- শেষের পাতা
- আখাউড়া-সিলেট রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তর হচ্ছে
শেষের পাতা
আখাউড়া-সিলেট রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তর হচ্ছে
কাল একনেকে উঠছে প্রকল্প
জানা গেছে, ২৩৯ কিলোমিটারের এ রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। চীন সরকার এ প্রকল্পে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে। সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে পাঁচ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত রেললাইন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রুত ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা না হলে ঢাকা থেকে সিলেট এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের মধ্যে রেল যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হবে। ট্র্যাক কাঠামো, পাহাড়ি এলাকার আঁকাবাঁকা রেলপথ এবং পরিচালনা জটিলতার কারণে এ পথে বর্তমানে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে রেল চলাচল করে। ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা গেলে ব্রডগেজে ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটারগেজে গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। এতে ঢাকা থেকে সিলেট এবং চট্টগ্রাম থেকে সিলেট পৌঁছানোর সময় আড়াই ঘণ্টা কমে যাবে।
এ ছাড়া এর মাধ্যমে আসামের সঙ্গে রেল যোগাযোগের সুযোগও তৈরি হবে। এখন এ রুটে চলছে ১৩ জোড়া ট্রেন। প্রকল্প শেষ হলে ট্রেন চলবে ২৬ জোড়া, যা আগামী ২০৩৫ সাল পর্যন্ত চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের সব মিটারগেজ রেললাইনকে ব্রডগেজ বা ডুয়েলগেজে রূপান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর প্রকল্পের প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) তৈরি করা হয়, যা ২০১৬ সালের ২১ মার্চ অনুমোদিত হয়। পরে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প বিবেচনা করে এটি সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়। জিটুজি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয় ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ও চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন। ঢাকায় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্রিটিশ আমলে আসাম ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে ১৮৯৮ সালে প্রথম করিমগঞ্জ থেকে শাহবাজপুর ও কুলাউড়া এবং আখাউড়া হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। শাহবাজপুর থেকে কুলাউড়া হয়ে আখাউড়া পর্যন্ত রেলপথ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের একটি সাব-রুট। ভারতের করিমগঞ্জ জেলার মহীশ্মশান ও বাংলাদেশের শাহবাজপুরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের (এলওসি) আওতায় এ রেলপথ পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
অন্যদিকে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অংশের ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ চলমান রয়েছে। আখাউড়া থেকে লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রামে রেললাইনের বাকি অংশ ডুয়েলগেজে রূপান্তরের জন্য একটি সমীক্ষা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় অনুদানে আগরতলা ও আখাউড়ার মধ্যে ১০ কিলোমিটার রুটে আরেকটি ডুয়েলগেজ লিংক স্থাপনের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে একই গেজের রূপান্তরের অংশ হিসেবে আখাউড়া থেকে সিলেট রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়।
মন্তব্য করুন