া হবে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বর্তমানের অর্ধেকে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্য অর্জনে চলমান কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে চার হাজার মানুষ মারা যান। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বাধীন 'নিরাপদ সড়ক চাই' সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় চার হাজার ৯৬৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৮ জন।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটির প্রাক্-মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্নিষ্ট বিভাগ আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ। জানতে চাইলে বিভাগের সদস্য এবং সরকারের সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সমকালকে বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচনে এই প্রকল্পটি বেশ ভালো ভূমিকা রাখবে। দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়বে। কভিডের কারণে ফেরত আসা প্রবাসীরা এ প্রকল্পে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফেরত আসা প্রবাসীদের জন্য আলাদা করে প্রকল্প নিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে প্রবাসীদের মধ্য থেকে কেউ চাইলে প্রশিক্ষণ নিতে কোনো সমস্যা নেই।
সূত্র জানিয়েছে, পিইসি সভায় প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচিত ৪০ জেলাকে কোন সূচকের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হয়েছে সেই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরিতে চালক পদে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে নূ্যনতম যে যোগ্যতা আছে, প্রকল্পের প্রশিক্ষণার্থীদেরও একই যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে হবে। এছাড়া প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। আসবাব ক্রয়ের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে হলেও ব্যয় হ্রাসের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, এই পরামর্শ অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা
ব্র্যাকের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রায় ৩৮০টি ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুল চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এসবের মধ্যে মাত্র ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের বিআরটিএর অনুমোদন রয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধ কোনো অনুমোদন নেই। জরিপে বলা হয়, এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই সঠিক কারিকুলাম অনুসরণ করে না। প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো উপযুক্ত গাড়ি, যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো
সুবিধা নেই, লাইসেন্সধারী দক্ষ প্রশিক্ষকও নেই।
কেন এ ধরনের একটি প্রকল্পের প্রয়োজন- এই ব্যাখ্যায় প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) বলা হয়, যানবাহন বাড়ার সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনার হারও বাড়ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত কয়েকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সারাদেশকে নাড়া দিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেশে প্রতি বছর লাখ লাখ যানবাহন সড়কে নামছে। অথচ এত সংখ্যক চালক তৈরির জন্য মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র সেই পরিমাণে নেই। অথচ দুর্ঘটনা এড়াতে দক্ষ চালকের কোনো বিকল্প নেই।