- শেষের পাতা
- শিক্ষামন্ত্রীর কাছে নানা সমস্যা তুলে ধরলেন ছাত্রলীগ নেতারা
শেষের পাতা
শিক্ষামন্ত্রীর কাছে নানা সমস্যা তুলে ধরলেন ছাত্রলীগ নেতারা
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০১৯
সমকাল প্রতিবেদক
এসবের জবাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, 'কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। সেখানে সমাধান না মিললে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে জানাতে হবে। তারা আমাকে বা শিক্ষা উপমন্ত্রীকে জানাবে। আমরা সমাধানের উদ্যোগ নেব। তবু কোনো কারণেই, কোনোভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না।' তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের দলাদলিতে ছাত্রলীগের কেউ কোনোভাবেই জড়িত হবে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় দীপু মনি এসব কথা বলেন। গতকাল সকাল ১১টায় শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে তাদের সঙ্গে এ মতবিনিময়।
দেশে ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এতে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে উপস্থিত হলেও শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের হলরুমের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ছিলেন বাকিরা।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময়ের শুরুতেই শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের ছবি তোলার পর বাইরে অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন। এরপর শুরু হয় রুদ্ধদ্বার মতবিনিময়।
মতবিনিময়ে অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের নেতারা জানান, রুদ্ধদ্বার সভার শুরুতেই দুই মন্ত্রী তাদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক বা দলীয় অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা নিয়ে এ মতবিনিময়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। কেবল শিক্ষাসংশ্নিষ্ট সমস্যা ও সংকটের কথা শোনা হবে। সভায় এরপর একে একে বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় ২০-২২ নেতা বক্তৃতা করেন। জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় পদে আসীন শিক্ষকরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নেতিবাচক চোখে দেখেন। একাধিক বিভাগের শিক্ষকরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফেল করিয়ে দেন অথবা নম্বর কমিয়ে দেন। এ প্রবণতা রুখতে হবে। আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট তীব্র। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে বসবাস করেন। রুমে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোও দুস্কর।
একাধিক ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্যে ঘুরেফিরে আসে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট, পরিবহন সমস্যা, লাইব্রেরিতে বইয়ের সংকট ও ভৌত অবকাঠামোর অপ্রতুলতার কথা। কোথাও আবার ভৌত অবকাঠামোর নির্মাণে প্রকল্প পাস হলেও কাজে ধীরগতি। দীর্ঘ সময় নিয়ে চলা ও মতবিনিময়ে আরও অনেক নেতা বক্তৃতা করার সুযোগ চেয়েও পাননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, 'যারা আজ বলতে পারেনি আর যারা বলতে পেরেছে, সবাইকে অনুরোধ করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যার কথা লিখিতভাবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানাতে। তারা সেগুলো কম্পাইল করে শিক্ষামন্ত্রীকে দেবেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এসব সমস্যা নিয়ে সংশ্নিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও সংশ্নিষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে সভা করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও ইভটিজিং থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দূরে থাকতে হবে। এসব প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে তাদের। তিনি বলেন, আমি এটা আশা করি না যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই যুগে ছাত্রলীগের কেউ কোনো নারীকে যৌন হয়রানি বা অসম্মান করবে। অথবা যৌন হয়রানিকারীকে প্রশ্রয় দেবে। বাংলাদেশ শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। এখন শিক্ষার মান অর্জন জরুরি। মান অর্জন করতে গেলে ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করা তথা শৃঙ্খলা জরুরি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ছাত্র হিসেবে ছাত্রলীগের প্রধান কাজ শিক্ষা গ্রহণ। পরে সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন করা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আইন অনুযায়ী চলে। আইনের মধ্যে থেকেই ছাত্রছাত্রীদের দাবি পূরণের জন্য সরকার চেষ্টা করে যাবে।
মতবিনিময়ে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে হবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। নিয়মিত ক্লাস করতে হবে। এতেও শিক্ষকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে।
সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, স্পষ্টভাবে বলতে পারি, কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক, ডিন, চেয়ারম্যানরা অন্য পন্থি, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। ছাত্রলীগের নাম শুনলে তাদের গায়ে জ্বালা করে। পরীক্ষায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তারা নম্বর কমিয়ে দেয়। এটা থেকে বের হতে পরীক্ষায় খাতায় কোডিং সিস্টেম চালু করতে হবে।'