মিয়ানমারে রাখাইন অঞ্চলে জাতিগত রাখাইনদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ চালাচ্ছে বলে ঢাকায় এক মানববন্ধনে অভিযোগ করেছেন বক্তারা। তারা বলেছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী আবারও পরিকল্পিতভাবে রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে নির্যাতন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন গুলিবর্ষণ, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের তা সাম্প্রতিক সময়ে তিন শতাধিক বেসামরিক রাখাইন নাগরিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ছয় শতাধিক মানুষ। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় আড়াই লাখ মানুষ উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রাখাইন প্রদেশের জনগণ অচিরেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হবে। এই গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

গতকাল রোববার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে রাখাইন কমিউনিটি অব বাংলাদেশ। মানববন্ধনে কক্সবাজার, টেকনাফ, বান্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাখাইন সম্প্র্রদায়ের নাগরিকরা অংশ নেন। এ সময় তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার। টি-শার্টে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও সেনাপ্রধান মিন অংয়ের ছবি প্রিন্ট করে সেখানে প্রতিবাদকারীরা লিখেছেন, 'দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস ভাইরাস' (সবচেয়ে বিপজ্জনক ভাইরাস)। প্রতিবাদকারীরা পোস্টারে রাখাইন ও ইংরেজি ভাষায় গণহত্যা বন্ধের দাবি তুলে ধরেন।

মানববন্ধন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ক্যাংঞ্চিংয়ের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হকসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে ক্যাংঞ্চিং বলেন, মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে রাখাইনে ঢুকতে না দেওয়ায় সেখানে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। রাখাইনের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, রাখাইন প্রদেশে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ। সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিচ্ছিন্ন করে তারা গণহত্যার বিষয়টি গোপন করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে ইন্টারনেট সেবা চালু রাখার আহ্বান জানালেও সেটি উপেক্ষা করে চলেছে মিয়ানমার।

মফিদুল হক বলেন, মিয়ানমারের নৃশংসতা বিরুদ্ধে মানবতার জাগরণ প্রয়োজন। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পৃথিবীর বৃহৎ রাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তি বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ দেশের মানুষ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি সহমর্মিতার কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমীকরণ বদলে যায়। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এখনও এটি সম্ভব। এ সময় তিনি রাখাইনদের ওপর গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মানববন্ধনে অন্য বক্তারা বলেন, রাখাইন স্টেট থেকে সব ধর্মের ও বর্ণের মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে দীর্ঘদিন ধরে সে দেশের সেনাবাহিনী ও সরকার নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা ও রাখাইন সম্প্রদায়কে নির্যাতন করে গৃহহীন ও বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। অবিলম্বে এসব রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব দিয়ে রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে হবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করাসহ দ্রুতই রাখাইনের পরিবেশের উন্নতি না হলে ঢাকার মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি পালন করা হবে বলে মানববন্ধনে ঘোষণা দেওয়া হয়। অন্যদের মধ্যে রাখাইন কমিউনিটি অব বাংলাদেশের সভাপতি মাং শাইরি, মুখপাত্র থং ইউ, রাখাইন স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু সমাবেশে বক্তব্য দেন।

সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্স অ্যাসোসিয়েশন, রাখাইন কালচারাল গ্রুপ (কক্সবাজার, বাংলাদেশ), জাতীয় পরিবেশ ও মানবাধিকার সোসাইটি, রাখাইন ইয়ুথ ইউনাইটেড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, রাখাইন ওমেন অর্গানাইজেশন, রাখাইন কমিউনিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্টুডেন্স কাউন্সিল, কক্সবাজার আর্ট ক্লাব, বাংলাদেশ রাখাইন ভিক্ষুক সংঘ, বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (ঢাকা) শাখার নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।

মন্তব্য করুন