- শেষের পাতা
- গৌরব ধরে রেখেছে আরমানিটোলা স্কুল
শেষের পাতা
সমকালের আয়নায় পুরান ঢাকা
গৌরব ধরে রেখেছে আরমানিটোলা স্কুল
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সাজিদা ইসলাম পারুল |
সাজিদা ইসলাম পারুল
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৭ । ০০:০০
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৭ । ০০:০০জানা যায়, ২০১৪ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ পাসসহ জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৩৬ জন। ২০১৫ সালে জিপিএ ৫ ৯০ জন এবং ২০১৬ সালে ১৩১ জন। ওই দুই বছরও পাসের হার ছিল শতভাগ। এছাড়া বৃত্তি পেয়েছে ২০১৪ সালে ১১ জন এবং ২০১৫ সালে ১৪ জন। স্কুলটি বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুরু। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ২০১৪ সালে শতভাগ পাসসহ জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫৮ জন। কিন্তু ২০১৫ সালে একজন শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণে পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় শতভাগ পাস সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ ২৪৭ পরীক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ২৪৭ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৬০। তবে ওই বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯৫ জন ছাত্র। ২০১৬ সালে শতভাগ পাসসহ জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৩০ শিক্ষার্থী।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার বলেন, শুধু সৌন্দর্য, বিশালত্ব এবং শিক্ষাদীক্ষায় নয়, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি অঙ্গনেও বিদ্যালয়টির যে ঐতিহ্য তা অনেকটা প্রবাদে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয় পর্যায়ে শ্র্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ২০০৯ সালে ঢাকা মহানগরীর যে দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শতভাগ পাসের সাফল্য অর্জনের কৃতিত্ব লাভ করে, এ বিদ্যালয়টি তার একটি।
বংশালের ১নং আবুল খয়রাত রোডে দুই দশমিক ৫ একর জমির ওপরে এখনও মাথা উঁচু করে সমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে আরমেনিয়ানদের স্মৃতিবিজড়িত আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। মুসলিম স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তারা মসজিদের পাশেই গড়ে তোলা হয়। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের একমাত্র শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের (বিএড কলেজ) এক্সপেরিমেন্টাল স্কুল হিসেবে ১৯০৪ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, চলতি বছর শীতকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হকিতে চ্যাম্পিয়ন ও টেবিল টেনিসে রানার্স আপ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ক্রীড়া শিক্ষক সারোয়ার হোসেন বলেন, সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককের ঐকান্তিক চেষ্টায় এবারও হকি ও টেনিস খেলায় ছেলেরা জয়ের শিরোপা এনেছে। পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন দলের সঙ্গে ধাপে ধাপে খেলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। তিনি বলেন, জাতীয় দলে এ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ থেকে ছয়জন প্রাক্তন ছাত্র রয়েছে। আর যুব দলে রয়েছে অর্ধেকেরও বেশি প্রাক্তন ছাত্র।
এদিকে, ফলাফল ও খেলাধুলায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সফলতার পথে হাঁটলেও শিক্ষক সংকটে ভুগছে প্রতিষ্ঠানটি। ৫২ জন শিক্ষক দিয়ে পড়ানো হচ্ছে প্রভাতি ও দিবা শাখার এক হাজার ৯৯২ শিক্ষার্থীকে। ফলে একজন শিক্ষক দিনে ছয় থেকে সাতটি শ্রেণিতে পাঠদান করছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার বলেন, 'একজন শিক্ষক দিনে ছয়-সাতটি ক্লাস করালে লেখাপড়ার মান ভালো থাকে না। তাই শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু শিক্ষা দানে আরও আটজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া জরুরি।'
সংস্কৃতি অঙ্গনে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় এই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন ক্রীড়াঙ্গনে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব প্রতাপ কুমার হাজরা। এছাড়া সিয়ার্স টাওয়ারের স্থপতি এফ. আর. খান, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ (অব.), জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, কবি আসাদ চৌধুরী, বর্তমান সরকারের সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, আইন প্রতিমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ অসংখ্য কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব এই বিদ্যালয় থেকে জীবনের আলোকিত পথ বেছে নিয়েছিলেন। ফলে আজ তারা যে যার অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানটির ১৯৯৭ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারুক আহমেদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সব সময় শিক্ষার্থীদের পরিচর্যার মধ্যে রাখে। তৎকালীন সময়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন স্যার যে ধারা শুরু করেছিলেন, অর্থাৎ শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে পাঠদান। তা আজও বজায় রেখেছে বলেই এখনও ফল ভালো হচ্ছে।
মন্তব্য করুন