ব্যয় কমাতে ২০২৫ সালের আগে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। নতুন করে কুইক রেন্টালের মেয়াদ না বাড়ানো, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম কমানো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

গতকাল রোববার বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব সুপারিশ করে সিপিডি। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। এখন সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে বিনিয়োগে জোর দিতে হবে। এখন সময় এসেছে এ খাতের দক্ষতা বাড়ানো, সাশ্রয়ী মূল্য নির্ধারণ এবং কম কার্বন নিঃসরণ করে এমন বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, কুইক রেন্টালগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। ২০২০ সালে কুইক রেন্টালের এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এ খাতে সরকারের খরচ অব্যাহত আছে।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান প্রশ্ন তোলেন, কেন এখনও অনেক মেয়াদোত্তীর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে? বিতরণ ব্যর্থতার জন্য বিদ্যুতের কতটুকু অপচয় হয়, তা শনাক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে জীবাশ্ম-জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাসে মনোনিবেশ করা ভালো দিক।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সরকার কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে অবসরে যাচ্ছে।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস খুঁজতে কাজ করছে সরকার। ৯টি জায়গায় সোলার মেজারিং সেন্টার করা হয়েছে। বিজিএমইএ পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, দেশে বিদ্যুৎ আছে, কিন্তু গুণগত বিদ্যুৎ নেই। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ঝুঁকির শঙ্কায় থাকে। সরকারকে এ বিষয়টি দেখতে হবে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু বাজেটে অযৌক্তিকভাবে সোলার ও ইনভার্টারের ওপর ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসবে বলছে; কিন্তু তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের অতিরিক্ত ক্ষমতা কেবল কাগজে উপস্থিত। বাস্তবে তার সুফল মিলছে না। তিনি বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে খাতটি বিশ্নেষণের পরামর্শ দিয়েছেন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের সংগঠন বিপ্পার সভাপতি ইমরান করিম, বিজিএমইএর পরিচালক আসিফ আশরাফ, ইডকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ মালিক, সোলার মিনি-গ্রিড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডি এম মজিবর রহমান, বুয়েটের এনার্জি স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী প্রমুখ।

মন্তব্য করুন