কয়েকটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, গত এক বছরে অনলাইনে পণ্যের বেচাকেনা তিন গুণ বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্যবসা বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ, যা আগের বছরগুলোতে ছিল গড়ে ২৫ শতাংশ।
এদিকে, মানুষ যাতে অনলাইনে সহজে কেনাকাটা করতে পারেন সেজন্য সরকারও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক আদেশে রাত ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে অর্ডার দেওয়া পণ্য সরবরাহের সুযোগ দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী পরিবহন সার্বক্ষণিক চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় করোনার বিস্তার বাড়ার পর থেকে অনলাইনে অর্ডার বাড়ছে। লকডাউনের পর তা আরও বেড়েছে। এমনকি বিদেশে বসে দেশে থাকা পরিবারের জন্য অনলাইনে পণ্য অর্ডার করছেন প্রবাসী স্বজনরা। দেশের অনলাইনে পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদেশ থেকে অর্ডার বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি।
চালডালের সিইও জিয়া আশরাফ বলেন, লকডাউন ঘোষণার পর অর্ডার বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত বছর সাধারণ ছুটির অভিজ্ঞতায় এ বছর প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতা ও পণ্যের মজুদ বাড়িয়েছে। তিনি জানান, গত বছর তাদের প্রতিষ্ঠানের দৈনিক তিন হাজার অর্ডার ডেলিভারি করার সক্ষমতা ছিল, যা বর্তমানে ১৫ হাজার। পাশাপাশি ঢাকায় পণ্য সংরক্ষণে গুদাম (ওয়্যারহাউস) ছিল ছয়টি, এ বছর তা বাড়িয়ে ১৫টি করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে তিনটি, নারায়ণগঞ্জে দুটি ও যশোরে একটি ওয়্যারহাউস খুলেছে।
সুপারশপ স্বপ্নে অনলাইনে অর্ডার আগের তুলনায় বেড়েছে। স্বপ্নের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান এসিআই লজিস্টিকসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির হাসান নাসির সমকালকে বলেন, অনলাইন ও টেলিফোন উভয়ভাবেই অর্ডার বেড়েছে। অনলাইনে বৃদ্ধির পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি। আর ফোনে কয়েক গুণ বেশি অর্ডার আসছে।
শরিফুজ্জামান নামে একজন ক্রেতা জানান, তিনি আগে থেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করেন। এতদিন জামাকাপড়, ইলেকট্রনিক পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য কিনতেন। এবার লকডাউনের সময় অনলাইনে মাংস, মাছ, ডাল, আলুসহ কিছু পণ্য কিনেছেন।
এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ঈদের কেনাকাটাও অনলাইনে সেরে নিচ্ছেন। আড়ংয়ের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, অনলাইনে বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে আড়ং ওয়েবসাইট নতুনভাবে সাজিয়েছে এবং মোবাইল অ্যাপস চালু করেছে। উভয় ক্ষেত্রেই অর্ডার আগের চেয়ে বেড়েছে। বিদেশ থেকেও অনেক অর্ডার আসছে। লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়ামের ব্র্যান্ড ইনফিনিটি, রিচম্যান ও লুবনান। তিনটি ব্র্যান্ডেরই অনলাইনে অর্ডার বেড়েছে বলে সমকালকে জানিয়েছে এ কোম্পানির চিফ কো-অর্ডিনেশন অফিসার জিএম রাশেদুল হক মুকুল।
অনলাইনে কেনাকাটার বিল পরিশোধে দুটি ধরন রয়েছে। একটি ব্যাংক কার্ড, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার ও ই-ওয়ালেট থেকে। আরেকটি ক্যাশ অন ডেলিভারি অর্থাৎ, পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছানোর পর নগদে মূল্য পরিশোধ। করোনার এই সময়ে অনলাইনে কেনাকাটা যে বেড়েছে তার প্রতিফলন উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত জানুয়ারিতে ই-কমার্সভিত্তিক কেনাকাটা ও বিল পরিশোধে ৬৬০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের বছরের জানুয়ারিতে যা ছিল ২৬৯ কোটি টাকা। বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, অনলাইনে কেনাকাটার বিল পরিশোধ আগের তুলনায় বেড়েছে।
ই-ক্যাবের সংবাদ সম্মেলন :করোনাকালে গত এক বছরে অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের বেচাকেনা তিন গুণ বেড়েছে। এই সময়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার সার্বিক ডিজিটাল লেনদেন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, চলতি বছর ই-ক্যাব চারটি মুখ্য বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। গ্রামীণ ই-কমার্স, ক্রস বর্ডার ই-কমার্স, সোশ্যাল মিডিয়া কমার্স ও ই-কমার্সে অভিযোগ ব্যবস্থাপনা। এরই ভিত্তিতে আগামী রোববার 'রুরাল টু গ্লোবাল' শিরোনামে একটি পলিসি কনফারেন্সের আয়োজন করা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য বিষয়ে নীতিনির্ধারণী কর্মসূচি নেওয়া হবে।
সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু বলেন, শুধু নিত্যপণ্য ২০২০ সালের শেষ আট মাসে লেনদেন হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে দৈনিক এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি অর্ডার ডেলিভারি হচ্ছে।
আরও পড়ুন
মন্তব্য করুন